চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস থেকে এক ছাত্রকে বহিষ্কার
Published: 8th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাস থেকে এক ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর একাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগের দিন সোমবার রাতে ওই ছাত্রের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রাবাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের সমর্থকেরা তাঁর ওপর চড়াও হন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে চড়–থাপ্পড়ও মারা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াছিবাগান এলাকার প্রধান ছাত্রাবাসের ডাইনিং হলে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ছাত্র আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানা গেছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও সহপাঠীদের মারধরের ঘটনায় ৭৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়। সে সময় ১১ জন শিক্ষার্থী মুচলেকা দেওয়ার পর সাধারণ ক্ষমা পান। ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কৃত ছাত্র তাঁদের একজন। সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন—এমন অভিযোগে সোমবার রাতে অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন।
ঘটনার পর কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, অন্যান্য শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যরা ছাত্রাবাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রকে ছাত্রাবাস থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
কলেজ সূত্র জানায়, আজকের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তাঁকে ছাত্রাবাস থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রমে তাঁর অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক হাবিব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রকে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর একাডেমিক বিষয়ে তদন্ত করে সুপারিশ দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম ক ক র এক ড ম ক ওই ছ ত র ছ ত রক তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ড. হুদা কর্মগুণেই বেঁচে থাকবেন
গত ৫ জুলাই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ইন্তেকাল করেছেন। আমার সৌভাগ্য, আমি তাঁর স্নেহ লাভ করেছি। তাঁর সান্নিধ্যে কিছু অনুভূতি স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে।
২০০৭ সালে ড. শামসুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এই দায়িত্ব গ্রহণের শুভলগ্নে তাঁর কৃতিত্বের অনেক গল্প তাঁরই পরিচিত গুণীজনের মুখে শুনেছি। কিন্তু গুণেরও যে একটা ধরন আছে, তাঁর সান্নিধ্যে না থেকে আবিষ্কার করা অসম্ভব। মানুষ ক্ষমতায় আসে ক্ষমতা উপভোগ করার জন্য। ক্ষমতা যে দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন এবং দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োগ করতে হয়, তা তিনি নিজের জীবনে অনুসরণ করে দেখিয়ে গেছেন।
আধুনিক যুগে তথাকথিত বুদ্ধিমান লোকেরা কোনো কিছু নতুনভাবে গড়ার ঝুঁকি নিয়ে বোকা হতে চায় না। নতুন কিছু গড়তে হলে যে পরিমাণ সময় দিতে হয়, তাতে নিজের আরাম-আয়েশ করার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত হয়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাধারণত পুরোনো জিনিস ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে গড়ে তোলার সাহস করি না। ড. হুদা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। সময়ের প্রয়োজনে পুরোনো অবয়ব ভেঙে নতুন অবয়ব তৈরির পরিকল্পনা তাঁকে সব সময় তাড়া দিত। সৃষ্টির নেশা তাঁকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রাখত। এসব করতে গিয়ে বিশ্রামহীনতা ও কঠোর শ্রমকে তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছেন। বিশ্বমানের এনআইডি, বর্তমানে যা নাগরিক সত্তার অপরিহার্য নিয়ামক, তাঁরই অনবদ্য সৃষ্টি। উপজেলা কিংবা থানা পর্যায়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন ভবন স্থাপনে তাঁর ক্যারিশমা ছিল মেঘ না চাইতেই বারি বর্ষণের মতো। আমলাতন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর তিনি ভারী কুঠারের আঘাতে ছিন্ন করেছেন। নেতিবাচক মনোভাবকে নানা কৌশলে ইতিবাচক মনোভাবে রূপান্তর করে জনস্বার্থ রক্ষা করেছেন।
সংস্কারের কথা বলতে গেলে, নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট আইনের প্রায় সব শাখা-উপশাখায় তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছেন। নতুন আইন প্রণয়ন কিংবা আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে প্রচলিত ধারণায় সব সময় একটি দীর্ঘসূত্রতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কথিত এই দীর্ঘসূত্রতা এড়ানোর জন্য তিনি একের পর এক মিটিং করেছেন। প্রতিটি মিটিং যেন ছিল পরীক্ষার হল। সভাকক্ষে কী অলৌকিক শক্তি, ধৈর্য, মনোযোগ তাঁর ওপর ভর করত, তা বিধাতাই জানেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তারা মিটিং চলাকালে সময়ের ব্যাপ্তিতে হাঁপিয়ে উঠলেও সর্বশেষ এজেন্ডা পর্যন্ত তিনি থাকতেন দৃঢ় ও অবিচল। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর দূরদর্শিতা যেন অন্তরদৃষ্টিকে ছাপিয়ে যেত। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যে কৌশল তিনি অবলম্বন করতেন, তা ছিল প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আলাদা।
মানবসম্পদ উন্নয়নে ড. হুদার দর্শন ও পরিকল্পনা ছিল পক্ষপাতহীন। ব্যক্তির যোগ্যতা বাড়ানো, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে পদায়নে তিনি থাকতেন অনড়। তোষামোদকারীরা তোষামোদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্বের উচ্চতা ছিল হিমালয়সম। তোষামোদকারীর হাত সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারত না। তাঁর আমলে নথি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নোট প্রদানকারী যেভাবে স্বাধীনতা ভোগ করেছেন, আজকাল তা বিরল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ন্যায়ানুগ যুক্তি নিয়ে যে কেউ খুব সহজেই তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারতেন। আরও যা উল্লেখযোগ্য, তিনি সশরীরে কিংবা অনলাইনে তৃণমূলেও পৌঁছে যেতেন। তৃণমূলের নাড়ির স্পন্দন তাঁর ব্যক্তিত্বকে শতগুণে বিকশিত করেছে। শ্রদ্ধেয় এই গুণীজনের গুণের মূল্যায়ন লিখে বা বলে বর্ণনা করা অসম্ভব। আলাদা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞের মূল্যায়ন হতে পারে।
ড. এটিএম শামসুল হুদা এখন আমাদের মাঝে সশরীরে নেই, তবে তাঁর কাজ রয়ে গেছে। জনস্বার্থে গৃহীত তাঁর মহৎ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি এ জগতে বেঁচে থাকবেন। বিধাতা তাঁকে তাঁর কর্মের বিনিময়ে জান্নাত দান করুন। আমিন।
মো. ফখর উদ্দীন শিকদার:
সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা