মানিকগঞ্জে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা। 

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে বাড়তি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে আগামী দিনগুলোতে সবজির বাজার আরো অস্থিতিশীল হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবাউর আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা, ৬০ টাকার কাকড়ল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে, ৫৫টাকার বরবটি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

পূবালী ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ভারপ্রাপ্ত সিইও নিয়োগ

৭০ টাকা কেজির ঢেঁড়স এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। কাঁচা মরিচ ১৭০ থেকে দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা কেজি, ৭০টাকার গোল বেগুন এখন ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শিম, মুলা, করলা, লাউসহ অন্যান্য সবজির দামেও একই ধরনের দাম বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

তবে, বাজারে তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, কচুরমুখী ও লেবু। পেঁপে কেজিপ্রতি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখীও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

ভাটবাউর আড়তের ব্যবসায়ী আবদুল আলিম বলেন, “টানা বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা আড়তে পর্যাপ্ত সবজি তুলতে পারছেন না। সরবরাহ কমে গেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই দামে প্রভাব পড়ছে।”

জাগির আড়তের সবজি বিক্রিতা শাহীন মিয়া বলেন, “আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়াই না। বাজারে যদি সরবরাহ কমে যায়, তখনই পাইকারি দরে বৃদ্ধি হয়। ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে যায়।”

বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী রোকসানা আক্তার বলেন, “এক সপ্তাহ আগে যে সবজি ৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটাই ৭০–৮০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। সংসারের বাজেট সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

অপর ক্রেতা অটোচালক লিয়াকত মিয়া বলেন, “আয় একই আছে, কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। সবজি কিনতেই বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। এখন কম কিনে চলতে হচ্ছে।”

সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে সবজি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যে খরচ গেছে, তা ওঠানো এখন কঠিন।”

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড.

রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজির ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে চাষ করা ফসল বাজারে আসবে। তখন বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কিছুটা কমে আসবে।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ সরবর হ সবজ র

এছাড়াও পড়ুন:

৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।

মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।

সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়ন

টিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।

উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।

বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান

অবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’

জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।

চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’  

হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে