স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, জরুরি মুহূর্তে নির্ভরযোগ্য সহায়ক সরঞ্জামও। দুর্ঘটনা বা বিপদের সময় ব্যবহারকারীরা ফোনের মাধ্যমে যেমন দ্রুত প্রিয়জনদের খবর দিতে পারেন, তেমনি সরাসরি জরুরি সেবায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এরই মধ্যে ‘ইমার্জেন্সি এসওএস লাইভ ভিডিও’–সুবিধা চালু করেছে অ্যাপল। গুগলও তাদের পিক্সেল ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ, সেফটি চেক ও সংকটকালীন সতর্ক বার্তা পাঠানোর মতো সুবিধা চালু করেছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে আইফোনের মতোই জরুরি সেবায় লাইভ ভিডিও পাঠানোর সুবিধা।

গত বছর ইমার্জেন্সি এসওএস লাইভ ভিডিও–সুবিধা চালু করে অ্যাপল। এ সুবিধার মাধ্যমে জরুরি সেবাকর্মীরা প্রয়োজনে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির আইফোনের ক্যামেরা চালু করে ঘটনাস্থলের সরাসরি ভিডিও বা ছবি দেখতে পারেন। ব্যবহারকারীর পক্ষে এসব ভিডিও বা ছবি সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলেও জরুরি সেবাকর্মীরা সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড অথরিটি জানিয়েছে, গুগল প্লে সার্ভিসের সর্বশেষ বেটা সংস্করণে সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন কোড শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘শেয়ার লাইভ ভিডিও’ ও ‘ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস উইল ইউজ ইয়োর ক্যামেরা টু ভিউ দিস ইমার্জেন্সি।’ এতে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরাও শিগগির জরুরি সেবার সঙ্গে সরাসরি লাইভ ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ পাবেন।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে জরুরি মুহূর্তে লাইভ ভিডিও–সুবিধা চালুর বিষয়ে এখনো গুগলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এই সুবিধা সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে চালু হবে, না শুধু গুগলের পিক্সেল ফোনে সীমাবদ্ধ থাকবে, সেটিও পরিষ্কার নয়।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে গুগলের পিক্সেল ফোনে সীমিত পর্যায়ে জরুরি ভিডিও ধারণের সুবিধা চালু রয়েছে। এই সুবিধায় সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করার পর ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ভিডিওর লিংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত জরুরি নম্বরে পাঠানো যায়। তবে অ্যাপলের মতো সরাসরি জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারেন না।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ