নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। মানুষ আশা করে, ৫ আগস্ট আপনারা নির্বাচনের তারিখ ও জুলাই সনদ ঘোষণা করবেন।’

গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে এই জুলাই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, এমন কথা বলে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটিকে অজুহাত করে নির্বাচন পেছানো যাবে না। ফলে কোনো দল যদি দখলদারি করতে চায়, আসুন আমরা প্রতিরোধ করি।’

বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তারা দেশ ও জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, পেশিশক্তির প্রভাব দিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখল করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। দলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বকালের সেরা হিসেবে আয়োজন করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা করতে হবে। যারা সহযোগিতা করবে না, তাদের বয়কট করতে হবে।

‘আমরা ভয়ানক আশঙ্কার মধ্যে আছি’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা আজকাল দেখতে পাচ্ছি অনেকেই বলছেন, নির্বাচন হলে তো আগের লোকই ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের মানুষ যদি নির্বাচন করে আগের লোককেই ক্ষমতায় আনেন, তাহলে আপনি কে এইটা ঠিক করার। আপনি সবচেয়ে ভালোটা বোঝেন, পাবলিক কিছু বোঝে না।’

আগামী নির্বাচনে টাকার খেলা হবে না উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান নেতা বলেন, ‘নির্বাচন মানে টাকার খেলা। নির্বাচন মানে ক্ষমতার বাহুর খেলা। আগামী নির্বাচন টাকার খেলা হবে না। আগামী নির্বাচন পেশিশক্তির খেলা হবে না। আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের মানুষের সচেতন রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের নির্বাচন। মানুষ ভোট দিয়ে তার জনপ্রতিনিধি ঠিক করবে।’

‘যাঁরা বলেন নির্বাচন হলে লুটেরা মাফিয়া আসবে, তাঁরা কোন পথে আমাদের নিতে চান’—এমন প্রশ্ন করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা জয়লাভ করলে তখন নির্বাচন দেব। আমরা জয়লাভের নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচন দরকার নেই। এ রকম একটা অবস্থান নিতে চান, তাই না? এটা শেখ হাসিনারই ভূত। শেখ হাসিনাও নিজে জিতবেন না বলে সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি।’

এখন অনেকেই নিজেদের দলীয় কথা অন্যদের দিয়ে বলাচ্ছেন, এমন মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এখন কেউ কেউ সরাসরি নির্বাচন পেছানোর কথা বলেন না। তাঁরা অন্য লোকদের দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেন। অথচ বাংলাদেশটা আজ কোন পর্যায়ে আছে? আমরা একটা ভয়ানক আশঙ্কার মধ্যে আছি। আমাদের দেশের পতিত ফ্যাসিস্টরা নানা ষড়যন্ত্র করছেন। বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে লাভ সেই দেশি-বিদেশি পতিত ফ্যাসিস্টদের হবে। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কি অনেকে ফাঁদে পা দিচ্ছেন! নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারটা কিন্তু ওই ফাঁদে পা দেওয়ার মতো। অতএব যারা বাংলাদেশের অগ্রগতি ঠেকাতে চায়, তারা এ মুহূর্তে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে আমরা কোনোভাবে কার্যকর হতে দেব না।’

‘জুলাই সনদ না হলে সরকারকে দায় নিতে হবে’

এত দিনেও জুলাই সনদ না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রশ্নে আমাদের বেশ কিছু ঐকমত্য হয়েছে। সেগুলো জাতীয় সনদ আকারে লিপিবদ্ধ করুন। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে। অথচ এখনো সনদ প্রস্তুত করতে পারছে না সরকার। যদি সেটি না হয়, তার দায় সরকারকে নিতে হবে। কেননা এই সনদ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেসবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের আন্দোলনে যেটি পারা যায়নি, এবার সেটি হচ্ছে। এবার শুধু ফ্যাসিস্ট শক্তি নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাও বিলোপের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা ঐকমত্য হয়েছি যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করা হবে। একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগ হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিযুক্ত হবেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রক্রিয়া সরকারি দলের হাতে থাকবে না। এ বিষয়ে বিরোধী দল, বিচার বিভাগের প্রতিনিধি নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি হবে। এ রকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’

কিন্তু আরও অনেকগুলো বিষয়ে একমত হতে হবে বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এ দেশে আরও বেশ কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ যদি সরকারের হাতে থাকে, তবে আবার পুরো রাষ্ট্রশক্তিকে নিজের মতো করে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। আমরা চাই এসব জায়গায় পরিবর্তন হোক। পাশাপাশি আমরা চাই, দেশে দ্বিকক্ষ সংসদ প্রতিষ্ঠা হোক। এসব দাবির অর্থ হচ্ছে ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা।’

আরও যাঁরা বক্তব্য দিলেন

সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চেতনা যারা ধারণ করে বা চর্চা করার চেষ্টা করে, গণসংহতি আন্দোলন সেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। গণসংহতি আন্দোলন এ বন্দোবস্তের কথা অনেক আগেই বলেছে। গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী অপূর্ব নাথ, শহীদ শিমুল, মো.

হারুন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নুরুন্নেসা প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ ষড়যন ত র সরক র র ঐকমত য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কথা বলে দুই দেশের উদ্বেগজনক বাণিজ্য বিরোধের মীমাংসা করতে পারলেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বিজ্ঞ নেতারা দীর্ঘ আলোচনা করে ঠিক করতে পারছেন না কীভাবে নির্বাচন ও সংস্কার কাজটি করা যাবে।

অনেক আলোচনা ও বিতর্কের পর ১৭ অক্টোবর বৃষ্টিস্নাত বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বেশ ঘটা করে ২৫টি দল জুলাই সনদে সই করেছিল; চারটি বামপন্থী দল রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তন করার প্রতিবাদে সনদে সই দেয়নি, তাতে অবাক হইনি। কিন্তু ছাত্রনেতৃত্ব থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টি, যারা জুলাই সনদের দাবিটি প্রথম তুলেছিল, তাদের সই না দেওয়াটা অস্বাভাবিক ঠেকেছে। এটা নিয়ে তারা যে দর–কষাকষি করছে, তার পেছনে কি নীতিগত অবস্থান, না ভোটের হিসাব–নিকাশ মুখ্য ছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে যে সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করেছে, তা নিয়ে রাজনীতির মাঠ বেশ গরম। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল একে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও তামাশা বলেও অভিহিত করেছে। আবার কেউ কেউ স্বাগতও জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হতে পারলে নির্বাচন হবে কীভাবে?

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তিনটি বলয় তৈরি হয়েছে। একটি বলয় হলো বিএনপি ও তাদের সমর্থক-অনুসারী দল। আরেকটি হলো জামায়াতে ইসলামী ও এর অনুসারী দল। তৃতীয়টি হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি। আবার কোনো কোনো দল দুই নৌকায় পা দিয়ে রেখেছে। যেখানে গিয়ে ভোটের মাঠে সুবিধা করা যাবে, শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যাবে।

মাঠে সক্রিয় থাকা ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়েই সরকার তথা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ আট মাস ধরে আলোচনা করে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৪৮টি বিষয় যেহেতু সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেহেতু এগুলোর আইনি ভিত্তি তৈরির জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যা নিয়ে আবার মতভেদ দেখা দিয়েছে। যদিও সনদ তৈরির সময় বলা হয়েছিল, তারা আইনি ভিত্তির সুপারিশ করবে না। কিন্তু অসমাপ্ত সনদ করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আরও জট পাকিয়ে ফেলেছে।

জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটবে না। সরকার বলছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজি করাতে না পারলে কীভাবে সেই নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সামনে রেখে বড় আক্রমণের আশঙ্কার কথা বলেছেন। সেই আশঙ্কা মোকাবিলার দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। 

যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তীব্র, তার একটি হলো গণভোটের তারিখ। জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অনুসারীরা বলছে, নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের দাবি, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতে পারবে না। তাঁরা মনে করেন, আগে গণভোটের দাবি তোলা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার দুরভিসন্ধি ছাড়া কিছু নয়। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশ্য দুই বিকল্প প্রস্তাবই সরকারের কাছে পেশ করেছে। সমস্যা হলো যিনি সরকারপ্রধান, তিনি ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে কে কার কাছে প্রস্তাব পেশ করেছেন।

দ্বিতীয়ত, জুলাই সনদে ঐকমত্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের আপত্তিগুলো লিপিবদ্ধ হলেও আইনি ভিত্তির সুপারিশে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের প্রধান আপত্তি এখানেই। জুলাই সনদে বলা হয়েছে, যেসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানিয়েছে, নির্বাচনে তারা জনগণের রায় পেলে সেটি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য নয়। কিন্তু আইনি ভিত্তিতে যখন সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সেটি অনুমোদন করে নিলে সংসদের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে।

তাদের তৃতীয় আপত্তির জায়গা হলো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আইনি ভিত্তি অনুমোদিত হয়ে যাওয়া। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে, যদি ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ উল্লিখিত বিষয়ে আইন পাস না করে, তাহলে সেটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনুমোদিত হয়ে যাবে। ঐকমত্য কমিশনের এই আইনি ভিত্তির সঙ্গে ১৯৭০ সালে ইয়াহিয়া খান প্রণীত এলএফওর মিল খুঁজেও পেয়েছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অনৈক্যের কারণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ‘দুরূহ চ্যালেঞ্জ’ দেখছে সরকার। তবে গণভোটসহ সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিও গভীরভাবে চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ (প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০২৫)

সিদ্ধান্তটি কবে হবে, কেমন হবে? যদি একই দিনে দুই ভোট করার পক্ষে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে জামায়াত ও এনসিপি কি মেনে নেবে? আর যদি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হয়, বিএনপি কি তা গ্রহণ করবে? যদি না করে, কী পরিস্থিতি তৈরি হবে?

রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদের পক্ষে এনে সরকার যতটুকু বাহবা পেয়েছিল, তার বেশি সমালোচিত হয়েছে আইনি ভিত্তি দিতে গিয়ে। এখানে কোনটি ন্যায্য, কোনটি অন্যায্য; তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন একে অপরকে বিশ্বাস করবে না, তেমনি তাদের বড় অংশ সরকারের প্রতিও আস্থাশীল নয়। নির্বাচনের বিষয়ে শুরু থেকে সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন সন্দেহ বাড়িয়েছে, তেমনি সরকারের প্রতিও একধরনের অনাস্থা সৃষ্টি করেছে।

সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল, রাজনৈতিক দলের সংস্কার, সেখানেই তারা কম গুরুত্ব দিয়েছে। তারা এই একটি বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির সংস্কারকাজ অনেকটা সহজ হতো। এখন রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের চাপে সনদে যতই সই করুক না কেন, কাজ করবে তাদের মতো করে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধানের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন নিয়ে যতটা ব্যস্ত ছিল, রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন থেকেছে। 

জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটবে না। সরকার বলছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজি করাতে না পারলে কীভাবে সেই নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সামনে রেখে বড় আক্রমণের আশঙ্কার কথা বলেছেন। সেই আশঙ্কা মোকাবিলার দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন যত বাড়বে, আক্রমণের আশঙ্কারও তত জোরদার হবে। এই সহজ সত্যটি সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চাইলে অবিলম্বে সৃষ্ট জট খোলার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসুন। সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।

সোহরাব হাসান, সাংবাদিক ও কবি

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
  • অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
  • বিদেশ যেতে কেন বাধা দেওয়া হল, প্রশ্ন মিলনের
  • একটি মহল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: ডা. জাহিদ