মালদ্বীপ মানি অথরিটি (এমএমএ) প্রকাশিত ২০২৪ সালের পেমেন্টস বুলেটিন অনুযায়ী, গত বছর দেশটি থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা মোট ১৪৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিজ দেশে পাঠিয়েছেন। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বহির্মুখী রেমিট্যান্স লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৫.৫ মিলিয়ন ডলারে, এক বছরের ব্যবধানে যার প্রবৃদ্ধি ১২১ শতাংশ।

শীর্ষ গন্তব্য: বাংলাদেশের প্রাধান্য
এই প্রবাহে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে মালদ্বীপ থেকে ১১২ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বাংলাদেশে গেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৭২ শতাংশ। তুলনায় নেপাল পেয়েছে ৫ শতাংশ, ফিলিপাইন ও মিশর ৪ শতাংশ করে, আর ভারত পেয়েছে মাত্র ২ শতাংশ।

এ প্রবণতা মালদ্বীপে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যাগত আধিপত্যের প্রতিফলন। ধারণা করা হয়, দেশটিতে বর্তমানে ৮০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কর্মরত, যা মোট বিদেশি শ্রমশক্তির মধ্যে সর্বাধিক।

অতীত প্রবণতা
গত এক দশকে মালদ্বীপে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। শুরুতে নির্মাণশিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গৃহকর্মী খাতে বেশি থাকলেও এখন তারা আতিথেয়তা ও সেবাখাতেও বিস্তৃত। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০২০-২১ সালে মহামারির কারণে এ প্রবাহে সাময়িক পতন ঘটে। পরবর্তীতে দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়ে বর্তমানে তা রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে।

অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মালদ্বীপ থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ কয়েকটি, যেমন, বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, মহামারির পর অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বাড়া এবং শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোয় উন্নতি।

তাদের ভাষায়, “মালদ্বীপ একটি ছোট অর্থনীতি হলেও সেখান থেকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রাপ্তি আশ্চর্যজনকভাবে বেশি। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের শ্রমিকরা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলিতেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্য
বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৬–৭ শতাংশ প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। মালদ্বীপ থেকে আসা রেমিট্যান্স শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাচ্ছে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগ ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রাখছে।

তবে বিশিষ্টজনেরা মনে করিয়ে দেন-শ্রমিকদের দক্ষতা, বৈধ কাগজপত্র এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত না হলে এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নাও হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সাংবাদিক মাহামুদুল বলেন, “দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি: নির্মাণশ্রমিক ছাড়াও হোটেল, পর্যটন ও প্রযুক্তিখাতে দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।”

প্রাতিষ্ঠানিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধি: হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে হবে। এজন্য মালদ্বীপে বাংলাদেশের সরকারি কোনো ব্যাংকের শাখা খোলা জরুরি।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা
মালদ্বীপ বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “দুই দেশের মধ্যে শ্রম চুক্তি আরও সুদৃঢ় হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নত হবে।”

মালদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সিআইপি সোহেল রানা মন্তব্য করেন, “মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কেবল অর্থনৈতিক সূচক নয়; বরং এটি বৈদেশিক মুদ্রার যোগান, শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এবং প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়, তবে এই রেমিট্যান্স প্রবাহ আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।”

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স প রব হ

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে