যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সেই সঙ্গে উড়োজাহাজ এবং সামরিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন করে একটি চিঠি দিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সেটির কার্যকারিতা দেওয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে। এর সাথে তারা আগের যে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্টের যে খসড়া পাঠিয়েছিল তার ওপর আমাদের রেসপন্স আমরা পাঠিয়েছি। সেটার ওপর আমাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে।

তিনি বলেন, ভার্চুয়ালি আমি যুক্ত ছিলাম সবগুলো মিটিংয়ে। আমাদের উপদেষ্টা ওখানে আছেন। আমাদের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ছিলেন মিটিংগুলোতে। এরপর আজকে আমরা যে ডকুমেন্ট পেলাম, এটার ওপর মূলত আলোচনা হবে আগামী ১০ এবং ১১ জুলাই। সেই সভায় যোগদান করতেই মূলত আমি আজকে যাচ্ছি।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, তারা তো একটি চিঠি দিয়ে আরোপ করল। আরোপ করার পরেই তারা তাদের প্রস্তাব পাঠাল। সেটার ওপর যেহেতু আলোচনা হবে। আলোচনার দরজা যেহেতু খোলা আছে, কাজেই কিছু একটা আউটকাম তো আমরা আশা করি সব সময়ের জন্যই।

আলোচনায় সরকারের যুক্তিগুলো কী কী থাকবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোটাদাগে আমাদের যুক্তিগুলো থাকবে প্রথমত শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত আমাদের ট্রেড রিলেটেড যে ইস্যুগুলো আছে সেগুলোতে আমরা যেন অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে না পড়ি। বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের এক্সিস্টিং বাণিজ্য রক্ষা করা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে তারা কিছু জিনিস চেয়েছে, সেটা হল শুল্ক কমানো। পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি এগুলো যেন আমরা কমাই। সে ধরনের প্রস্তাব তারা করেছে। আমরা সেটা এনবিআরের সাথে আলোচনা করার পরে, সরকারের অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, এই চিঠিতে যা যা উল্লেখ করেছে তারা, তাতে যা ছাড় চেয়েছে, সেগুলো আমরা অবশ্য আগেই প্রমিস করেছি এবং সেগুলোর ওপর এমনিতেও ডিউটি খুব কম। যেমন গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট, অন্যান্য মেশিনারি এগুলোর ওপর এমনিতেই ডিউটি রেট খুব কম। আলাপ-আলোচনা করে কিছু ছাড় তো দিতে সম্মত হতেই হবে।

কীভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়াবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়ানোর জন্যে  তারা যদি কিছু শুল্ক ছাড় দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে বাণিজ্যিক ট্রেডের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সরকারি ট্রেড বাড়ানোর জন্য আমরা ফ্যাসিলিটি দেবো। আপনারা জানেন, আমাদের বিমান বহরের প্রায় সব এয়ারক্রাফট বোয়িং। আমাদের বিমানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা আছে সেটাও বোয়িং। কাজেই বোয়িং ফ্লাইট কেনার জন্য আমাদের কিছু আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে শিগগিরই। আমরা সেভাবে নেগোসিয়েশন করেছি বোয়িংয়ের সাথে। এছাড়া তুলা আমদানিকে আমরা প্রমোট করব। আপনারা জানেন যে তুলার ওপর এমনিতেই শূন্য শুল্ক। কিন্তু সেখানে আমেরিকান তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সেজন্য আমরা কিছু ফ্যাসিলিটি এখানে তৈরি করে দেব। 

সচিব বলেন, সরকারি খাতে যে সমস্ত ফুড ড্রিংক কেনা হয় সেক্ষেত্রে আমরা আমেরিকাকে একটু প্রাধান্য দেব। এভাবে আমরা আসলে আমেরিকান ট্রেডটা বাড়াবো। আর আপনারা জানেন যে, আমাদের মিলেটারি ইকুইপমেন্টের একটা বড় অংশ আসে আমেরিকা থেকে। সে সমস্ত ক্ষেত্রও আমাদের বিবেচনায় আছে।

মিলেটারি ইকুইপমেন্ট বলতে কি অস্ত্র বোঝাচ্ছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না। আমরা আমাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে যেটা বুঝায়, সেটা হলো আমাদের ভিকেলগুলো, আর্মভিকেল, আদার্স‌…। আমাদের যা যা সংগ্রহ করা হয়, এর বেশিরভাগ আমেরিকা থেকে করা হয়। ওখানে তাদের দিক থেকে কোনো চাপ নেই। তারা বলেছে, যখন কেনা হবে, আমরা যেন তাদের গুরুত্ব দেই। এ ব্যাপারে তাদের কোনও বিশেষ চাহিদা নেই। আমরা যেন তাদের প্রাধান্য দেই। অন্যান্য মেশিনারিজের ক্ষেত্রেও সে কথা তারা বলেছে। তাতে সম্মত হতে আমাদের অসুবিধা নেই।

তুলার ওপর এআইটি নিয়ে কারা এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, আমাদের তুলার ওপর ২ শতাংশ এআইটি ইম্পোজ করা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের তুলা খাতের, বিশেষ করে টেক্সটাইল খাতের যারা অংশীজন তারা সরকারের সাথে আলোচনা করছেন। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কিছু একটা আসবে। কিন্তু বাই রেটারাল ট্রেডের ক্ষেত্রে এটার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই।

ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে ২৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। সেখানে আলোচনায় বাংলাদেশের খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সাংবাদিকের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে তিনি বলেন, তৎপরতায় পার্থক্যটা আমরা মনে করি না। যেদিন থেকে পাল্টা শুল্ক এম্পো‌জ হয়েছে, তারপর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ আমি চিঠি দিয়েছি। আমরা প্রায় পাঁচ দফা মিটিং করেছি। এরপর তারা যে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট খসড়া পাঠিয়েছে সেগুলোর ওপর চার দফায় আমরা অ্যামেন্ডমেন্ট পাঠিয়েছি, সেগুলোর ওপর নেগোসিয়েশন করেছি। এছাড়া ইমেইল যোগাযোগ বা টেলিফোন যোগাযোগে এগুলো চলছে। কাজেই আমরা একদম ফুলটাইম এনগেজড ছিলাম গত ২ এপ্রিল থেকে। আমরা এনগেজড না বা তৎপর।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গতকাল যে ৩৫ শতাংশের চিঠিটা এসেছে এটা আমরা আশা করিনি। কারণ আমাদের এই সপ্তাহে মিটিংগুলো নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যেই এই চিঠিটা সম্পর্কে আমরা জানতাম না।

নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে দেশের আমদানি-রপ্তা‌নির ওপর চাপ আসবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, প্রেশার হবে, সেটা তো সবাই বোঝে। সেটা যাতে না হয় সেজন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি কিছু ভালো কিছুই পাব।

এই চিঠি আসা কি নেগোসিয়েশনে কোনও চাপ তৈরি করবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শেষ পর্যায়ে তো তারা বলেনি কখনও। এখানে বলতে পারেন মাঠ পর্যায়ে। কারণ হলো, তারা আগস্ট পর্যন্ত এই চিঠির কার্যকারিতা দিয়েছে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এক মাস সময় দিলো এবং খসড়া এখন পাঠাল। এর অর্থ, নেগোসিয়েশন করে কিছু একটা করা যাবে। আমরা সেটার জন্য চেষ্টা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, এক মাস হাতে রেখে আজ ডকুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। নেগোসিয়েশনের ডেট দেওয়া হয়েছে। যেটা তাদের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে। তার মানে নেগোসিয়েশনের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা নেগোসিয়েশনে এনগেজ হচ্ছি। আমরা কথা বলছি। আমাদের উপদেষ্টা সেখানে আছেন। আমি আজকে যাচ্ছি সন্ধ্যায়। আমরা কিছু একটা ফলাফল পাবো না এরকম আশা করে তো আর সেখানে যাচ্ছি না। আশা করি কিছু একটা ফলাফল আমরা পাব আলোচনা করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প য ক তর ষ ট র গ ল র ওপর শ ল ক কম উপদ ষ ট আম র ক র জন য আম দ র ন য আম এই চ ঠ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চবি উপাচার্যকে ছাত্রের ধমক ও সরকারের অবস্থান

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। অকুস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ‍্যালয়ের উপাচার্যের অফিস। সেখানে হট্টগোল হচ্ছিল বিশ্ববিদ‍্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের একজন শিক্ষককে নিয়ে, যাঁর সেই কক্ষে সেই সময়ে পদোন্নতির ভাইভা হওয়ার কথা। ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র সেই শিক্ষকের সঙ্গে তর্ক করছে এবং তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না বলে চিৎকার করছে। এক পর্যায়ে একজন ছাত্র উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলে, ‘আপনি নিজ যোগ‍্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ‍্য।’ 

অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ‍্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিত। এ কারণে বিশ্ববিদ‍্যালয়ের মতো জায়গায় উপাচার্যরা সরকারের এক প্রকার গোলাম হয়ে থাকতেন। কোনো বিষয়েই সরকারের বাইরে গিয়ে তাদের কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে দেখা যেত না। প্রায় সর্বক্ষেত্রে সরকার-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাত। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। দুঃখজনক যে, তা দেখা যাচ্ছে না। অন্তত আলোচ্য ভিডিওটি সেটাই প্রমাণ করে। স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিও সামাজিক মাধ‍্যমে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
গত ২২ জুন রাজধানীর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ‍্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষার দায়িত্বে থাকাকালে তিনি উপাচার্যের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছিলেন– ‘আওয়ামী লীগ তো হওয়া যাবে না। কাজেই মৃদু বিএনপি হওয়া যাবে অথবা নিষ্ক্রিয় বিএনপি হওয়া যাবে।’ বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, বর্তমানের প্রায় সব উপাচার্য বিএনপি কিংবা জামায়াত ঘরানার। তবে কি ছাত্ররা ঠিকই বলেছে? তারাই উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে? লক্ষণীয়, ওই উপাচার্য কিন্তু ছাত্রদের এমন ঔদ্ধত্যের জবাবে তেমন কিছুই বলতে পারেননি। 

তবে কি গোড়াতেই গলদ ছিল? গত বছরের আগস্টে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ছাত্ররা তাদের (উপদেষ্টা পরিষদ) প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। তারা যখন বলবে, তখন তারা চলে যাবেন।’ এ কারণেই কি তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মব সৃষ্টির মাধ্যমে বহু শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেননি? 
ছাত্ররা নিশ্চিতভাবেই তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে; গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করবে। বাংলাদেশের ইতিহাস তো একভাবে ছাত্র আন্দোলনেরই ইতিহাস। পৃথিবীতে বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। তবে কোনো আন্দোলনের পর ছাত্রদের এ ধরনের মব সহিংসতা আগে খুব একটা দেখা যায়নি। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত সময়ে শিক্ষকদের ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছিল। কিন্তু তা কোনোভাবেই শিক্ষাঙ্গনে মবতন্ত্রের অনুমোদন দেয় না। ছাত্রদের এজেন্সি থাকাটা জরুরি। তার মানে এই নয়– এখন ছাত্র পরিচয়টি ভয়ের হতে হবে। শিক্ষকদের এখন ছাত্রদের ভয় পেতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পুরোপুরি একাডেমিক পরিবেশ ফিরে এসেছে; বলা যায় না। শিক্ষক বয়কট, এমনকি মব সৃষ্টি করে শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে হাজির হওয়া– সবই এখানে ঘটেছে। অনেক শিক্ষকই ছেড়েছেন ক‍্যাম্পাসের বাসা। এখনও পাঠদানসহ একাডেমিক অন‍্যান‍্য কাজে ফিরতে পারেননি অনেক শিক্ষক। সব ছাত্রই এ ধরনের মব করছে, তা নয়। কিন্তু এই ছাত্র সবারই কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। আগে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা যা করেছে, এখন এরাও সেই মনস্তত্ত্বেই আছে; হয়তো পদ্ধতি ভিন্ন। 

তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখন অনেকটাই ভয়ের সম্পর্ক। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে অনেক ছাত্রই যা করছে, তা বাস্তবে খবরদারি। সব তাদের দখল ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে– এমন একটা ভাবসাব। দুর্ভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত কেউই বিশেষ করে সরকারের ওপর মহল ছাত্রদের লেখাপড়ায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়নি। কেন যেন সবাই চায়, ছাত্ররা রাস্তায় থাকুক। সরকারের পক্ষে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হয়ে কাজ করুক। তা না হলে কেন শিক্ষা উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এক দল ছাত্রের ধমকানো নিয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান গ্রহণ করেননি? যদি ছাত্ররাই উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাহলে উপদেষ্টারা কী করছেন? 

স্পষ্ট জানান দিতে চাই– এভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো যায় না; যাবে না। এসব ছাত্রনামীয় পদমালিককে রোখা দরকার ছিল আগেই। কিন্তু তা করা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীদার এ দেশের সব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু ক্ষমতা চর্চার মালিকানা কেন ছাত্র পরিচয়ধারী কয়েকজন মব সংগঠকের কাছে? তাদের এই কর্তৃত্ব করার অধিকার দিল কে? নিশ্চিতভাবেই এ দেশের জনগণ দেয়নি। কারণ কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধেই তো জুলাই অভ্যুত্থান।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে আছে, তা কোনোভাবেই শিক্ষার প্রত্যাশিত পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস‍্যপূর্ণ নয়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যাদের দ্বিধাহীন ও ব্যাপক অংশগ্রহণ গণঅভ্যুত্থানকে সম্ভব করে তুলেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পথ এভাবেই রচিত হয়। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাই এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে– ভয়ের সংস্কৃতির জন‍্য যে কৌশলই ব‍্যবহৃত হোক না কেন, তা আদৌ ভালো ফল বয়ে আনে না। বেশি দূর যেতে হবে না; বিগত সরকারের পতনই তার প্রমাণ। তবে দুঃখজনক হলো, প্রতিকারের পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনা ঘটার পর সরকার এখনও বিবৃতিদানেই আটকে আছে– সেটি বুঝতে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। 

জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, 
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়
zobaidanasreen@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ