ভারতের গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় নিহত যুক্তরাজ্যের দুই যাত্রীর পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে যেসব মরদেহ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো অন্য ব্যক্তির মরদেহ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনজীবীর দাবি, তাদের কাছে পাঠানো মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত দুটি কফিনের ডিএনএ তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলছে না।

আইনজীবী জেমস হিলি বলেন, গত ১২ জুন গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১-এর দুর্ঘটনার পর নিহত যাত্রীদের ১২ থেকে ১৩টি মরদেহ যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি পরিবারকে জানানো হয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কাছে যে মরদেহ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো তাদের স্বজনদের নয়।

বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ১২ জুন বেলা দেড়টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি শহরের মেঘানিনগর এলাকায় বি জে মেডিকেল কলেজের আবাসিক ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়। এ সময় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ জন বেঁচে যান।

সরকারি সূত্র বলছে, আহমেদাবাদের সরকারি সিভিল হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। এর সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না। মরদেহের কফিনগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গোতে আন্তর্জাতিক জরুরি পরিষেবা সংস্থা কেনিয়নের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।

টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ অদল-বদল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি তারা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার অভিযোগ করেছিল, এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গড়িমসি করছে। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় আইনি প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্টস অভিযোগ করেছে, এয়ার ইন্ডিয়া নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে এমন এক জটিল ফর্ম পূরণ করতে বাধ্য করছে, যেটা সম্পর্কে তাদের ভালো করে বুঝিয়ে বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, এই ফর্ম না পূরণ করলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।

আইনি প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্টস জানিয়েছে, তাদের মক্কেলদের ক্ষতিপূরণ পেতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রেখে কেন এই ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়েছে। এ সময় তাদের কোনো আইনি সহায়তা দেওয়া হয়নি। এয়ার ইন্ডিয়া পরবর্তী সময় আবারও ফোন করে তাঁদের ফর্ম পূরণ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনও হুমকি দিচ্ছে, ফর্ম পূরণ না করলে টাকা দেওয়া হবে না।

স্টুয়ার্টসের মতে, ফর্মে এমন কিছু আইনি শব্দ রয়েছে, যেগুলোর অর্থ না বুঝে শোকাহত পরিবারগুলো ভুল কিছু লিখে ফেলতে পারে। আর ভবিষ্যতে সেই তথ্য তাদের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারে এয়ার ইন্ডিয়া।

এয়ার ইন্ডিয়া এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও ভুল’ বলে নাকচ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যতটা দ্রুত অন্তর্বর্তী (অগ্রিম) ক্ষতিপূরণ দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রথম দফার টাকা দেওয়া হয়েছে।

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর টাটা গ্রুপ প্রতিটি পরিবারের জন্য ১ কোটি রুপি (প্রায় ৮৫ হাজার পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া জরুরি প্রয়োজনের জন্য ২৫ লাখ টাকা (প্রায় ২১ হাজার ৫০০ পাউন্ড) অগ্রিম অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র ইন ড য র পর ব র দ র ঘটন মরদ হ ড এনএ ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড