বিদ্যালয়ের শৌচাগার থেকে বের হতেই ঝলসে যায় নাবিলের শরীর
Published: 23rd, July 2025 GMT
‘বিকট শব্দটা শুনেই শৌচাগার থেকে বের হয়েছিল নাবিল। কিন্তু দরজা পেরোতেই আগুনের গোলা এসে ঝলসে দেয় ওর শরীর। এরপর সব যেন অন্ধকার’। রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কিশোর নাবিল হাসানের আহত হওয়ার বিষয়ে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন তার বোন নাসরিন সুলতানা।
নাবিল হাসান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আজ সকালে মুঠোফোনে তার বড় বোন নাসরিন সুলতানা জানায়, দুর্ঘটনার সময় নাবিল স্কুলের শৌচাগারে ছিল। সেটি শ্রেণিকক্ষ থেকে কিছুটা দূরে। বিকট শব্দ শোনার পর নাবিল শৌচাগার থেকে বের হয়। শরীর ঝলসে যাওয়ার পর একজন শিক্ষিকা নাবিলকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকাও দগ্ধ হয়েছেন।
ঘটনার দিন বেলা ১টা ১০ মিনিটে স্কুল থেকে ফোন পাই। একজন শিক্ষিকা স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে জানিয়ে বলেন—আপনার ছেলের অবস্থা ভালো নেই। এ কথা শোনার পরেই আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে ছুটে গেছি।নিজাম উদ্দিন, নাবিলের বাবানাবিলের বোন নাসরিন সুলাতানাও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকা দগ্ধ হওয়ার পরেও অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে ছুটে যান। আর নাবিল নিজেই একটি রিকশা নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে গেছে। তবে ওই হাসপাতালে যাওয়ার পরপরই জ্ঞান হারায় সে’।
নাবিলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ওই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাবিলই সবার ছোট। বাবা ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সবাই উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে থাকেন।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাবিল হাসান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার
বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।
জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।
পরিচালক আনোয়ার হোসেন
আরো পড়ুন:
জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট
নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?
এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।”
লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।”
‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।”
সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।
ঢাকা/শান্ত