যে দল কর্মীদের সামলাতে পারছে না, তাদের হাতে মানুষের জীবন নিরাপদ নয়
Published: 24th, July 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। কিন্তু দুর্নীতি আমাদের সংস্কৃতি নয়। চাঁদাবাজি আমাদের সংস্কৃতি নয়। দখলদারি আমাদের সংস্কৃতি নয়। মানুষের ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়া আমাদের সংস্কৃতি নয়। যে দল তার কর্মীদের এভাবে গড়ে তুলতে পেরেছে, সেই দলের হাতে দেশ আসলে ইনশা আল্লাহ দেশকেও গড়ে তুলতে পারবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যেই দল তার নিজের কর্মীদের সামাল দিতে পারছে না বা পারবে না, সেই দলের হাতে বাংলাদেশের একজন মানুষের জীবনও নিরাপদ নয়।’
নগরের পূর্ব শাহি ঈদগাহ এলাকার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জামায়াত কেমন বৈদেশিক সম্পর্ক দেখতে চায়, এ বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের কথা একদম সাফ। আমরা কোথাও একেবারেই বাস্তবিক অর্থে কারও কোনো প্রভুত্ব মানব না। প্রভু আমাদের একজনই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। এমনকি কারও বড় ভাইগিরিও আমরা মানব না। আমার দেশ ছোট না বড়, ইট ইজ নট ম্যাটারিয়াল। এটি একটি স্বাধীন দেশ। ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশ সমমর্যাদার ভিত্তিতে সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে। এখানে প্রতিবেশীরা অগ্রাধিকার পাবে, কিন্তু কোনো প্রতিবেশী যদি অব্যাহতভাবে আমাদের অধিকার হরণ করতে থাকে, তাহলে এই দেশ, একসাথে ১৮ কোটি মানুষ রুখে দাঁড়াবে।’
সমাজের প্রতিটা সেক্টর তছনছ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যেখানে আপনি চোখ ফেলবেন, সব জায়গায় দেখবেন অসংগতি। সব জায়গায় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। এই যে জিনিসপত্রের যে মূল্য, দ্রব্যমূল্য যেটা, যদি সিন্ডিকেট বন্ধ হয়ে যায়, মিনিমাম ৪০ পারসেন্ট দাম অটোমেটিক্যালি কমে যাবে। তাহলে যারা সিন্ডিকেট করে, যারা চাঁদাবাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, তারা আসলেই ভিক্ষুকের চাইতে আরও নিকৃষ্ট। এটা কোনো দলকে নির্দিষ্ট করে বলছি না, এ রকম চরিত্র যে সমস্ত ব্যক্তির, আমি তাদের বলছি। এখন তিনি যদি কোনো দলের সদস্য কিংবা নেতা হন, আমার কিছু করার নেই।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা যুদ্ধ হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। ইনশা আল্লাহ, আরেকটা যুদ্ধ দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আমরা করব দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এবং এই যুদ্ধে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যেমন আল্লাহ মেহেরবাণী করে আমাদের বিজয় দিয়েছেন, ইনশা আল্লাহ, এই যুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবে, ইনশা আল্লাহ।’
আগামী বছরের প্রথমাংশেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত হবে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। তিনি বলেন, ‘তিন-তিনটি নির্বাচনে মানুষ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং মনের মতো দল কিংবা ব্যক্তিকে তারা বাছাই করে নিতে পারেনি। আমরা আশা করি, আগামী বছরের প্রথমাংশেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং হওয়া উচিত।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এটাও বলেছি, যদি প্রয়োজনীয় বেসিক সংস্কারগুলা করা না হয়, আর যদি আগের মতোই নির্বাচন হয়, এই নির্বাচন জাতির জন্য আরেকটা দুঃখ এবং বেদনার কারণ হবে। আমরা এটা দেখতেও চাই না, আমরা এটা হতেও দিতে পারি না। এই জন্য প্রয়োজন সংস্কার আর অপরাধীদের বিচার। আমরা জানি, সব বিচার এই সময়ের ভেতরে সম্ভব নয়। কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে আমরা সরকার এবং বিচার বিভাগের আন্তরিকতটা দেখতে চাই।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা দৃশ্যমান কিছু দেখতে চাই। দুই-চাইরটা হলেও শীর্ষ অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারটা আমরা দেখতে চাই। এর পরেই ধারা চলমান থাকবে, যাঁরা পরবর্তী পর্যায়ে দেশের শাসনক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব হবে বিচারকে চালিয়ে নেওয়া এবং এটাকে সমাপ্তির দিকে নেওয়া। যদি কেউ ধানাইপানাই করেন, মনে রাখবেন, যুবকেরা রাস্তা চিনে ফেলেছে। আগামীতে আমি করি আর আপনি করেন, ধানাইপানাই করলে এই যুবকেরা আপনাকে-আমাকে ছাড় দেবে না।’
জামায়াতকে মজলুম দল উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এবং দেশের বাইরে আমাদের কোনো বেগমপাড়া নাই। তার প্রয়োজনও নাই। আল্লাহ তায়ালা এখানে আমাদের পয়দা করেছেন, এ দেশের মানুষকে নিয়েই আমরা বাঁচতে চাই মর্যাদার সাথে। এ মর্যাদা হরণ করা হয়েছিল, ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াকু সহযোদ্ধারা কাজ করেছেন।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের সিলেট মহানগরের আমির মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহজাহান আলী ও নায়েবে আমির নুরুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এ ছাড়া জামায়াতের সিলেট জেলার আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, হবিগঞ্জ জেলার আমির মখলিছুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র স স ক ত র আম র আল ল হ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
পুঁজিবাজারে মার্জিন হিসাবে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই এ সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে কমিশনে জমা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্টব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।
আরো পড়ুন:
৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
ওই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা জমা দানের বিষয়ে আজকের কমিশন সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
* গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
* পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসকল বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ