কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড়োজাহাজের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কা
Published: 2nd, August 2025 GMT
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড্ডয়নের আগমুহূর্তে উড়োজাহাজের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ফ্লাইটি ছাড়তে এক ঘণ্টা দেরি হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকাগামী বেসরকারি এয়ার এস্ট্রার উড়োজাহাজটিতে যাত্রী ছিলেন ৭২ জন। ধাক্কা লাগার ঘটনার কুকুরটি মারা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও নিরাপত্তকর্মীরা মৃত কুকুরটি সরিয়ে নেয়। রাত আটটার দিকে উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
উড়োজাহাজের একজন যাত্রী জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে যাত্রীরা বিমানে ওঠেন। এরপর উড়োজাহাজটি টার্মিনাল থেকে রানওয়ের দিকে যেতে থাকে। উড্ডয়নের আগমুহূর্তে উড়োজাহাজের সঙ্গে কিছু একটার ধাক্কা অনুভব করেন তিনি। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে উড়োজাহাজটি থামান পাইলট।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঘটনার পর পাইলটসহ নিরাপত্তাকর্মীরা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেন, কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে বিমানের। এরপর ফ্লাইটটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর যান্ত্রিক ত্রুটি না পেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, উড়োজাহাজের ধাক্কায় কুকুরটি মারা গেছে। তবে উড়োজাহাজের তেমন ক্ষতি হয়নি। যাত্রীরাও নিরাপদে ছিলেন। কুকুরটি সরিয়ে উজোজাহাজটি নিরাপদে উড্ডয়ন করে এবং স্বাভাবিক গতিতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
গোলাম মর্তুজা বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে রানওয়ের উত্তর পাশের কিছু অংশে অবকাঠাগত উন্নয়নকাজ বাকি আছে। বৃষ্টির কারণে কাজগুলো শেষ করা যাচ্ছে না। দিনের বেলায় উত্তরাংশের খোলা এলাকা দিয়ে কুকুর ঢোকার সুযোগ নেই। তবে সন্ধ্যার পর রানওয়েকে কিছু কুকুর দেখা যায়। কম আলোতে রানওয়েতে কুকুর ঠিকমতো দেখা যায় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র নওয়
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’