হবিগঞ্জে লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এগুলোর চারপাশে সবুজে ঘেরা ফসলি জমি, নদীর পার ও স্কুল-কলেজ। ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল, ফলের বাগান, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই এসব ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। যেগুলোর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলোও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। যে যার মতো ভাটা পরিচালনা করছে। ফসলি জমি, নদীর পার ও স্কুল-কলেজঘেঁষে এসব ভাটা গড়ে ওঠায় হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ রোগবালাই। ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। ভাটার বিষাক্ত বর্জে ব্যাঘাত ঘটছে কৃষিকাজে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসন নির্বিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলাজুড়ে ইটভাটা রয়েছে ১১৯টি। এর মধ্যে ২৪টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অন্যান্য কাগজপত্রেও রয়েছে ত্রুটি। কোনো কোনো ভাটার বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন হয় না। জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায়ই শুধু রয়েছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ভাটার ধোঁয়ায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।
হবিগঞ্জ মিরপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই অন্তত ২০টি ইটভাটা। দূর থেকে তাকালেই দেখা যায় কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়া। গাছের সবুজ পাতা বিবর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে আশপাশের এলাকায় গাছে কমেছে ফলের পরিমাণ, প্রভাব পড়েছে কৃষিজমিতেও। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সব ইটভাটায় পরিবেশসম্মত জিগজাগ চুল্লি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও ভাটা মালিকরা মানছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজল মিয়া বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া কৃষিজমি ও ফসলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ভাটার পার্শ্ববর্তী জমিতে টমেটো ও ফুলকপির ফুল এলেও সেগুলো মরে যায়। তিনি বলেন, ভাটায় শুধু ইট পুড়ছে না, আমাদের কপালও পুড়ে যাচ্ছে।
ফরিদ মিয়া বলেন, ইটভাটার মাটি আনা-নেওয়ায় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টির দিন এলে সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
কলেজছাত্র আজিজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভাটা আমাদের পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। হুমকিতে পড়েছে ফসলসহ মানুষের জনজীবন। এসব ভাটার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ইটভাটাগুলো পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষিজমি থেকে যে পরিমাণ টপ সয়েল নেওয়া হচ্ছে ইটভাটার জন্য, এতে কৃষি ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ আইনের শতভাগ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইটভ ট ইটভ ট র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ
সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের অপ্রশস্ত সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজে বাধা দেন। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদাপানিতে সয়লাব। পাটগাড়ি এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী ৫০ হাজার মানুষ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে।
গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কাজ শুরু করায় তারা বাধা দেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত অংশ অধিগ্রহণের জন্য টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমিমালিকরা টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নামমাত্র কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাগজপত্র সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘আমার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার মতো গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জনের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’
তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলা, গোলাম রসুল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল ওহাব, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল বারি, আলমগীর হোসেন, রিজিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জমির মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।’
মামলার বাদী ফেচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন, সুজন হোসেন ও আজিজ খাঁ জানান, সড়ক হলে সবারই সুবিধা হয়। জমির মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কথা হলে সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সময় পেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
সরেজমিন পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে রাখায় কাদামাটিতে একাকার। এ পথ দিয়ে চলাচল এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তেঘড়ি গ্রামের গোলাম কিবরিয়া, পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান, স্কুলশিক্ষার্থী সিমি খাতুনসহ অনেকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং মামলার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরই মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে।’
পাবনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যাদের জমির কাগজপত্র সঠিক ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। যাদের কাগজ সঠিক নেই, তারা পাননি। জটিলতা এখনও কাটেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প এলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।’