টানা ২৬ বছর কারাভোগ, ৬০ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে ‘শিবির’ নাছির
Published: 28th, July 2025 GMT
খুন, অপহরণ, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলায় টানা ২৬ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার ১১ মাস পর বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ৬০ বছর বয়সী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘শিবির নাছির’। গত বৃহস্পতিবার কুলসুমা বেগমকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাছিরের বিয়ের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
নাছিরের বিরুদ্ধে জোড়া খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনের মামলা ছিল ৩৬টি। একে একে খালাস পান ৩১টি মামলায়। দুটিতে সাজা হলেও আগে কারাভোগে শেষ হয়ে যায়। আছে আর তিনটি মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলায় আগে থেকে জামিনে ছিলেন। শেষ মামলায় গত বছরের ১১ আগস্ট জামিন হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান নাছির। র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত নাছির একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘শিবির নাছির’ নামের পরিচিত হয়ে ওঠেন।
কারা সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কারাগারে ছিলেন নাছির। দীর্ঘ ২৬ বছর পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে ফটিকছড়ির তিনটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।
নাছিরের বড় বোন লিলি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারীর ছিপাতলী গ্রামের কুলসুমা বেগমের সঙ্গে তাঁর ভাই নাছিরের বিয়ে হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। মেয়েপক্ষ থেকে তাঁরা কোনো যৌতুক নেননি। এখন তাঁর ভাই সংসারী হয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চান।
আরও পড়ুন২৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ‘শিবির’ নাছির১১ আগস্ট ২০২৪আদালত সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রায় হয়। এতে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় খালাস পান নাছির। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর জমিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরির বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে। এভাবে ৩১টি মামলায় খালাস পান নাছির। নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে নাছিরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই খালাস পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুননাছিরের ভয় দেখিয়ে ‘বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতেন মায়েরা’০১ জুলাই ২০২২বিবাহিত জীবনে যাতে সুখী হতে পারেন, এ জন্য দোয়া চেয়েছেন নাছির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে চান তিনি।
‘সন্ত্রাসী’ নাছির উদ্দিন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরের (উত্তর) সভাপতি তানজীর হোসেন। তিনি বলেন, লোকজনের মুখে মুখে নাছিরের নামের সঙ্গে শিবির কথাটি জুড়ে যায়। তিনি হয়তো শিবিরের ভালো কাজকে সমর্থন করতেন। কিন্তু তিনি কখনো শিবিরের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে নুরুল আবছার (২৭) নামের এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় একদল মুখোশধারী ব্যক্তি। আজ বুধবার সকাল সাতটায় তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি ছাড়া পান।
উদ্ধারের পর পটিয়া থানা প্রাঙ্গণে অপহরণের শিকার নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তাঁর চাকরি চলে যায়। এরপর পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার সাহিত্য বিশারদ সড়কে মুরগির দোকান দেন। প্রতিদিনের মতো আজ সকালে দোকান খোলেন তিনি। এ সময় তিন থেকে চারজন মুখোশধারী লোক ধারালো অস্ত্রের মুখে তাঁকে ধরে অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা তাঁর পকেটে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে, পরে ১৭ লাখ এনে দিতে বলেন। তাঁকে চন্দ্র কালারপোল নামের নির্জন এলাকায় নিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে মারধরের পাশাপাশি ছুরিকাঘাতও করেন।
পটিয়া থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ চন্দ্র দে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত তাঁকে উদ্ধারের তৎপরতায় নামে। পরে চন্দ্র কালারপোল এলাকায় পুলিশ গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান জানান, ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।