ওয়ানডে সিরিজের রোমাঞ্চ যে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত টেনে নেওয়ায় বড় ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের। মিরাজরা প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে না জিতলে ক্যান্ডিতে শেষ ম্যাচ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ থাকত না। তেমনি টি২০ সিরিজের উন্মাদনা ধরে রাখার জন্য হলেও বাংলাদেশের আজ জেতা উচিত। লিটন কুমার দাসরা মনেপ্রাণে সেটা চাচ্ছেনও। কোচিং স্টাফও কায়মনে প্রার্থনা করছেন একটি জয়ের।
কারণ দলের সাফল্য ছাড়া ভেতরের বিতর্কিত ঘটনাগুলো চাপা দেওয়া সম্ভব হবে না। এই অস্থির সময়ে কোচদেরও টি২০ জয় চাই। খেলোয়াড়দের চেয়ে তাদের জয়ের ক্ষুধা বেশি। কারণ দল ব্যর্থ হলে ফিল সিমন্স ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। লিটনের জাতীয় দলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। নিজেদের প্রয়োজনেই ডাম্বুলার রাংগিরি স্টেডিয়ামে আজ জয়ের রঙে রাঙাতে চাইবেন লিটনরা।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ভালো খেলে বাংলাদেশ। ব্যাকফুটে থেকে অনেক ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড আছে মাশরাফি-সাকিবদের। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতেও দারুণ কিছু সাফল্য পেয়েছেন তারা। ওয়ানডে, টি২০, টেস্ট– তিন সংস্করণেই জয় ছিল। আট বছর আগে ডাম্বুলায় আছে ওয়ানডে জয়ের সুখস্মৃতি। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, তাসকিন আহমেদের হ্যাটট্রিক উইকেট শিকার করার স্মৃতি এখনও সতেজ। কারণ রাংগিরি স্টেডিয়ামে ২০১৭ সালের পরে কোনো ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ।
আট বছর আগের সেই দলের মাত্র তিনজন ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান আছেন বর্তমান দলে। যদিও সংস্করণ ভিন্ন, এবার টি২০ খেলবে বাংলাদেশ; যেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। একটি ভালো ইনিংস বা একটি ভালো বোলিং স্পেল ম্যাচ জিততে সাহায্য করে। তানজিম হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন কুমার দাস, তাওহীদ হৃদয়রা একটি ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলে দিলে জয়ের খাতা খুলতে পারে দলটি। আসলে একটি কার্যকর ইনিংস খেলার মতো ছন্দে থাকা ব্যাটার পাওয়া যাচ্ছে না দলে। বরং ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণেই পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ব্যাটিং উইকেটেও ১৫৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিং ভালো হওয়ায় ১৯ ওভার পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে আটকে রাখা সম্ভব হয়েছিল।
ডাম্বুলায় জিততে হলে অলআউট ক্রিকেট খেলতে হবে টাইগারদের। কারণ পাল্লেকেলের মতো রাংগিরিতেও স্পোর্টিং উইকেট করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ম্যাচ হতে পারে। সেটাও নির্ভর করছে বাংলাদেশ দলের লড়াইয়ের ওপের। ডাম্বুলার গ্যালারি নিচু হওয়ায় দুই দিক থেকে হুহু করে বাতাস প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম দিকের বিশাল লেক ইবানকাটুয়া থেকে প্রবাহিত হাওয়ার প্রভাব স্টেডিয়ামের ২২ ও থাকবে। এই ভেন্যুতে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা এই কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত। ছোটখাটো এই জিনিসগুলোও মানিয়ে নিতে হবে লিটনদের।
যদিও শ্রীলঙ্কান ফিল্ডিং কোচ উপুল থারাঙ্গা বলছেন, প্রথম টি২০-এর মতো দাপুটে ক্রিকেট খেলে ডাম্বুলা থেকে সিরিজ নিশ্চিত করে কলম্বো যেতে চান তারা। বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্সের আশা লড়াই জমাতে পারলে সিরিজ বাঁচানো সম্ভব হবে।
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন আনা হতে পারে। মুস্তাফিজুর রহমানকে দেখা যেতে পারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায়। কোচ জানান, ওয়ানডে সিরিজে চোট পাওয়া জাকের আলী ফিট হলে ব্যাটিং অর্ডারে অন্তত একটি পরিবর্তন আসতে পারে। বাদ পড়তে পারেন নাঈম শেখ। মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় অফ স্পিনার শেখ মেহেদীকে দেখা যেতে পারে। কারণ নাঈম শেখ, মেহেদী মিরাজ পাল্লেকেলেতে টি২০ ব্যাটিং করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান
বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়
এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।
তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।
এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।
আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।
এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।
ঢাকা/আমিনুল