নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে, দ্রুত তারিখ ঘোষণা করুন: জোনায়েদ সাকি
Published: 25th, July 2025 GMT
নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। মানুষ আশা করে, ৫ আগস্ট আপনারা নির্বাচনের তারিখ ও জুলাই সনদ ঘোষণা করবেন।’
গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে এই জুলাই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, এমন কথা বলে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটিকে অজুহাত করে নির্বাচন পেছানো যাবে না। ফলে কোনো দল যদি দখলদারি করতে চায়, আসুন আমরা প্রতিরোধ করি।’
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তারা দেশ ও জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, পেশিশক্তির প্রভাব দিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখল করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। দলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বকালের সেরা হিসেবে আয়োজন করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা করতে হবে। যারা সহযোগিতা করবে না, তাদের বয়কট করতে হবে।
‘আমরা ভয়ানক আশঙ্কার মধ্যে আছি’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা আজকাল দেখতে পাচ্ছি অনেকেই বলছেন, নির্বাচন হলে তো আগের লোকই ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের মানুষ যদি নির্বাচন করে আগের লোককেই ক্ষমতায় আনেন, তাহলে আপনি কে এইটা ঠিক করার। আপনি সবচেয়ে ভালোটা বোঝেন, পাবলিক কিছু বোঝে না।’
আগামী নির্বাচনে টাকার খেলা হবে না উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান নেতা বলেন, ‘নির্বাচন মানে টাকার খেলা। নির্বাচন মানে ক্ষমতার বাহুর খেলা। আগামী নির্বাচন টাকার খেলা হবে না। আগামী নির্বাচন পেশিশক্তির খেলা হবে না। আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের মানুষের সচেতন রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের নির্বাচন। মানুষ ভোট দিয়ে তার জনপ্রতিনিধি ঠিক করবে।’
‘যাঁরা বলেন নির্বাচন হলে লুটেরা মাফিয়া আসবে, তাঁরা কোন পথে আমাদের নিতে চান’—এমন প্রশ্ন করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা জয়লাভ করলে তখন নির্বাচন দেব। আমরা জয়লাভের নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচন দরকার নেই। এ রকম একটা অবস্থান নিতে চান, তাই না? এটা শেখ হাসিনারই ভূত। শেখ হাসিনাও নিজে জিতবেন না বলে সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি।’
এখন অনেকেই নিজেদের দলীয় কথা অন্যদের দিয়ে বলাচ্ছেন, এমন মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এখন কেউ কেউ সরাসরি নির্বাচন পেছানোর কথা বলেন না। তাঁরা অন্য লোকদের দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেন। অথচ বাংলাদেশটা আজ কোন পর্যায়ে আছে? আমরা একটা ভয়ানক আশঙ্কার মধ্যে আছি। আমাদের দেশের পতিত ফ্যাসিস্টরা নানা ষড়যন্ত্র করছেন। বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে লাভ সেই দেশি-বিদেশি পতিত ফ্যাসিস্টদের হবে। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কি অনেকে ফাঁদে পা দিচ্ছেন! নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারটা কিন্তু ওই ফাঁদে পা দেওয়ার মতো। অতএব যারা বাংলাদেশের অগ্রগতি ঠেকাতে চায়, তারা এ মুহূর্তে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে আমরা কোনোভাবে কার্যকর হতে দেব না।’
‘জুলাই সনদ না হলে সরকারকে দায় নিতে হবে’
এত দিনেও জুলাই সনদ না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রশ্নে আমাদের বেশ কিছু ঐকমত্য হয়েছে। সেগুলো জাতীয় সনদ আকারে লিপিবদ্ধ করুন। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে। অথচ এখনো সনদ প্রস্তুত করতে পারছে না সরকার। যদি সেটি না হয়, তার দায় সরকারকে নিতে হবে। কেননা এই সনদ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেসবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের আন্দোলনে যেটি পারা যায়নি, এবার সেটি হচ্ছে। এবার শুধু ফ্যাসিস্ট শক্তি নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাও বিলোপের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা ঐকমত্য হয়েছি যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করা হবে। একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগ হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিযুক্ত হবেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রক্রিয়া সরকারি দলের হাতে থাকবে না। এ বিষয়ে বিরোধী দল, বিচার বিভাগের প্রতিনিধি নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি হবে। এ রকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’
কিন্তু আরও অনেকগুলো বিষয়ে একমত হতে হবে বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এ দেশে আরও বেশ কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ যদি সরকারের হাতে থাকে, তবে আবার পুরো রাষ্ট্রশক্তিকে নিজের মতো করে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। আমরা চাই এসব জায়গায় পরিবর্তন হোক। পাশাপাশি আমরা চাই, দেশে দ্বিকক্ষ সংসদ প্রতিষ্ঠা হোক। এসব দাবির অর্থ হচ্ছে ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা।’
আরও যাঁরা বক্তব্য দিলেন
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চেতনা যারা ধারণ করে বা চর্চা করার চেষ্টা করে, গণসংহতি আন্দোলন সেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। গণসংহতি আন্দোলন এ বন্দোবস্তের কথা অনেক আগেই বলেছে। গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী অপূর্ব নাথ, শহীদ শিমুল, মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ ষড়যন ত র সরক র র ঐকমত য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে এনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।
গতকাল বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। তবে এটি নিয়েও কোনো ঐকমত্য হয়নি। বিএনপিসহ কিছু দল প্রস্তাবটির সঙ্গে দ্বিমত করেছে। প্রস্তাবটি জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাবের কাছাকাছি, তারা এটি সমর্থন করেছে। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, প্রস্তাবটি নিয়ে তাদের দলে আলোচনা করতে হবে।
এর বাইরে সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি দলও সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া আলোচনা বিকেল পাঁচটায় মুলতবি করা হয়। এ বিষয়ে আগামী অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে আবার আনুষ্ঠানিক আলোচনা হতে পারে। আলোচনার তারিখ পরে জানাবে ঐকমত্য কমিশন।
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বে দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ৮৪টি প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। যদিও গতকাল পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
নতুন প্রস্তাবে যা আছেসংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একাধিকবার বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। গতকালের বৈঠকে ‘বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত চূড়ান্ত অভিমত’ শিরোনামে একটি প্রস্তাব তুলে ধরে কমিশন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইনবিশেষজ্ঞদের প্যানেল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে কিছু পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারকে সুপারিশ করার পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো:
১. অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে; যেখানে জুলাই সনদে উল্লিখিত মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
২. পরবর্তীতে এই সংবিধান আদেশ নিয়ে গণভোটে করা যেতে পারে। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হবে। সংবিধান আদেশে গণভোটের বিধান রাখা যেতে পারে।
৩. যদি গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সংবিধান আদেশের প্রতি সম্মতি দেয়, তবে তা কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকেই অনুমোদিত বলে গণ্য হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়। ওই ঘোষণাপত্রের ২২ দফায় বলা আছে, ‘...বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।’
দলগুলোর অবস্থানগতকালের আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর দফার ভিত্তিতে সংবিধান আদেশ জারির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জুলাই ঘোষণার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও এখনো এর আইনি ভিত্তি নেই। আর ঘোষণাপত্র বলা হয়েছে, এসব বাস্তবায়ন করা হবে। করা হয়েছে, তা নয়। সুতরাং এটার ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়া যায় কি না, তিনি সে প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই ঘোষণায় সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, সময় ও ফোরাম কোনটা হবে, তা বলা আছে। এ সময় তিনি জুলাই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর দফার উল্লেখ করেন, যেখানে আগামী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অবিলম্বে যদি জুলাই সনদ কার্যকর হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন হয়ে গেল। কিন্তু এর বৈধতা কে দেবে, তিনি সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোটের মতামত চাওয়া যায় যে, সংবিধান আদেশ বা অন্য কোনোভাবে সংবিধানে পরিবর্তন আনা যায় কি না।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের প্রস্তাব ভালো। কিন্তু সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সংসদে সংশোধনী পাস হওয়ার পর গণভোট করতেই হবে। এখন আগে একবার এবং পরে একবার, কয়বার গণভোট করা হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম, ১২–দলীয় জোটসহ আরও কয়েকটি দল ও জোটের পক্ষ থেকেও সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে কোন কোন প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া হবে, আলোচনায় তা সবাই পরিষ্কার করেননি।
আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তাঁরা মনে করেন ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। আদালতের মতামত নিশ্চয় সবাই মানবে। সন্দেহ নেই, একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এখান থেকে বের হতে হবে। তবে যেনতেনভাবে বের হলে হবে না। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে সবার ‘উইন উইন’ অবস্থা থাকে।
জামায়াত ও এনসিপি যা বলেছেগতকাল আনা প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আলোচনায় বলেন, ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সমাধান নয়। সংবিধান আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া হোক, তার ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। আর গণভোট সবচেয়ে শক্তিশালী। সংসদ মৌলিক সংস্কার বা সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন করতে পারবে না।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হলে পরে জটিলতা তৈরি হবে কি না, তা দেখতে হবে। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন হচ্ছে, সেখানে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন। সুতরাং এখান থেকে নিরপেক্ষ সমাধান আসবে কি না, তা নিয়ে ঝুঁকি আছে। তাঁরা আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না।
নতুন প্রস্তাবটি নিয়ে তাদের দলে আলোচনা করতে হবে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, পরবর্তী সংসদে গিয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, এমন একটা ইঙ্গিত আলোচনা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। সেটা একটু ঘুরিয়ে, ১০৬ অনুচ্ছেদকে সামনে এনে। যদি আদালত বলেন, এটা করা যাবে না। তখন কী হবে?
জাবেদ রাসিন বলেন, তাঁরা এই সরকারের অধীনে সনদের বাস্তবায়ন চান। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পথ হলো গণপরিষদ, যা একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে।
একাধিক বিকল্প সুপারিশ থাকবেগতকালের আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পূর্ণাঙ্গ মতামত দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেকে এটা সমর্থন করেছেন, অনেকেই এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। আগের যেসব প্রস্তাব ছিল, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়া যেতে পারে—এ রকম মত এসেছে।
বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা দলগুলোকে কিছুটা সময় দিতে চান। যাতে দলগুলো পরস্পর আলোচনা করতে পারে। সরকারকে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করতে চায় কমিশন। এখন দলগুলোর কাছ থেকে ছয়টির মতো এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে একটি মতামত আছে। কমিশন বিকল্প আরও কমিয়ে আনতে চায়। অক্টোবরের শুরুর দিকে আবার আলোচনায় বসে দ্রুত কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করে সরকারকে দেওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।