গরমে অনেকেই ত্বকের যত্নে নানা কিছু করে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম মানুষ চোখের যত্ন নিয়ে থাকেন। চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গ।

এ জন্য গ্রীষ্মে বিশেষভাবে চোখের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

সানগ্লাস ব্যবহার করুন: অতিরিক্ত তাপ ও রোদ চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই বাড়ির বাইরে বের হলেই সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এটি রোদ এবং অতিরিক্ত তাপ থেকে চোখ রক্ষা করবে।

টুপি ব্যবহার করুন: রোদে বেরোনোর সময় শুধু সানগ্লাস নয়, টুপিও ব্যবহার করুন। এতে রোদ থেকে আপনার মাথা ও চোখ দুটিই রক্ষা পাবে।

চোখ পরিষ্কার রাখুন: দিনের মধ্যে কয়েকবার পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে চোখ-মুখ ধুয়ে নিন অথবা চোখে পানির ঝাপটা দিন। এতে সূর্যের প্রখর তাপ থেকে আরাম পাওয়ার পাশাপাশি বাইরের ধুলা-ময়লা জমে চোখে বিভিন্ন ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা একদম কমে যায়।

সরাসরি এসির বাতাস এড়িয়ে চলুন: এসির বাতাসে চোখ অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এসির বাতাস সরাসরি যেন চোখে না লাগে।

প্রচুর পানি পান করুন: গরমে ঘাম হয়ে শরীর শুকিয়ে যায়। এর প্রভাব সবচেয়ে আগে পড়ে চোখে। তাই এই সময়ে প্রচুর পানি পান করুন। তাতে চোখ ভেজা থাকবে। চোখের ক্ষতি কম হবে।

দুপুরে বাইরে বের না হওয়া: একান্ত প্রয়োজন না হলে দুপুরে বাইরে বের হওয়া ঠিক নয়। মনে রাখবেন, দুপুরের রোদ আর তাপ চোখের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

সাবধানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: গরমে ত্বকের যত্নে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। অসাবধানতাবশত এই ক্রিম চোখে লাগলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই ক্রিম ব্যবহারে সাবধান থাকুন।

সুইমিংয়ে গগলস ব্যবহার করা: গ্রীষ্মের গরমে আরাম পেতে সুইমিংপুলে বা যেকোনো জলাধারে সাঁতার কাটার সময় সুইমিং গগলস পরা উচিত।

চোখকে বিশ্রাম দিন: সুস্থ থাকার জন্য চোখকে বিশ্রাম দিতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন: চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছু কিছু আই ড্রপ ব্যবহার করেন, এটি মোটেও উচিত নয়।

অধ্যাপক ডা.

সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন র যত ন

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ