কুমিল্লায় হত্যাসহ ২৩ মামলার আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা
Published: 26th, July 2025 GMT
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ২৩ মামলার আসামি মামুন সম্রাট (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মামুন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার শোলাকান্দি গ্রামের মোশাররফ হোসেন ওরফে মকবুল মেম্বারের ছেলে। তিনি গৌরীপুর বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ঘটনার পর দাউদকান্দি মডেল থানা, দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, শুক্রবার রাতে মামুন সম্রাট চারজন নারীসহ কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে রিল্যাক্স পরিবহনের একটি বাসে নিজের টিকিট ছাড়া ওঠেন তিনি। বাসটি রাত ১১টার দিকে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তিনি ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে পাশের দোকান থেকে এক বোতল পানি কেনেন। বাসে ওঠার সময়ই ওত পেতে থাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত পেছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মামুন সম্রাটের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অপহরণসহ ২৩টি মামলা আছে। অনেকবার জেল খেটেছেন তিনি। তাঁর লাশ আজ শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামুনের মা-বাবা থানায় এসেছেন, হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। হত্যার কারণ জানার জন্য বাস কাউন্টারের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর মাথা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্রুতই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে বলে আশা করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মামুন সম্রাট গৌরীপুর এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিতেন। এসব কারণে তাঁর ওপর হামলা হতে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৩ মে রাতে গৌরীপুর বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে মামুন সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আবার এলাকায় ফিরে আসেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ উদক ন দ র এল ক এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]