‘জনগণের ভোটের অধিকার না দিলে রাজপথে নামব’
Published: 5th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা যেনতেন নির্বাচন চাই না। নির্বাচনের নামে প্রহসন হলে তা প্রতিহত করা হবে।”
আজ শনিবার (৫ জুলাই) সকাল সোয়া ৭টার দিকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজারে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “নেতাকর্মীদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে। সময় আসছে, নতুন কিংবা পুরাতন ফ্যাসিবাদ—কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের ভোট ও ভোটাধিকার নিশ্চিত থাকবে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ কারো লুটপাটের জায়গা নয়। যারা সেই রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করছে, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।”
পথসভায় আমীরে জামায়াত আরও বলেন, “আমরা দেখছি দেশে কিছু রাজনৈতিক দলের দখলদারিত্ব ও লুটপাট প্রবণতা। ক্ষমতার মোহে তারা জনস্বার্থ ভুলে গেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে সতর্ক করে দিতে চাই—নিজেদেরকে ঠিক করুন, না হলে জনগণই আপনাদের ঠিক করে দেবে।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। সভা পরিচালনা করেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবর রহমান।
এসময় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মোহাম্মদ মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের আমীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাজাহান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, অধ্যাপক একেএম এমদাদুল হক মামুন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, বরুড়া আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সোহেল এবং কাউন্সিলর মোশাররফ হোসাইন ও নাছির আহম্মেদ মোল্লা।
সভায় নেতারা সকল ধরনের ফ্যাসিবাদী ও দখলদার রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন।
ঢাকা/রুবেল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজ মাফিয়াতন্ত্রের সরকার গড়তে দেওয়া যাবে না
জুলাই পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে বুধবার ব্যাপক সাড়ার মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এদিনও পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেন তারা। সভায় দলটির নেতারা বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, মাফিয়াতন্ত্র, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এনসিপি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন করে চাঁদাবাজ কিংবা মাফিয়াতন্ত্রের ফ্যাসিবাদী সরকার গড়তে দেওয়া যাবে না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। আমরা আপনাদের সমর্থন চাই।
দুপুরে কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়ায় এক পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো টালবাহানা এনসিপি মেনে নেবে না। বাস্তবসম্মত উপায়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় কুড়িগ্রাম তথা রংপুর অঞ্চলকে যাতে পিছিয়ে দেওয়া না হয়, সেভাবেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। ভারতের দালালির দিন শেষ। আমরা স্বাধীন দেশ, মাথা উঁচু করে বাঁচব।’
এর আগে রাজারহাট উপজেলায় আরেক পথসভায় নাহিদ বলেন, ‘আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য আমরা ইশতেহার ঘোষণা করব। গণঅভ্যুত্থানকে যারা ব্যর্থ করতে চাচ্ছে, ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে– তাদের বিরুদ্ধে ওইদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলব শহীদ মিনারে।’
একই সভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ফেরাউনের মতো অত্যাচারী ছিলেন। আমরা তাঁর পতন ঘটিয়েছি। আগামীতে এই ফেরাউনের মতো কোনো অত্যাচারী শাসক যেন বাংলার মাটিতে না আসে। নতুন বাংলাদেশে যেন নতুন স্বৈরাচারের জন্ম আর না হয়।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অতীতের স্বৈরাচার আমাদের পথ রুদ্ধ করেছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধদের রাস্তার মধ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। আলেমদের দাড়ি-টুপি নিয়ে অপমানসহ মসজিদের ভেতর থেকে নামিয়েছে। আমাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। নতুন বাংলাদেশে আর নতুন করে চাঁদাবাজি হতে দেওয়া যাবে না। খুনি-দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’
পথসভা শেষে কুড়িগ্রাম-২ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে ড. আতিক মুজাহিদের নাম ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, কৈলাশ রবিদাসসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা।
বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা লালমনিরহাট শহরের এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট মাঠে এসে পৌঁছায়। পদযাত্রা প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের মিশন মোড় চত্বর এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় ট্রাকে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, এত বড় গণঅভ্যুত্থান, এত মানুষের রক্ত, এত আত্মত্যাগ; আমরা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন মেনে নেব না। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, মানুষের জীবনের পরিবর্তন করতে হবে। তিনি জানান, নদী ও সীমান্ত সুরক্ষা আন্দোলন শুরু করবে এনসিপি। দেশকে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সংস্কার না হলে একতরফা নির্বাচনে এনসিপি অংশগ্রহণ করবে না।
পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বক্তব্য দেন।
এদিন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট উভয় জেলাতেই এনসিপি নেতারা এসে পৌঁছলে তাদের একনজর দেখতে রাস্তার পাশে শত শত মানুষ ভিড় করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুল নিয়ে অভিবাদন জানায় নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, তাজনুভা জাবীন ও সামান্তা শারমিনদের। দুপুরে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় এনসিপির পদযাত্রায় স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায়।
সকালে রংপুর থেকে কুড়িগ্রাম আসার পথেও বিপুল সংখ্যক মানুষ এনসিপি নেতাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। রংপুর সাতমাথার বালাটাড়ি এলাকায় এক কৃষক নিজের গাছের পাকা কাঁঠাল পেড়ে আপ্যায়ন করেন এনসিপি নেতাদের। এই আন্তরিকতায় অভিভূত হয়ে দলটির নেতাকর্মীরা বলেন, মানুষের এমন ভালোবাসাই তাদের পথচলার প্রেরণা।
এর আগে মঙ্গলবার রংপুর থেকে এনসিপি তাদের জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।