বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ পাওয়া যায়, শিক্ষা-গবেষণায় নয়
Published: 2nd, August 2025 GMT
পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে শিক্ষা খাতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বেশি বেশি বরাদ্দ দেওয়ার যে প্রবণতা, তা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা ও গবেষণায় এখনো বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবন মিলনায়তনে ‘অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম?’ শীর্ষক সেমিনারে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ঠিকাদার পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চিত্রটা আমরা গত সরকারের সময়ে দেখেছিলাম, সেটার সঙ্গে এটার কী পার্থক্য তৈরি হলো—এটা কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা জানি না।’
এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য বরাদ্দ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের বড় বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাভোগী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নড়াচড়া শুরু হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আনু মুহাম্মদ বলেন, এর সঙ্গে সঙ্গে চলে নানা ধরনের তদবির, পদের জন্য সুপারিশ। এই ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সেটি বড় ধরনের বিপদের জায়গা তৈরি করবে।
সেমিনারে ’৭৩-এর অধ্যাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে অধ্যাদেশ সংশোধন দরকার বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তবে শুধু অধ্যাদেশের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খারাপ এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলেও জানান তিনি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোতে তো স্বায়ত্তশাসন নেই। সেগুলোর মান যে ভালো, শিক্ষকেরা সেখানে যে কাজ করতে পারছেন, এটাও তো বলা যায় না। কাজেই এটা অধ্যাদেশের ব্যাপার নয়। এটা রাষ্ট্র বা সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে কী বানাতে চায়, সেটার ফলাফল।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরিচালিত হবে, তার একটা অভিন্ন কাঠামোর সূচনা অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া কীভাবে স্বচ্ছ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত করা যায়, সেটার একটা সূচনা করতে পারে।
মৌলিক পরিবর্তনের জায়গায় শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন গুরুত্ব পেল না, সেই প্রশ্নও তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, উপাচার্য, সহ–উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে যে দলের প্রভাব বেশি, সেই দলের লোক নিয়োগ পেল—বিএনপি কিংবা জামায়াতের। পুরোনো এই কাঠামো অব্যাহত থাকলেও সরকার কেন এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়নি?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেটা শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। জ্ঞান, শিক্ষা এগুলোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ক্ষেত্রেও বর্তমান সরকার আগের সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে ইঙ্গিত দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, সরকারের জ্ঞান সৃষ্টি বা গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এটা গত সরকারের সময় দেখা যায়নি, বর্তমান সরকারের সময়ও এটির কোনো নমুনা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের একটি বড় অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অত্যাচার-নির্যাতনের যে কারখানা বানানো হয়েছিল, সেটা বন্ধ হয়েছে। তবে সেই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, নতুন গোষ্ঠী তৈরি হওয়ার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে এবং কোনো কোনো জায়গায় তার চর্চাও হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি সেই গোষ্ঠীর পছন্দমতো কথা না বলে, তখন তাঁদের ওপর আক্রমণ, সাইবার বুলিং, ট্যাগিং করার মতো বিষয়গুলো ঘটছে।
এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু, বেগম রোকেয়া, তাজউদ্দীন আহমদদের মতো মানুষের নাম বাদ দিতে চাওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এই নামগুলো যাঁরা বাদ দিতে পারেন, তাঁরা কী করে জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার একটা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য তানজীমউদ্দিন খান। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাস্তবতা তুলে ধরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুসমিন আফসানা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক কাজী ফরিদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া প্রমুখ।
আরও পড়ুন’৭৩-এর অধ্যাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কলুষিত করেছে: শিক্ষা উপদেষ্টা৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবক ঠ ম সরক র র বর দ দ র জন য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
কত বছর বয়সের আগে শিশুর হাতে স্মার্টফোন দেওয়া উচিত না
শৈশব-কৈশোর দুরন্তপনার আরেক নাম। মাঠ, শহরের অলিগলি, বাড়ির উঠান, ছাদ কিংবা বারান্দায় নানা খেলাধুলায় সময়টা পার করার কথা। কিন্তু দিন দিন স্মার্টফোনের দুনিয়ায় বন্দী হয়ে পড়ছে বেশির ভাগ শিশুর শৈশব। হয়তো খাওয়ানোর জন্য অথবা ব্যস্ত রাখার জন্য ছোট্ট শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দিয়েছেন অভিভাবক, তারপর ধীরে ধীরে সেই স্মার্টফোনের দুনিয়াতেই কখন যেন আটকা পড়েছে শিশু। জার্নাল অব দ্য হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাবিলিটিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩ বছর বয়সের আগে স্মার্টফোন ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে আত্মহত্যার চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা, মূল্যবোধহীনতা এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। ছেলেশিশুদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে যা বেশি মাত্রায় দেখা গেছে।