প্রযুক্তির এই যুগে হাতে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট থাকলে গুগল ম্যাপ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় যেকোনো জায়গায়। প্রযুক্তির সহায়তায় আজকাল তাই পথচলা দারুণ সহজ হয়ে গেছে। কারও সাহায্যের তেমন প্রয়োজনই পড়ে না।

তবে প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক, এর ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। না হলে আপনাকেও হয়তো সোজা খালে গিয়ে পড়তে হবে।

যেমনটা হয়েছে ভিক্টোরিয়া গুজেনদার বেলায়। পোল্যান্ডের এই তরুণী বেড়াতে গিয়েছিলেন ইতালির ভেনিসে। সেখানে মুঠোফোনের স্ক্রিনে গুগল ম্যাপ দেখতে দেখতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলেন। ধাপে ধাপে নামতে নামতে শেওলায় ঢাকা একটি সিঁড়িতে পা রেখে পিছলে গিয়ে তিনি খালে পড়ে যান।

নিজের এই অপ্রত্যাশিত পতনের ভিডিও গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওতে লেখা ওঠে, যখন গুগল ম্যাপ বলবে ‘সোজা যান’, কিন্তু আপনি ভেনিসে। সতর্ক থাকুন।

ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যায় ভিক্টোরিয়া বোকা বোকা চেহারা নিয়ে পা মুছছেন। তাঁর একটি ঊরুতে খানিকটা কেটে গেছে।

এই ভিডিওর নিচে কেউ কেউ হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করেছেন। কেউ তরুণীকে বিদ্রূপ করেছেন।

একজন লেখেন, ‘সিঁড়ি বেয়ে নিচে পানির দিকে নামার সময় আপনি কী ঘটবে বলে ভেবেছিলেন?’

অন্য একজন লেখেন, ‘অন্ধভাবে জিপিএস অনুসরণ করা বন্ধ করুন, চারপাশ দেখুন, নিজের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করুন।’

আরেকজন খানিকটা সহানুভূতির সুরে লেখেন, ‘শুনুন সবাই, তিনি নিশ্চয়ই পানির ওপর সিঁড়ির শেষ ধাপে থামতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে (পিছলে) পড়ে যান। তিনি সম্ভবত সুন্দর একটি ভিডিও করতে চেয়েছিলেন, আর পড়ে গিয়ে খালের ধার ঘেঁষে থাকা শামুকে লেগে পা কেটে ফেলেছেন। বেচারি, তবে এটা হাস্যকরও বটে।’

কেউ কেউ ভেনিসে পর্যটকেরা প্রায়ই এমন পিছলে পড়েন বলে মন্তব্য করেন।

ভেনিসের অদ্বিতীয় স্থাপনা এবং সেগুলোর বিন্যাস এমনই যে সেখানে গুগল ম্যাপ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই প্রায়ই পর্যটকদের অপ্রত্যাশিত কাণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ গল ম য প

এছাড়াও পড়ুন:

ভাত দেওয়ার মুরোদ না থাকা গোঁসাইয়ের কিল কেন শিক্ষকের পিঠে

দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যায়, ছেঁড়া শার্ট পরা একজন মানুষকে হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাঁদের আচরণ দেখে মনে হতে পারে, তাঁরা হয়তো কোনো ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছেন।

অথচ বাস্তবতা হলো, যাঁকে এভাবে টেনে নেওয়া হচ্ছে, তিনি একজন শিক্ষক। তাঁর ‘অপরাধ’ নিজের সামান্য বেতনের সঙ্গে কিছু ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা যোগ করার দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ানো।

আর সেই ‘অপরাধে’ই একজন গরিব শিক্ষককে লাঠিপেটা করা হলো, পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হলো, হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলা হলো।

গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর মানুষ নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। হয়তো সেই স্বপ্ন দেখা মানুষদের একজন ছিলেন এই শিক্ষক।

আরও পড়ুনএমপিও শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়ে আর কত ‘তামাশা’ ১১ অক্টোবর ২০২৫

জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল মানুষের সেই আশা আকাঙ্ক্ষার কথা শোনা, পূরণ করতে পারুক বা না পারুক অন্তত আশ্বস্ত করা। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।

অথচ ঘটছে ঠিক উল্টোটা। দিন যত যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে তাদের সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিক্ষকদের মনোবল ভাঙা। একদিকে বলা হচ্ছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, অন্যদিকে সেই মেরুদণ্ডেই লাঠি চালানো হচ্ছে।

এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষকেরা ন্যায্য দাবি তুললেই তাঁদের ‘শিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষিতদের বেতন বাড়ানোর মতো অর্থ সরকারের নেই; কিন্তু সাউন্ড গ্রেনেড আছে। ভাতা বাড়ানোর সক্ষমতা নেই; কিন্তু জলকামান চালানোর বাজেট আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা নতুন নয়, অন্তত তিনটি ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ অক্টোবর এমপিওভুক্তির দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে আন্দোলন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা। সেখানে তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করা হয়, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়।

শিক্ষকদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার শুধু তাঁদের অধিকার নয়, রাষ্ট্রের আত্মসম্মানেরও প্রশ্ন। এখনই সময়, সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংবেদনশীলতার চর্চা শুরু করার। কারণ, যাঁরা জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের ভাঙলে রাষ্ট্র কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেন ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা; তাঁদের ওপরও চালানো হয় লাঠিপেটা, ছোড়া হয় সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান।

১০ ফেব্রুয়ারি ‘সুপারিশপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দ তৃতীয় ধাপ (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ)’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করলে তাঁদের ওপরও একইভাবে লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।

সর্বশেষ ১২ অক্টোবর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সরাতে গিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এতে কয়েকজন আহত হন এবং কয়েকজনকে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তোলে।

বাংলাদেশ এখন এক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সময় পার করছে। এই সময়টা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনের নয়; বরং রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণেরও সময়। আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নির্ভর করছে আজ কাদের কথা শোনা হচ্ছে, আর কাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে তার ওপর।

গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর স্পষ্ট হচ্ছে, শুধু সরকারের রূপ বদলেছে, রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি। সংস্কারের নামে দিস্তা দিস্তা কাগজে সুপারিশমালা লেখা হচ্ছে, কিন্তু কৌশলের রং আগের মতোই: দাবি তুললেই লাঠি, প্রতিবাদ করলেই জলকামান, কথা বললেই ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’।

আরও পড়ুননন-এমপিও শিক্ষক: একুশ শতকের শ্রমদাস!১২ ডিসেম্বর ২০১৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকা ও পরবর্তী সময়ে বিরূপ পরিস্থিতির এক বছর না যেতেই পুলিশ আবারও পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে। বলপ্রয়োগ ছাড়া সংকট মোকাবিলার কোনো প্রয়াস চোখে পড়ে না। সামাজিক মনস্তত্ত্ব বা সংলাপনির্ভর শান্তি-কৌশলের কোনো প্রয়োগও দেখা যায় না। শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেয়ে তারা বলপ্রয়োগেই বেশি অভ্যস্ত। কখনো কখনো মনে হয়, প্রতিটি প্রতিবাদ যেন যুদ্ধ, আর প্রতিটি আন্দোলনকারী যেন শত্রু।

সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে—প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার আছে। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন—দুটিই বলছে, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ অপরাধ।

কিন্তু বাস্তবে আন্দোলনরত মানুষদের ওপর পুলিশের জলকামান, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার থামছে না। নাগরিকের ওপর রাষ্ট্রের এই মারমুখী আচরণ পুরোনো বন্দোবস্তের স্মৃতি জাগায়।

ফিরে আসি শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রসঙ্গে। মর্যাদার দিক থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকেরা সমাজে নিচের সারিতে অবস্থান করেন, বেতন-ভাতার দিক থেকেও তাঁদের অবস্থা শোচনীয়।

আরও পড়ুনবেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের ভাগ্য ৩২ বছরেও বদল হলো না ১২ মে ২০২৪

বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থা আরও করুণ। তবু তাঁদের হাতেই জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের ছাঁচ। অথচ তাঁরাই যখন ন্যায্য প্রাপ্য দাবি করেন, তখন রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া যেন সেই স্বামীর মতো—যিনি নিজের আয়ে স্ত্রীকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারেন না, অথচ প্লেটে খাবার কম পড়লে বউকেই মারধর করেন।

এই বাস্তবতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতার নয়; এটি নৈতিক দেউলিয়াত্বেরও প্রতিচ্ছবি। একটি জাতির পতন কখন হয়? যখন কলম থাকে নত, আর অস্ত্রের ঝনঝনানির শব্দ থাকে ‘ঊর্ধ্বে’। শিক্ষকদের ওপর রাষ্ট্রের এমন আচরণের পর প্রশ্নটা আবারও ফিরে আসে—যাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁদের ভাঙছি কেন?

শিক্ষকদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার শুধু তাঁদের অধিকার নয়, রাষ্ট্রের আত্মসম্মানেরও প্রশ্ন। এখনই সময়, সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংবেদনশীলতার চর্চা শুরু করার। কারণ, যাঁরা জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের ভাঙলে রাষ্ট্র কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

সৈয়দ রিফাত মোসলেম প্রথম আলোর প্রতিবেদক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব
  • ‘৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান’
  • শ্রীনগরে চার যুবকের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল
  • আলীকদম সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের নাগরিক নিহত
  • হবিগঞ্জে জামায়াত নেতা মহিবুর হত্যা মামলায় একজনের আমৃত্যু ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
  • অ্যালার্ম বন্ধ করে শাহেদ ঘুমিয়ে পড়ে
  • গাজা শান্তি সম্মেলনে মেলেনির সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প
  • ভাত দেওয়ার মুরোদ না থাকা গোঁসাইয়ের কিল কেন শিক্ষকের পিঠে