শাহিনুর রহমান ওরফে সুমন (৪৮) ও সাদিকুর রহমান (৪৫)—দুই ভাই। তাঁরা একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বাড়ি রাজশাহী নগরের কেশবপুর ভেড়ীপাড়া এলাকায়। ঠিকানা পাল্টে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। নিজেদের নামও পরিবর্তন করেছেন। নতুন নাম-ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্টও করেছেন। এবার শুধু উড়ে যাওয়া বাকি। এমন সময় খবর পায় র‌্যাব-৫। বুধবার সকালে নগরের শাহ মখদুম থানার চকপাড়া বড় বনগ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন শফিকুল ইসলাম নামে পাবনার একজন ট্রাকচালক। মামলায় তাঁকে (চালকের) গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যাচেষ্টা ও তাঁর সহকারী মো.

আনজুকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজা এড়াতে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে দুই যুবক এসে পাবনার দাসুড়িয়ায় কালো পাথর নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকচালক শফিকুল ইসলামের ট্রাকটি ভাড়া করেন। গাড়ির ভাড়া মেটানো হয় ৬ হাজার ৩০০ টাকা। পথিমধ্যে আরও ১০০ বস্তা সিমেন্ট তোলার কথা হয়। কিছু দূর এসে তাঁদের সঙ্গে আরও একজন গাড়িতে ওঠেন। তাঁদের কথাবার্তায় একজনের নাম সুমন বলে জানতে পারেন চালক। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁরা দুজন নারী ও মুখে দাড়িওয়ালা ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন। সুমন জানান, বয়স্ক ব্যক্তিটি তাঁর বাবা, দুই নারীর একজন তাঁর মা ও অন্যজন তাঁর বোন। তাঁরা রাজশাহীতে যাবেন। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এসে তাঁরা পাশের এক বাড়িতে নেমে কী যেন সলাপরামর্শ করেন। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়ার মোড়ে ট্রাক থামিয়ে তাঁরা পেপসি কেনেন। তাঁকে খেতে দিলে সন্দেহবশত তিনি সামান্য একটু খান। এরপর ফাঁকা রাস্তায় আসতেই তাঁর পাশে বসা বয়স্ক দাড়িওয়ালা লোকটি তাঁর গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বাঁ হাত দিয়ে দড়ি ছাড়িয়ে কৌশলে ডান দিকে লাফ দিয়ে ধানখেতে পালিয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন, তাঁরা তাঁকে হত্যা করে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটন করবেন। তিনি ভোরে বের হয়ে এসে গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় এসে ট্রাকটি পান। সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁর সহকারী আনজুমকে গলায় ফাঁস ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাঁরা নির্মমভাবে হত্যা করে চলে গেছেন।

র‍্যাব সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ৮ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলার পরপরই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। আসামি দুই ভাই পাঁচ বছর জেলে থাকার পর ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিরা নিজেদের নাম পরিবর্তন করে নতুন এনআইডি কার্ড বানিয়ে সাজা এড়াতে বিদেশে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ঢাকায় গাড়ি মেরামত ও বেচাকেনার কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব

রংপুর ও গাইবান্ধা অঞ্চলে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের প্রাদুর্ভাব। গবাদিপশুর শরীরে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ ও শঙ্কা ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে অবাধে গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। জবাই করা পশুর কোনো রোগ-বালাই আছে কিনা এমন কোনো ধারণাও রাখেন না তারা। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। 

মাংস ক্রেতারা জানান, আইন প্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ ও প্রশাসনের। তবে, তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। 

আরো পড়ুন:

হাত-পায়ের ব্যথা কমাতে পাঁচটি নিয়ম মেনে চলুন

টকদইয়ের সঙ্গে যেসব খাবার খেলে হিতে বিপরীত

ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করেন মাংস ব্যবসায়ীরা। জবাই করার আগে প্রতিটি গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা রয়েছে। এই দায়িত্বে একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও নিয়ম মানা হচ্ছে না। পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে বাড়ছে সংক্রামকজনিত রোগবালাই।

মাংসের ক্রেতা সদর উপজেলার আবদুস সালাম বলেন, ‍“পশু অসুস্থ নাকি সুস্থ ছিল জানি না। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র এবং পশুর শরীরে সিল দেবেন এটাই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় লোকজন মারা যাওয়া পশুর মাংস, নাকি রোগাক্রান্ত গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ার মাংস খাচ্ছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।”

নলছিটি উপজেলার এইচ এম সিজার বলেন, “রংপুর ও গাইবান্ধায় সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত প্রাণী বা তাদের দেহবস্তুর সংস্পর্শে এলেই ছড়ায় যা মানুষকে সংক্রমিত করে। আমাদের এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাংস বিক্রেতারা পশু জবাই করেন। পশুটি সুস্থ আছে কিনা সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। যেখানে পশু জবাই হয় সেখানে কখনো কোনো পশু চিকিৎসককে দেখিনি।” 

গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ছাড়পত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাংস ব্যবসায়ী জানান, ৫ আগস্টের আগে নিয়মিত পশু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতো। এখন আর তা করা হয় না, প্রশাসনের কেউ থাকেন না। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নীরোদ বরণ জয়ধর বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। কেন পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না বিষয়টি জেনে বলতে পারব। অসুস্থ পশু জবাই হলে তা থেকে মানব শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।”

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক জায়গায় খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এরপর থেকে যাতে তদারকি করেন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, এ বিষয়টিতে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

ঢাকা/অলোক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজী মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে: যুব সংহতি
  • বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু
  • কিশোরগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • মুসলিম জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ৯ উপায়
  • ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসুর ফল প্রকাশ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিশেষ নীতিমালা, আবেদন শেষ ২৩ অক্টোবর
  • অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব