দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে জগাখিচুড়ি চলছে: মির্জা ফখরুল
Published: 26th, July 2025 GMT
বাংলাদেশে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জগাখিচুড়ি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের হল রুমে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছে, যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন: আপনি দেখুন, খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বুঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক—ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যা-ই হোক, সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন, আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি, কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি… ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে। যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায়, তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজা কোনোমতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এ কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।”
বিএনপি কেন নির্বাচন চায়?
মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন জনগণ আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চাই, সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে?”
তিনি বলেন, “কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কি দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ-সরল কথা, আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।”
সংস্কার রাতারাতি হয় না
২০১৬ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন, যে ক’জন লোক, সংস্কার যারা করছেন, তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন আর সংস্কার হয়ে গেল, সেভাবে সংস্কার হয় না। সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে… ইটস আ কন্টিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে, যাতে করে সে ঘুষ না খায়।”
নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমাদের যে আমলাতন্ত্র এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা… ইটস আ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, সেই বিষয়গুলো করতে হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—জনগণের কাছে চলে যাওয়া। জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন, তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।”
দেশে ক্রান্তিকাল চলছে
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজ গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি, ট্র্যানজিশনাল পিরিয়ড, গণতন্ত্রে উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা।
জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দকে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এ সভায় জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র জনগণ র আম দ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ড্যাপ করা হয়েছে, বাতিল করতে হবে: স্থপতি ইনস্টিটিউট
কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ) রচনা করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। পরবর্তী সময়ে গণশুনানি উপেক্ষা করে এর প্রহসনমূলক সংশোধন করা হয়েছে বলেও মনে করে সংগঠনটি। তারা গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম—‘জনবৈরী ড্যাপ, বৈষম্যমূলক পরিকল্পনা: নিম্ন নাগরিক বাসযোগ্যতা ও বিপন্ন পরিবেশ’।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্রণীত ড্যাপ রাজধানী ঢাকার নাগরিক বাসযোগ্যতা ও পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। এর প্রমাণ, ড্যাপ প্রণয়নের পরে গত চার বছরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৮ থেকে ১৭১তম স্থানে নেমে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উর রশীদ, সম্পাদক (পেশা) এম ওয়াহিদ আসিফ, সহসভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি) নওয়াজীশ মাহবুব, সহসভাপতি (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনি ব্যত্যয়, প্রকাশিত তথ্যের অপর্যাপ্ততা, প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, পরিবেশ বিপর্যয় (কৃষিজমি বিনষ্ট ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট), ভবন নির্মাণের অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বৃদ্ধি, বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ, জনভোগান্তি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য অসংগতিনির্ভর এই ড্যাপ (২০২২-৩৫) বর্তমানে ভবন নির্মাণশিল্পে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ গেজেটেড হওয়ার আগপর্যন্ত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ছিল। সেই নিয়মে ঢাকা শহরের সব স্থানে রাস্তার প্রশস্থতার ওপর ভিত্তি করে একই পরিমাণ ক্ষেত্রফলের ভবন নির্মাণ করা যেত। ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকাকে আরও অভিজাত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে রায়েরবাজার, বাড্ডা, পুরান ঢাকার মতো এলাকাকে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বলেন, আইন হবে এমন, যা জনগণ মানতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু ড্যাপ এমন আইন, যা জনগণ ব্যত্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজউক তদারকি করতে পারে না, এর প্রমাণ হলো বছিলা। মানুষের প্রয়োজন আবাসস্থল। আইন কঠিন হলে জনগণ আইনের তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণ করবে। ধনীদের জন্য বেশি সুযোগ, আর গরিবের জন্য কঠিনতর আইন, মধ্যবিত্তের কোনো জায়গা থাকবে না। এভাবে জনবৈরী আইন প্রয়োগ করা হয়েছে ড্যাপে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সারা বাংলাদেশের সমস্যা। শুধু ঢাকা শহরকে বাঁচাতে গিয়ে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের নামে এলাকাভেদে জনঘনত্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেমন ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে পুরান ঢাকার জনঘনত্ব ৪৫০ ছিল। কিন্তু ড্যাপ ২০২২-৩৫ প্রস্তাবনায় ২০২৫ সালে এই জনঘনত্ব ৩৬৭ জনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে ২০২৫ সালে এসে ৮৩ জন কোথায় যাবে? ঢাকার জনগণ কি রোহিঙ্গাদের মতো বাস্তুহারা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা। এগুলো হলো: বর্তমান স্ট্রাকচার প্ল্যান ও তিন ধাপভিত্তিক মহাপরিকল্পনার সবশেষ তৃতীয় ধাপের গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাতিল করতে হবে। রাজউক ও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (জিডিএ) আইনের সঠিক ও যৌক্তিক বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল ও সহজলভ্য ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্টসহ সব দুর্যোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগসহনীয় একটি অংশগ্রহণমূলক ও হালনাগাদ মৌজাভিত্তিক ড্যাপ তৈরি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তা পর্যালোচনা ও পরিচালনা করা। বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীসহ পাশের গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকা নিয়ে অবিলম্বে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ সহনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন আধুনিক-আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিন ধাপভিত্তিক (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এই পরিকল্পনায় সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), শূন্য নির্গমনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির যথাযথ সংযোজন নিশ্চিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিফলন পাননি। তাই জনগণের দাবি ও অধিকার তুলে ধরতে আজ সংবাদ সম্মেলন করছেন। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের ঢাকা বাঁচাতে, বাসযোগ্য নগর গড়তে ও নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লাখো মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুনড্যাপ কেন আবাসনের জন্য চাপ১৪ অক্টোবর ২০২৪