সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটিতে সম্প্রতি মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের হার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশটিতে এক দিনে এত বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলেছে, গত শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান এলাকায় সোমালিয়ার চারজন ও ইথিওপিয়ার তিনজন নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সৌদিতে হাশিশ (গাঁজার মতো একধরনের মাদকদ্রব্য) চোরাচালানের অভিযোগ ছিল।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া অন্য ব্যক্তি হলেন সৌদি আরবের নাগরিক। মাকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ ছিল।

এই হারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে থাকলে চলতি বছর দেশটিতে ২০২৪ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর দেশটিতে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ কারণেই মূলত সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এ অভিযানের সময় যাদের আটক করা হয়েছিল, এখন বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।

প্রায় তিন বছর বন্ধ রাখার পর ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আবার শুরু করে সৌদি আরব।

সৌদি আরবে ২০২২ সালে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ধারাবাহিকতা সৌদি আরবের ‘উন্মুক্ত ও সহনশীল সমাজ’ গঠনের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। অথচ এটাই ছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘোষিত ভিশন ২০৩০ সংস্কার কর্মসূচির মূল ভিত্তি।

তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ড অপরিহার্য এবং সব ধরনের আপিলপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই এই ধরনের সাজা কার্যকর করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত অপর ধ দ শট ত

এছাড়াও পড়ুন:

তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের দিনমজুর পারভিন আক্তার (৪৭)। তিনি এই বাজারে আলুর একটি আড়তে কাজ করেন। বসে বসে আলু বাছাই করা তাঁর কাজ। প্রতিদিন পান ৬০০ টাকা। সংসারে অসুস্থ স্বামী। তবে তিনি মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। স্বামীর আয় নিয়মিত নয়। তাঁদের মেয়ে ও এক ছেলে সঙ্গে থাকে। মেয়েটির আবার দুটি সন্তান আছে। পুরো পরিবারটি পারভিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

গত এপ্রিল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিজে অন্তত দুই বার এবং মেয়ে ও তাঁর ছেলেটি তিন বার করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পারভিন কাজে গেলে টাকা পান, না গেলে নেই। এভাবে অসুখের কারণে এ বছর ১১ দিন কাজে যেতে পারেননি, স্মরণ করে বলেন পারভিন। কারওয়ানবাজারে কাজের যে পরিবেশ, সেখানে গরমে ঘামতে হয়। কয়েক বছর ধরে গরমটা অসহনীয় বলে মনে হয় তাঁর কাছে।

পারভিন বলছিলেন, ‘ঘাম শরীরে বইসা অসুখ বাধায়। গরম এত বাড়ছে যে কওনের কথা নাই।’

পারভিনের মতো এমন অসংখ্য মানুষের এভাবেই গরমের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। এই তো গত বছরেই (২০২৪) ২১ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম ‘অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ।’ এতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সঙ্গে আছে ২০২৪ সালে করা একটি বড় জরিপ, যেখানে দুই ধাপে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়।

১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১°ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ সময় গরমের অনুভূতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৫°ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সময়ে ঢাকার গরম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার গরম জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘ কাশি, শ্বাসকষ্ট আর প্রচণ্ড অবসাদ—এসব রোগ বেড়েছে।

অধ্যাপক আবদুস সালাম তাঁর একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দূষণের সম্পর্ক আছে। তিনি বলছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কয়েকটি ক্ষতিকর গ্যাস। এর মধ্যে আছে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই–অক্সাইড ও মিথেন।

গরমের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ২০২৪ সালে গরমের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কর্মদিবস (আড়াই কোটি দিন) নষ্ট হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার এবং প্রতিবেদনের সহলেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে সরাসরি উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও ঘটছে। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর বাস্তব ঝুঁকির মুখে।’

আরও পড়ুনতাপমাত্রা এত বাড়ছে কেন?২১ এপ্রিল ২০২৪প্রখর রোদে ছাতা মাথায় মাঠের মধ্যে ধান শুকাচ্ছেন এক গৃহবধূ। কাইমউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, নর্থ চ্যানেল, ফরিদপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে
  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে