ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এনসিপির দুই নেতার পদত্যাগ
Published: 2nd, August 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শরীয়তপুর জেলা সমন্বয় কমিটির দুই নেতা পদত্যাগ করেছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।
এই দুজন হলেন জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ডামুড্যা উপজেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী তারিকুল ইসলাম এবং জেলা কমিটির সদস্য পলাশ খান। তাঁরা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
এনসিপি সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির শরীয়তপুর জেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। ৩৩ সদস্যের এই কমিটিতে স্বাক্ষর করেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয় আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে। যুগ্ম সমন্বয়কারী করা হয় ৯ জনকে ও সদস্য রাখা হয় ২৩ জনকে। পদত্যাগকারী তারিকুল ইসলাম ও পলাশ খান যথাক্রমে কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও সদস্য ছিলেন।
তারিকুল ইসলাম নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি এনসিপির সব ধরনের দায়িত্ব ও কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। সবাই আমার পাশে ছিলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই।’
পলাশ খান তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির শরীয়তপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছি। এটি একটি আবেগঘন সিদ্ধান্ত। তবে সময় এসেছে কিছু বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার।’
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সেখানে সময় দিতে হয়। ব্যক্তিগত কারণে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছি। ব্যক্তিগত কারণ ব্যক্তিগতই থাকুক, তা বাইরে বলতে চাই না। এ মুহূর্তে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। যদিও এখনো লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিইনি, শিগগিরই তা দেব।’
এ বিষয়ে পলাশ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনসিপি আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি আবেগের জায়গা। কিন্তু জেলা কমিটি গঠনে কোনো আলোচনার সুযোগ রাখা হয়নি। দু-একজনের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। সেই আপত্তি থেকেই অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে এনসিপিতে থাকা না-থাকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’
জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের পদত্যাগের ঘোষণা দেখেছি। তবে এখনো দলীয় নিয়ম অনুযায়ী কোনো আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা পড়েনি। কেন তাঁরা পদত্যাগ করছেন, তা–ও আমাকে জানানো হয়নি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক ল ইসল ম সমন বয়ক র পল শ খ ন কম ট র সদস য এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’