রংপুরে নবজাতকের মৃত্যুর পর ‘স্বপ্ন’ হাসপাতাল নামের ক্লিনিকটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু দেড় মাসের মধ্যে সেই ‘স্বপ্ন’ হাসপাতাল হয়ে যায় ‘নিউ স্বপ্ন’। গতকাল সোমবার বিকেলে আবারও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে ধাপ এলাকার কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান সিভিল সার্জন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল। ধাপ শ্যামলী লেনের নিউ স্বপ্ন হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ২৬ জুলাই এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয় এবং নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। এর আগে ১৩ জুন এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ১৬ জুন এই হাসপাতালসহ তিনটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা ও অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দেওয়া হয়।

রংপুরের সিভিল সার্জন শাহিন সুলতানা বলেন, গত শনিবার পীরগাছা উপজেলার এক সন্তানসম্ভবা নারী প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০ শয্যার হাসপাতালে থাকার কথা ছিল ছয়জন চিকিৎসক, যার মধ্যে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেখানে কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। এ ছাড়া হাসপাতালে সিজারের জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশও নেই। এটি অবহেলাজনিত মৃত্যু। এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। আগে অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করার পর ‘নিউ স্বপ্ন’ নামে নতুন করে নিবন্ধনের আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। আগের মালিক রফিকুল ইসলামের পরিবর্তে এবার চেয়ারম্যান হিসেবে দেখানো হয়েছে তাঁর স্ত্রী সাহিবা জুননুরাইনকে।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, তিনি বিস্তারিত জানেন না। মালিকের মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি রফিকুল ইসলামের নম্বর দেন, তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান বলেন, ১৫ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিল। সে আবেদনের ভিত্তিতে তালা খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা মুচলেকা ভঙ্গ করেছে এবং আবারও একই ধরনের অপরাধ করেছে। এ কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অপারেশন থিয়েটার আবারও সিলগালা করা হয়েছে।

একই অপরাধ আবারও ঘটলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাত জাহান বলেন, তারা একবার মুচলেকা ভেঙেছে। এরপর আর নতুন মুচলেকা দিলেও অপারেশন থিয়েটার চালুর অনুমতি দেওয়া হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।

বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব‌্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম‌্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন‌্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।

বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম‌্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট

সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন

বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব‌্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব‌্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ‌্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।

এজন‌্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব‌্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।

আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন‌্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’

এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।

তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ‌্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন‌্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।

আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।

মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ‌্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ