ভারতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো দুই পরিবারের কাছে পাঠানো হলো অন্য বক্তির মরদেহ
Published: 23rd, July 2025 GMT
ভারতের গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় নিহত যুক্তরাজ্যের দুই যাত্রীর পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে যেসব মরদেহ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো অন্য ব্যক্তির মরদেহ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনজীবীর দাবি, তাদের কাছে পাঠানো মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত দুটি কফিনের ডিএনএ তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলছে না।
আইনজীবী জেমস হিলি বলেন, গত ১২ জুন গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১-এর দুর্ঘটনার পর নিহত যাত্রীদের ১২ থেকে ১৩টি মরদেহ যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি পরিবারকে জানানো হয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কাছে যে মরদেহ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো তাদের স্বজনদের নয়।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ১২ জুন বেলা দেড়টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি শহরের মেঘানিনগর এলাকায় বি জে মেডিকেল কলেজের আবাসিক ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়। এ সময় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ জন বেঁচে যান।
সরকারি সূত্র বলছে, আহমেদাবাদের সরকারি সিভিল হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। এর সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না। মরদেহের কফিনগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গোতে আন্তর্জাতিক জরুরি পরিষেবা সংস্থা কেনিয়নের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ অদল-বদল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি তারা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার অভিযোগ করেছিল, এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গড়িমসি করছে। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় আইনি প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্টস অভিযোগ করেছে, এয়ার ইন্ডিয়া নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে এমন এক জটিল ফর্ম পূরণ করতে বাধ্য করছে, যেটা সম্পর্কে তাদের ভালো করে বুঝিয়ে বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, এই ফর্ম না পূরণ করলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
আইনি প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্টস জানিয়েছে, তাদের মক্কেলদের ক্ষতিপূরণ পেতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রেখে কেন এই ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়েছে। এ সময় তাদের কোনো আইনি সহায়তা দেওয়া হয়নি। এয়ার ইন্ডিয়া পরবর্তী সময় আবারও ফোন করে তাঁদের ফর্ম পূরণ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনও হুমকি দিচ্ছে, ফর্ম পূরণ না করলে টাকা দেওয়া হবে না।
স্টুয়ার্টসের মতে, ফর্মে এমন কিছু আইনি শব্দ রয়েছে, যেগুলোর অর্থ না বুঝে শোকাহত পরিবারগুলো ভুল কিছু লিখে ফেলতে পারে। আর ভবিষ্যতে সেই তথ্য তাদের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারে এয়ার ইন্ডিয়া।
এয়ার ইন্ডিয়া এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও ভুল’ বলে নাকচ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যতটা দ্রুত অন্তর্বর্তী (অগ্রিম) ক্ষতিপূরণ দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রথম দফার টাকা দেওয়া হয়েছে।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর টাটা গ্রুপ প্রতিটি পরিবারের জন্য ১ কোটি রুপি (প্রায় ৮৫ হাজার পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া জরুরি প্রয়োজনের জন্য ২৫ লাখ টাকা (প্রায় ২১ হাজার ৫০০ পাউন্ড) অগ্রিম অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র ইন ড য র পর ব র দ র ঘটন মরদ হ ড এনএ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।
এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।
যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।