এমএলএস অল-স্টার গেমে না খেলার শাস্তি হিসেবে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসি ও জর্দি আলবা। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে সিনসিনাটির মুখোমুখি হবে মায়ামি। স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে এই ম্যাচে মেসি ও আলবাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে এমএলএস কর্তৃপক্ষ।
এমএলএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ সপ্তাহে মেজর লিগ সকার অল-স্টার গেমে অনুপস্থিত থাকার কারণে শনিবার সিনসিনাটির বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারবেন না ইন্টার মায়ামির জর্দি আলবা এবং লিওনেল মেসি। নিয়ম অনুযায়ী, লিগের কাছ থেকে আগেই অনুমতি না নিয়ে কোনো খেলোয়াড় যদি অল-স্টার গেমে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তিনি তার ক্লাবের পরের ম্যাচটি খেলতে পারবেন না।’
ফোনে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে এমএলএস কমিশনার ডন গারবার বলেছেন, মেসিকে নিষিদ্ধ করাটা ছিল ‘খুব খুব কঠিন।’
গারবার বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি জানি মেসি এমএলএসকে ভালোবাসেন। এমএলএস একদমই আলাদা লিগ। এমএলএস কী, কী করতে সক্ষম, সেসব বিশ্বকে দেখাতে মেসি বছরজুড়ে সাহায্য করছেন। আমার মনে হয় এটা গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে আমার কাছে—মেজর লিগ সকারের জন্য লিওনেল মেসির চেয়ে কেউ বেশি করেনি। সেটা শুধু মাঠের বাইরে নয়, মাঠের ভেতরেও। দর্শকেরা (তাঁর) সব ম্যাচই দেখেন। ইন্টার মায়ামির প্রতি তার অঙ্গীকারকে আমি সম্মান ও প্রশংসা করি।’
আরও পড়ুনট্রফি জয়ে শীর্ষ ১০ ফুটবল ক্লাব কারা১ ঘণ্টা আগেগারবার এরপর বলেছেন, ‘তার (এমএলএস অল-স্টার গেমে) না খেলার বিষয়টি আমি বুঝি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল-স্টার গেমে কোনো খেলোয়াড়ের অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচলিত নিয়ম আছে এবং সেটা কার্যকর করতে হয়েছে। এটা ছিল খুব খুব কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু আশা করি এটা মেসি এবং বাকিরা বুঝবেন এবং সম্মান করবেন। সে তার ক্লাব, সতীর্থ ও লিগের জন্য দিনের পর দিন (মাঠে) নেমেছে এবং তার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি।’
গত ৩০ এপ্রিল থেকে মায়ামির প্রতিটি ম্যাচেই ৯০ মিনিট করে খেলেছেন ৩৮ বছর বয়সী মেসি। গত ১৪ জুন থেকে খেলেছেন ৯ ম্যাচ, এর মধ্যে ৪ ম্যাচ খেলেছেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল মায়ামির ম্যাচে মেসিকে দেখা যায়নি। কিন্তু তারপর থেকে মায়ামির কোনো ম্যাচ মিস করেননি আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। আরেকটু পিছিয়ে হিসাব করলে গত ২ এপ্রিল থেকে মায়ামির খেলা ২৩টি ম্যাচের মধ্যে ২২ ম্যাচেই প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন মেসি। এর মধ্যে ৩৫ দিনের ব্যবধানে খেলেছেন ৯ ম্যাচ।
টানা ম্যাচ খেলায় ক্লান্ত মেসি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অল স ট র গ ম
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩