হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার সম্প্রতি শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে বিতাড়ন করেছে। তাঁদের অনেকে ভারতেরই নাগরিক। তাঁরা বাংলাদেশ-সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা। ‘অবৈধ অভিবাসী’ অভিযোগে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে তাঁদের।

নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের মে মাস থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার বৈধ অনুমতি ছাড়া লোকজনের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অজুহাতে জাতিগত এসব বাঙালি মুসলিমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অভিযান জোরদার করেছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, এ ধরনের বেআইনি বিতাড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এর পরিবর্তে সবার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; যাতে তাঁরা বেআইনি আটক বা জবরদস্তিমূলক বিতাড়নের শিকার না হন।

এইচআরডব্লিউ বলছে, এ ধরনের বেআইনি বিতাড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এর পরিবর্তে সবার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; যাতে তাঁরা বেআইনি আটক বা জবরদস্তিমূলক বিতাড়নের শিকার না হন।

সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, ভারতের শাসক দল বিজেপি ভারতীয়সহ জাতিগত বাঙালি মুসলিমদের নির্বিচার দেশ থেকে তাড়িয়ে বৈষম্যমূলক মনোভাব উসকে দিচ্ছে। সরকার বলছে, তারা অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করছে; কিন্তু তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি অবজ্ঞা, দেশীয় আইনে নিশ্চয়তা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড উপেক্ষা এ দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করে না।

গত জুন মাসে এইচআরডব্লিউ ৯টি মামলার ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁদের অনেকে ভারতীয়, বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার পর ভারতে ফিরে গেছেন। আবার অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে এখনো নিখোঁজ। ৮ জুলাই সংস্থাটি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠায়; কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ভারত সরকার বিতাড়িত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে ভারতে পালিয়ে আসা প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। এই বিতাড়ন এখনো চলছে।

আরও পড়ুনআসামে শত শত ভারতীয়কে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে০৫ জুন ২০২৫

আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওডিশা ও রাজস্থান—বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) হাতে তুলে দিচ্ছে। আটক ব্যক্তিরা মূলত দরিদ্র অভিবাসী শ্রমিক। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তরক্ষীরা আটক ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব যথাযথভাবে যাচাই না করে হুমকি দিয়ে ও পিটিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে অনেকে ভারতের নাগরিক বলে প্রমাণিত হওয়ায় দেশটির সরকার তাঁদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

এ অভিযানের সূচনা ঘটে গত এপ্রিল মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর এক হামলার পর। এরপর ভারতে মুসলিমদের হয়রানি, তাঁদের নাগরিকত্বের দাবি অগ্রাহ্য, ফোন ও কাগজপত্র জব্দ এবং স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। আটক ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের হুমকি, মারধর ও অস্ত্রের মুখে সীমান্ত পার হতে বাধ্য করেছেন।

আমি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা (বিএসএফ সদস্যরা) আমাকে মারধর করেন এবং চারবার ফাঁকা গুলি ছোড়েন।খায়রুল ইসলাম, ভারতের নাগরিক ও আসামের সাবেক স্কুলশিক্ষক

আসামের বাসিন্দা ও সাবেক স্কুলশিক্ষক খায়রুল ইসলাম (৫১) বলেন, ২৬ মে তাঁকে বিএসএফ সদস্যরা হাত বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে ১৪ জনের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠান।

‘আমি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা আমাকে মারধর করেন এবং চারবার ফাঁকা গুলি ছোড়েন’ বলেন খায়রুল। পরে তিনি দুই সপ্তাহের মাথায় ভারতে ফিরতে সক্ষম হন।

আরও পড়ুনদুই সীমান্ত দিয়ে ৩৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ১৪ জুন ২০২৫

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনিয়মিত অভিবাসন কয়েক দশক ধরে চললেও এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। রাজনীতি করার জন্য অনেক সময় এ সংখ্যা ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে বলা হয়। বিজেপির শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বারবারই আখ্যায়িত করেন এবং এটিকে ব্যবহার করে হিন্দু ভোট আকর্ষণে ভারতের মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানান।

গত মে মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্য সরকারগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে ‘অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত, চিহ্নিত ও বহিষ্কার করার’ নির্দেশ এবং প্রতিটি জেলায় আটককেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২ হাজার ৩৬০ জনের নাম যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশের কাছে পাঠিয়েছে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশের পর বিজেপি–শাসিত কয়েকটি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ বাংলাভাষী মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) লোগো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এইচআরডব ল উ ব এসএফ র জন য র পর ব ব আইন সরক র আটক ব

এছাড়াও পড়ুন:

১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ

পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশের ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষানির্ভর তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রিজ কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামের (এসআইসিআইপি) আওতায়। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

আজ সোমবার রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে এসআইসিআইপি ও পিকেএসএফের প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী তরুণেরা ১২টি খাতের প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে থাকা-খাওয়ার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণেরা। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারীদের আত্মকর্মসংস্থান বা মজুরিভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। এটি একই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। প্রকল্পের আওতায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত কোর্স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা সহজেই কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ১২ হাজার ছাড়াও আরও ৮ হাজার ৫০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ২ হাজার এতিম ও দুস্থ তরুণকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ সময় অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
  • চোরাচালানে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক, ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিজিবি
  • মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
  • ১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
  • বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ
  • বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য ৫ হাজার বডিক্যাম পাচ্ছে বিএসএফ