এভারেস্ট নিয়ে কেন ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন
Published: 12th, July 2025 GMT
গোলাবারুদের যুদ্ধ যেভাবে মিডিয়া কাভারেজ পায়, ‘হেজিমনি’ প্রতিষ্ঠার অহিংস যুদ্ধ সচরাচর সেটা পায় না। হেজিমনি মানে আধিপত্য। দার্শনিক গ্রামসির সূত্রে যা বিশ্বজুড়ে বেশ চালু ধারণা।
হেজিমনি কেবল রাজনৈতিক আদর্শের প্রভাব তৈরি নয়, হতে পারে নানাবিধ সাংস্কৃতিক আধিপত্যের চেষ্টাও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি ও রাষ্ট্রের নানা ধরনের হেজিমনির লড়াই বহু সময় অনেকের মনোযোগের বাইরে থাকে। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টকে ঘিরে সেরকম এক নীরব টানাপোড়েন চলছে এখন।
‘১৫ নম্বর চূড়া’ যেভাবে ‘এভারেস্ট’ হয়েছিলবিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের কোনো একক মালিক নেই। এর দক্ষিণে নেপাল, উত্তরে তিব্বত। তারা উভয়ে এর ‘মালিক’। চীনকে তিব্বতের অধীন মেনে নিলে এভারেস্টকে চীন-ভারত সীমান্ত বলা যায়।
তবে এই শৃঙ্গের এখনকার বহুল প্রচারিত নামটি যে তিব্বতি বা নেপালিদের দেওয়া নয়, সেটা অনেকেরই জানা। ব্রিটিশ সার্ভেয়ার এন্ড্রু ওয়াহ তাঁর বস—ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীন ভারতের প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল জর্জ এভারেস্টের নামে ওই শৃঙ্গের নাম দেন। জুলাইয়ের ৪ তারিখ ছিল এভারেস্টের জন্মদিন। এবারের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতি বেশ বিতর্কে পড়েছে।
১৮৪৩ সালে এভারেস্ট অবসর নেওয়ার সূত্রেই এন্ড্রু ওয়াহ সার্ভেয়ার জেনারেলের পদটা পান। কাজে নেমে ১৮৫৬ সালে হিমালয় মেপেজোখে ওয়াহর দল সিদ্ধান্ত জানায়, এর ১৫ নম্বর চূড়াটা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু (২৯০০২ ফুট)। এখন থেকে এর নাম হবে সার্ভেয়ার এভারেস্টের নামে।
কোম্পানির জরিপ দল যখন হিমালয় অঞ্চল মাপছিলেন, তখন তাদের কাগজপত্রে আজকের এভারেস্টের পাশে লেখা থাকত ‘পিক নম্বর ১৫’। তারই নতুন নামকরণ করেন জরিপ-উদ্যোক্তারা। এই নামকরণে পুরোনো কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো এবং সঙ্গে নিশ্চিতভাবে ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব তুলে ধরার ব্যাপার ছিল।
নেপাল রাষ্ট্রীয়ভাবে যদিও ‘সাহেব’দের পদানত ছিল না, কিন্তু দুনিয়াজুড়ে শ্বেতাঙ্গরা নানা সূত্রে এভাবে তাদের ঔপনিবেশিক কর্তৃত্বের বহু চিহ্ন রেখে গেছে, সেও সবার জানা। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে সেসব স্মারক বেশ চ্যালেঞ্জে পড়ছে। পার্শ্বফল হিসেবে কিছু ঝামেলাও হচ্ছে। এভারেস্টের বেলায়ও ব্যতিক্রম ঘটছে না।
নেপাল চাইছে এভারেস্টের নাম হোক ‘সাগরমাথা’হিমালয়ের চূড়া হিসেবে এভারেস্টের নামকরণ বিষয়ে নেপালে অনেকের ভাষ্য হলো, ব্রিটিশরা ১৮৫৬ সালে যা–ই করুক, এর আগেও নিশ্চয়ই ওই পর্বতচূড়ার একটা স্থানীয় নাম ছিল। সেই সূত্রে দাবি হলো, স্থানীয় নেপালিদের কাছে এটা পরিচিত ছিল ‘দেবদুংগা’ বা ‘পবিত্র পাহাড়’ নামে।
এই তথ্যের উৎসও একজন ব্রিটিশ (বি.
এসব বলাবলি বা ডাকাডাকির আন্তর্জাতিক কোনো নথিভুক্তি ছিল না। ব্রিটিশ কর্মকর্তা ওয়াহ সেটাও নিশ্চয়ই জানতেন। তাঁর দল এভারেস্ট নাম দিয়ে চূড়ার বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটিকে জানায় এবং সংস্থা কয়েক বছর বিতর্ক শেষে সেটার স্বীকৃতি দেয়। এভাবেই হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে ব্রিটিশ হেজিমনি কায়েম হয়। সেই থেকে ৬-৭ দশক ধরে এটা বিশ্বজুড়ে তাদের অতীত গৌরবের কথা জানিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এ বছরের মে মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা এভারেস্টকে ‘সাগরমাথা’ নামে দেখতে চান। এর আর কোনো নাম থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, নেপালের ইতিহাসবিদ বাবুরাম আচার্য এভারেস্টের এই নামটির উল্লেখ করেছিলেন ১৯৩৮ সালে। ‘সাগরমাথা’ মানে আকাশের শীর্ষদেশ।
বাবুরাম নেপালে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাঁকে নেপালে বলা হয় ‘ইতিহাস-শিরোমণি’। তাঁর কথাকে নেপালিরা সম্মান করে। সহজেই বোঝা যায়, বামপন্থী–জাতীয়তাবাদী কে পি শর্মা বাবুরামকে সামনে রেখে ‘সাগরমাথা’ প্রসঙ্গ সামনে নিয়ে এসেছেন।
এভারেস্টের নাম সংশোধনের চেষ্টার পেছনে স্পষ্টত কিছু রাজনৈতিক ব্যাপার আছে। কে পি শর্মা অলি মে মাসের আলোচ্য অনুষ্ঠানে এ–ও দাবি করেছেন, হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের এভারেস্ট নামের কোনো সত্যতা নেই। তাঁর ভাষায় এটা ‘ভুয়া’। অলি যে অনুষ্ঠানে এসব বলছিলেন, সেখানে গণচীনের একজন বড় কর্তাও ছিলেন।
সচরাচর জুনে পর্বতারোহী দল এভারেস্টের দিকে ছোটে। একই মৌসুমে প্রধানমন্ত্রী অলি পুরোনো বিতর্ক নতুন করে উসকে দিলেন এবার।
চীন প্রচার করছে ভিন্ন আরেক নামনেপালের পাশাপাশি চীনের সরকারি ঊর্ধ্বতনেরাও ইদানীং জোরেশোরে এভারেস্টের তিব্বতি নাম বক্তৃতা-বিবৃতিতে ব্যবহার করছেন। তাঁদের দাবির পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণও দৃঢ়। ফ্রান্সের পতাকা তৈরিকারীদের পুরোনো এক মানচিত্রে এভারেস্টের একটা ড্রয়িংয়ের পাশে নাম পাওয়া গেছে ‘চোমোলাঞ্চমা’, যা মূলত তিব্বতি ‘চোমোলাঙমা’র অপভ্রংশ।
ওই ড্রয়িং ১৭৩৩ সালে লাসায় থাকা একজন ফরাসি ধর্মযাজকের আঁকা। চীন এটা দেখিয়ে বলছে, তিব্বতিরা এভারেস্টকে যে ভিন্ন নামে ডাকত এই হলো তার প্রমাণ। আর তিব্বত যেহেতু এখন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে তাদের অধীনে, সে কারণে ব্রিটিশদের দেওয়া নামের চেয়ে তাদের দাবিই অগ্রগণ্য।
নেপাল সরকার এভারেস্টকে ‘সাগরমাথা’ হিসেবে চালুর চেষ্টা করলেও চীনাদের ‘চোমোলাঙমা’রও বিরোধিতা করছে না। অর্থাৎ যেন এভারেস্টের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটো নামই হতে পারে। বলা বাহুল্য, নেপাল-চীন এই সাংস্কৃতিক সমঝোতা হিমালয় থেকে ব্রিটিশ ‘ঐতিহ্য’ সরাতেই। কে পি অলি রাজনীতিবিদ হিসেবে নেপালে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত।
এভারেস্ট নিয়ে ভারতেরও কিছু বলার আছেএভারেস্ট যদিও ভারতভুক্ত নয়, কিন্তু বৃহত্তর হিমালয় অঞ্চলের কিছু অংশ তাদের সীমান্তেও আছে। তার চেয়েও বড় বিষয়, এভারেস্ট যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মাথা, সেই গাণিতিক হিসাবটি ভারতীয় রাধানাথ শিকদারের করা। তিনি তখন এন্ড্রু ওয়াহর সঙ্গে ব্রিটিশ-ভারতের সার্ভে বিভাগে কাজ করতেন। ১৮৫২ সালে রাধানাথই ভারতবর্ষের উত্তর দিকের অন্তত ছয়টি জায়গা থেকে ত্রিকোণমিতির গণনার ভিত্তিতে ওয়াহকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নতুন জায়গা শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা সর্বোচ্চ মনে করা হতো।
১৮০২ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার অনেকখানি জায়গাজুড়ে ওই মহা জরিপকাজ শুরু করেছিল। জরিপ ইতিহাসের মহাকাব্যিক এক অধ্যায় ছিল এসব, যা চলে ১৯২১ সাল পর্যন্ত।
প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল এভারেস্ট কলকাতায় কাজ করার সময় জোড়াসাঁকোতে জন্ম নেওয়া বিস্ময়কর গণিত প্রতিভা ১৮ বছর বয়সী বাঙালি রাধানাথ শিকদারকে ১৮৩১ সালে মাসে ৩০ রুপি সমান পারিশ্রমিকে দলে নিয়েছিলেন। এভারেস্টের অবসরের পর ওয়াহর সঙ্গেও রাধানাথ কাজ করতে থাকেন। ১৮৫১ সালে তিনি এই সার্ভে দলের প্রধান গণনাকারী পদে উন্নীত হন।
রাধানাথের গণনায় এভারেস্টের উচ্চতা ছিল ২৯০০০ ফুট। সেটাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে ওয়াহ বলেছিলেন ২৯০০২ ফুট। কাঞ্চনজঙ্ঘা ছিল প্রায় ৮০০ ফুট কম।
শিকদার এভারেস্ট বিষয়ে ওয়াহকে তাঁর হিসাব-নিকাশের ফল বুঝিয়ে দেওয়ার পরও শেষোক্তজন বিষয়টি ঘোষণা করতে কয়েক বছর সময় নিয়েছিলেন সব উপায়ে বাড়তি নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে। শেষমেশ ১৮৫৬ সালে বিশ্ববাসী সব জানতে পারে। যদিও বাঙালি রাধানাথের নাম ‘নেটিভ’ হওয়ার দুর্ভাগ্যে অনেকটাই অজানা থাকে। তাঁর শেষজীবনও চন্দননগরে কেটেছে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে।
তবে চীন-নেপাল যে এভারেস্টের নাম পাল্টাতে চলেছে, সেটা ভারতীয় মিডিয়াগুলো এখন বেশি ভালোভাবে দেখছে না। তারা মনে করছে এই উদ্যোগ হিমালয় অঞ্চলে ওই দুই দেশের সাংস্কৃতিক হেজিমনি কায়েমের নীরব প্রচেষ্টা মাত্র।
তারা এ–ও প্রশ্ন তুলেছে, সাগরমাথা শব্দটা যেহেতু ১৯৩৮ সালে প্রস্তাবিত, তার আগে নিশ্চয়ই এই শৃঙ্গের অন্য নাম ছিল। সেই অন্য নামকে প্রধানমন্ত্রী অলি ‘ভুয়া’ বলতে পারেন না। এ রকম প্রচারে অবশ্য চীনের দাবিটাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। ভারতীয়দের পক্ষে সেটা মানাও অস্বস্তিকর।
বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের কোনো কোনো সংগঠন বিভিন্ন সময় এমন দাবিও তুলেছে, হিমালয়ের ১৫ নম্বর চূড়াটির নাম রাধানাথের সম্মানে ‘শিকদার শিখর’ হওয়া সংগত ছিল। তবে রাধানাথের মুক্তমনা ও সংস্কারপন্থী ইমেজ থাকায় এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া তাঁকে বেশি গুরুত্ব দিতে বরাবরই নিমরাজি।
এভারেস্ট নিয়ে চলতি বিতর্কের সামাজিক একটা মুশকিলের দিকও আছে। নেপাল বা তিব্বতিরা চাইলেও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ আদৌ এই শৃঙ্গকে স্থানীয় নামে ডাকতে অভ্যস্ত হবে কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সচরাচর ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য শিক্ষা আমাদের পাঠ্যধারা ও মনোজগতের গভীরে শিকড় বিস্তার করে থাকে। সেখান থেকে বের হওয়ার বিকল্প সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা সামান্যই দেখা যায়।
আবার এভারেস্টের নাম বদল বা সংশোধনের চলতি ঘটনাবলির একটা বড় অর্থনৈতিক দিকও আছে। হিমালয়কে ঘিরে পর্যটক ও পর্বতারোহীদের আগ্রহের ফল হিসেবে মিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। এভারেস্টও এখন আর কেবল ভূগোল বা পরিবেশের বিষয় নেই। এটা বড় এক বাণিজ্যিক বিষয়ও বটে।
১৯৫৩ সালে হিমালয়ের শৃঙ্গ চূড়া জয়ের পর প্রতিবছর আগেরবার থেকে পর্বতারোহী বাড়ছে। প্রথম জয়ের পরবর্তী ত্রিশ বছর একই ধরনের সাফল্যের সংখ্যা দুই শর নিচে ছিল। পর্বতারোহণে আগ্রহীদের অনুমতি পাওয়ার সংখ্যাও ছিল সীমিত। এখন অনুমতি খরচ অনেক। তাতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমেনি।
১৯৯০–এর পর থেকে এভারেস্ট জয়ে আগ্রহীদের ‘সুনামি’ চলছে বলা যায়। এই ফাঁকে ডজন ডজন ট্যুর অপারেটরও তৈরি হয়ে গেছে। সঙ্গে বাড়ছে আরোহীদের সহযোগী শেরপাদের ফি থেকে শুরু করে অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত এভারেস্টকেন্দ্রিক সব ব্যবসাও। নানা কারিগরি সহায়তার বদৌলতে চূড়ায় উঠতে পারা সফল নারী-পুরুষের সংখ্যা এখন বছরে কয়েক শ দাঁড়াচ্ছে। শিগগির বছরওয়ারি সফলতার সংখ্যা হাজার ছাড়াবে বলে সবাই অনুমান করছে।
নেপালের জিডিপির বড় এক অংশ আসে এখন এভারেস্টমুখীদের কাছ থেকে আসা নানা ধরনের আয়ে। চীন সম্ভবত এটাকে অদূর ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নেবে। তিব্বতের এভারেস্ট–সংলগ্ন অংশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে তারা। নেপালের বদলে ওদিক দিয়ে এভারেস্ট দেখা এবং তাকে ‘জয়ে’ আগ্রহীদের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
চীনের জন্য এ বিষয়ে বাণিজ্যের আরেকটি সুবিধার দিক এভারেস্টের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘কে-২’ তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে পড়েছে। ‘কে-২’–এর নাম নিয়েও বিতর্ক আছে। চীন বলছে এর নাম হলো ‘কোগির’।
বাস্তবে পাকিস্তানভুক্ত গিলগিট-বালতিস্তানের স্থানীয় ভাষায় এর নাম ছিল চোগোরি (বড় পর্বত)। কিন্তু বালতিরা ভূরাজনীতির প্রভাবশালী কেউ নয় এখনো। ফলে চীন ‘কে-২’কে কোগির নামে ব্র্যান্ডিং করতে চাইছে। আবার পশ্চিমারা চাইছে এটার নাম ‘কে-২’ রেখে দিতে। ‘কে-২’ মানে কারাকোরাম-২। কারাকোরাম অঞ্চলে সার্ভে শেষে ওই পর্বতশৃঙ্গের ওই নাম দিয়েছিলেন ব্রিটেনের সার্ভেয়ার টমাস মন্টেগমারি।
সংগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ার পর্বতমালা নিয়ে চলমান নামকেন্দ্রিক ভূরাজনীতির আরও নানা অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক দিক দেখব আমরা সামনের দিনগুলোতে। বিশেষ করে ভারত-নেপাল, ভারত-চীন, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত নিয়ে বিরোধ ও দর–কষাকষি চলছে বহুকাল হলো। সঙ্গে আছে কাশ্মীর ও গিলগিট অঞ্চলের কাজিয়া। এমনকি বর্তমানে চীন ও নেপাল এক সুরে কথা বললেও তাদের মাঝেও সীমান্ত বিরোধ আছে। সেসব বিরোধের নিষ্পত্তি এবং সীমানা চিহ্নিতকরণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পর্বতগুলোর নামকরণ বিতর্কের ফলাফলের একটা মনস্তাত্ত্বিক ছাপ থাকবে।
এর মাঝে যেটা খুব অনালোচিত থাকছে তা হলো, মানুষের পদভারে মুখর হওয়ার প্রাকৃতিক পার্শ্বফল হিসেবে এভারেস্ট অঞ্চলে জলবায়ুর ব্যাপক নেতিবাচক ক্ষয়। যেহেতু আমাদের সব বড় নদীর উৎস হিমালয় অঞ্চল, সেই ক্ষতি সুদূর বাংলাদেশ পর্যন্ত বইতে হবে।
● আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক স গরম থ ন মকরণ হ জ মন ক জ কর ব তর ক য় র পর এর ন ম হওয় র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই শহীদদের স্মরণে ঢাবিতে গাছ বিতরণ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে গাছের চারা বিতরণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের দুই শিক্ষার্থী।
‘শহিদ স্মৃতি বৃক্ষায়ন’ নামে নিজস্ব উদ্যোগে এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাবির সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো: আব্দুল আহাদ ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম প্রতিক।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এই গাছের চারা বিতরণ করেন তারা।
আরো পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, কিন্তু আমার লক্ষ্য কি?
গবিতে ছাত্রদলের কমিটি: ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
এ কর্মসূচির আওতায় হলের প্রতিটি কক্ষে একটি করে মোট ১৩০টি গাছের চারা বিতরণ করেন তারা। প্রতিটা গাছের নাম একজন জুলাই শহীদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা মো. আব্দুল আহাদ বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগকে বইয়ের পাতার বাইরে বাস্তব জীবনেও স্মরণীয় করে রাখতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটা গাছই আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে ২ হাজারের বেশি শহিদ হয়েছেন। আমরা যেহেতু মোট ১৩০ গাছ বিতরণ করছি, আমাদের পক্ষে সব শহীদের নামে গাছ দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য আমরা চেষ্টা করেছি, এখানে সব পর্যায়ের শহীদদের তুলে ধরতে। এখানে শহীদ আবু সাইদ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা শহীদ নুর মোস্তফার নামও রয়েছে।”
আরেক উদ্যোক্তা তৌফিকুল ইসলাম প্রতিক বলেন, “আমরা প্রথম পর্যায়ে শুধু হলে গাছ বিতরণের কথা চিন্তা করছিলাম। পরে ভাবলাম জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে জীবন্ত রাখতে তাদের নামে গাছের নামকরণ করি। এখানে প্রতিটা গাছ জুলাই স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকবে। আমরা চাই, এর মাধ্যমে আমাদের কাছে শহীদদের অবদান চিরজীবী হয়ে থাকুক।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী