রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল বুধবার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬৯ জন। এর মধ্যে শিশু অন্তত ৪০ জন। ১২ জন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে গতকাল বেলা দুইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই হিসাব জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, এই তথ্য বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত। পরে একই ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়, সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ভর্তি ৬৯ জনের মধ্যে
১৩ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও কোন ১৩ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেটা জানানো হয়নি।
গতকাল প্রেস উইং থেকে পাওয়া প্রথম তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৯ জনের মধ্যে ৪১ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক। এর বাইরে স্কুলের কর্মচারী ১ জন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ১ জন, পুলিশের ১ জন, সেনাবাহিনীর ১৪ জন, গৃহকর্মী ১ জন, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি ১ জন এবং অন্যান্য আরও ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।
বয়সভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, ৬৯ জনের মধ্যে ৪০ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ৫ জনের বয়স ৪০–৫০ বছর। পঞ্চাশোর্ধ্ব আছেন ১ জন। ১ জনের বয়স জানা যায়নি। আহত বাকি ২২ জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আহতদের উল্লেখযোগ্য অংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ জন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে আছেন। এর বাইরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে আছেন ৪ জন।
গতকাল বিকেল পৌনে চারটায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা.
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা বসেছিলেন উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, ‘আমরা ডিসিশন শেয়ার করেছি, তাঁরাও মতামত দিয়েছেন। প্রত্যেক রোগীর বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা হয়েছে কে কী ওষুধ পাবে, কার অপারেশন লাগবে, কার ড্রেসিং পরিবর্তন হবে ইত্যাদি।’
ডিএনএ নমুনা দেওয়ার অনুরোধস্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। এরপর ওই দিন রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। যে কারণে গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৩২ উল্লেখ করা হয়েছিল। গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা ২৯। শুরুতে সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি হয়েছিল।
নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত হওয়া ২২ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যদিও গতকাল প্রেস উইং ২১ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তের কথা জানায়। সেখানে নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ হস্তান্তরের কথা উল্লেখ নেই। যদিও বাস্তবে তাঁর মরদেহ গত মঙ্গলবারই দাফন করা হয়েছে। সেই হিসাবে শনাক্ত হওয়া মরদেহের সংখ্যা ২২।
প্রেস উইংয়ের তালিকায় এখন পর্যন্ত যাঁদের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন তানভীর (১৪), আফনান ফাইয়াজ (১৪), মাহরিন (৪৬), বাপ্পী (৯), মাকসুদা (৩৭), এ বি সালমান (১৪), শায়ান ইউসুফ (১৪), এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩), নাফি (৯), রজনী ইসলাম (৩৭), মো. সামিউল করিম (৯), ফাতেমা আক্তার (৯), মেহনাজ আফরিন হুমাইয়া (৯), সারিয়া আক্তার (১৩), নুসরাত জাহান আনিকা (১০), সাদ সালাউদ্দিন (৯), সায়মা আক্তার (৯), জুনায়েত (৯) এবং ওমর নুর আশফিক (১১)।
এর বাইরে সাতজনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি বলে প্রেস উইংয়ের তালিকায় উল্লেখ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন রয়েছেন সিএমএইচে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরেকজনের হাসপাতাল উল্লেখ করা হয়েছে লুবনা জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার।
যেসব ব্যক্তির নাম আহত বা নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় নেই, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগের সিআইডি ভবনে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান এক বিবৃতিতে এ অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র একটি পরিবারের পক্ষ থেকে নমুনা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ সব পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিএমএইচের মর্গে বর্তমানে রাখা ছয়টি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে এসব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিআইডি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হবে।
দগ্ধ শিশুদের নিয়ে চিন্তাপ্রেস উইংয়ের তালিকা অনুযায়ী, বার্ন ইনস্টিটিউটে গতকাল ভর্তি থাকা ৪৪ জনের মধ্যে ৩৫ জনই ছিল শিশু। বার্ন ইনস্টিটিউট ও সিএমএইচের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ১২ জনের মধ্যে ৭টি শিশু। এ অবস্থায় শিশুদের নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হচ্ছে চিকিৎসা–সংশ্লিষ্টদের। চিকিৎসাধীন শিশুদের নিয়ে উদ্বেগে আছেন স্বজনেরাও।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আলভিরা বার্ন ইনস্টিটিউটে ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গতকাল সন্ধ্যায় আলভিরার চাচা জাওয়ায়েদ ইমনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি জানান, তাঁর ভাতিজির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। তবে খুবই কান্নাকাটি করছে, ছটফট করছে। পরিবারের লোকজন পর্যায়ক্রমে সারাক্ষণ তার পাশে থাকছে।
গতকাল বিকেলে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে জানান, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুদের জন্য আলাদা চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র বয়স স এমএইচ আইস ইউত পর ব র র গতক ল ব র মরদ হ জন র ম উল ল খ ড এনএ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা শুরু ১৭ ডিসেম্বর
অমর একুশে বইমেলা, ২০২৬ চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে। চলবে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বইমেলার তারিখ নির্ধারণ-সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিস্তারিত আসছে...
ঢাকা/রায়হান/রফিক