ডুমুরিয়ার জলাবদ্ধ ৪০ গ্রামে দুঃসহ জীবন
Published: 29th, August 2025 GMT
ঘরে-বাইরে থই থই করছে পানি। কোথাও যেতে হলে একমাত্র ভরসা নৌকা। শুকনো জায়গার দেখা মিলছে না। দুর্বিসহ জীবন কাটছে পানিবন্দি মানুষদের। তাদের না আছে রান্নার জায়গা, না আছে ঘুমানোর জায়গা। সবই পানির নিচে। এমনকি নৌকায় করে বিলের মধ্যে গিয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হচ্ছে তাদের। নিজেদের যেন মনে হচ্ছে জলজ প্রাণী। এ দুর্দশা নিরসনের ব্যবস্থা করার যেন কেউ নেই।
এটি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার জলাবদ্ধতার এলাকার চিত্র। এভাবেই পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
টানা প্রায় দুই মাস পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ডুমুরিয়ার মানুষ। শৈলমারী রেগুলেটরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করলেও পানি কমেনি। বরং, ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি, মাছের ঘের, সবজিক্ষেত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই পানির নিচে। জলাবদ্ধতার কারণে কাজ করতে না পারায় অনেক পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েছে। সরকারিভাবে জিআর চাল বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া, মাগুরাঘোনা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। জলমগ্ন অবস্থায় অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। এ বছর ১০ জুলাই ভারী বৃষ্টির পর থেকে জলাবদ্ধতা শুরু হয়।
পানিবন্দি গ্রামগুলো হলো— মুজারঘুটা, বারানসি, সাড়াভিটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, দেড়লি, বশিরাবাদ, আন্দুলিয়া, কোমরাইল, চেচুড়ি, কাটেঙ্গা, টোলনা, বরুনা, গজেন্দ্রপুর, রুপরামপুর, রামকৃষ্ণপুর, শান্তিনগর, ঘোনা, বিলপাটিয়ালা, মাধবকাটি, মান্দ্রা, ময়নাপুর, বিলসিংগা, রানাই, পাঁচপোতা, ঘোষড়া, বাদুড়িয়া, আলাদিপুর, আটলিয়া, বয়ারশিং, আধারমানিক, খড়িয়া, কোমলপুর, গুটুদিয়া, পাটকেলপোতা, মির্জাপুর, হাজিডাঙ্গা, গোলনা, খলসী, সাজিয়াড়া ও আরাজি ডুমুরিয়া।
পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় তিন বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ বছর আগাম বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতাও আগে দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দি বারানসি গ্রামের চন্দ্রকান্ত মণ্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পানিবন্দি মানুষের দুঃখের সীমা নেই। প্রায় দুই মাস পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্বিসহ জীবন কাটছে। কিন্তু, কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। রাস্তায় হাটুপানি, উঠোনে কোমর পানি; রান্নার জায়গা নেই, জ্বালানি কাঠও নেই। এক সকালের রান্না পরের দিন সকাল পর্যন্ত খেতে হচ্ছে। নৌকা-ডিঙিতে চড়ে বিলের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে। মেঘ দেখলেই আসে ভয়, না জানি এবার কী হয়।
সাজিয়াড়া আবাসনের হালিমা বেগম জানান, তাদের ঘরের মধ্যে কোমরপানি। মাচা করে থাকতে হচ্ছে তাদের। আবাসনের ৫৮টি ঘরের সবই পানির নিচে। দুই দিন পরপর রান্না হয়। বেশিরভাগ সময় শুকনো খাবার খেতে হয়। উপজেলা প্রশাসন কয়েকদিন আগে চাল-ডাল-তেল দিয়েছে। তাদের খাবারের চেয়ে থাকার জায়গা আগে দরকার। পচা পানির দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত সাপ-পোকার উপদ্রব বেড়ে গেছে আবাসনে।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোজিত বালা ও রংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সমরেশ মণ্ডল জানিয়েছেন, শৈলমারী ১০ ভেন্ট রেগুলেটর দিয়ে বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হওয়ার কারণে শৈলমারী গেট দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সাব-মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলেও আশানুরূপ পানি বের হচ্ছে না। এ বছর বৃষ্টির পরিমান অনেক। তাই, ক্রমন্বয় বাড়ছে পানি। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ জানিয়েছেন, প্লাবিত অঞ্চলের মানুষের মাঝে ৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু, পানিবন্দি মানুষরা ত্রাণ চাচ্ছেন না। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণে প্রায় ১০০ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, চিচিঙা, ঝিঙ্গা, শশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯ কোটি টাকার সবজি নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন জানিয়েছেন, ডুমুরিয়ায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে চেষ্টা চালাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য। পানি নিষ্কাশনে খালগুলো উন্মুক্ত করা হচ্ছে। সব গেট দিয়ে পানি বের করা চেষ্টা চলছে। কালিঘাট স্লুইস গেটের কপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ময়ুর নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। খুব শিগগির পানিবন্দি মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য শৈলমারী গেটের মুখ থেকে শুরু করে আপার সালতা পর্যন্ত জরুরিভাবে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দুটি ভাসমান ভেকু ও দুটি লংবুম ভেকু দিয়ে খননের কাজ চলছে। আশা করি, দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে। গত ২২ আগস্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকার নদী ড্রেজিং, ২৬টি খাল পুনঃখননসহ পাঁচটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন প্রকল্প অনুমোদনের পথে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত প ন বন দ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত