২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড আয় করেছে অ্যাপল। জুন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির আয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। মূলত আইফোন ১৬ সিরিজের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি এসেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইফোন মডেল হলো আইফোন ১৬ সিরিজ। তিনি জানান, ২০২৩ সালে বাজারে আসা আইফোন ১৫ সিরিজের তুলনায় বিক্রি ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে আছে নতুন সিরিজটি। তৃতীয় প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে অ্যাপলের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। কুক বলেন, আইফোন থেকে রাজস্ব বেড়েছে, কারণ আইফোন ১৬ সিরিজ আগের বছরের আইফোন ১৫ সিরিজের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যমান ব্যবহারকারীরা নতুন মডেলে আপগ্রেড করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কুক আরও জানান, আইফোন ১৬, ১৬ প্লাস, ১৬ প্রো এবং ১৬ প্রো ম্যাক্স—এই চারটি মডেলই গ্রাহকদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছে। নতুন সুবিধা, উন্নত ক্যামেরা এবং নকশাগত পরিবর্তন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছে।

অ্যাপল চলতি প্রান্তিকে আরও একটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে। টিম কুক জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে প্রথম আইফোন বাজারে ছাড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০ কোটি আইফোন সরবরাহ করেছে অ্যাপল। আইফোন বিক্রি থেকে প্রাপ্ত ৪ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার রাজস্ব অ্যাপলের মোট আয় ৯ হাজার ৪০০ কোটির প্রায় অর্ধেক। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) বৃদ্ধির আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগেই নতুন আইফোন কিনে নিচ্ছেন।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন ট্যারিফ ইতিমধ্যে অ্যাপলের অতিরিক্ত ব্যয় বাড়িয়েছে। গত প্রান্তিকে এই খাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস, আগামী প্রান্তিকে এই ব্যয় ১১o কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য পল র জনপ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ