রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণ কেন দিন দিন কমছে
Published: 1st, December 2025 GMT
বন্ধুদের সঙ্গে পাহাড়ি শহর রাঙামাটিতে ঘুরতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুর রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সম্প্রতি তাঁরা সবাই মিলে রাঙামাটি সদর ও এর আশপাশের উপজেলার আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। হ্রদ-পাহাড়ের দেশে বেশ ফুরফুরে সময় কাটান সবাই মিলে। দুজনের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। চাকরিসূত্রে থাকেন ঢাকায়। তাই ছুটি পেলেই ছুটে আসেন পাহাড়ে। এবারও এসেছেন। রাঙামাটিতে তিন দিন থাকলেও দেখতে যাননি ঝুলন্ত সেতু। যে সেতু ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ নামে খ্যাত। দুই তরুণের মতে, ঝুলন্ত সেতু একাধিকবার দেখা হয়েছে। কোনো নতুনত্ব যোগ হয়নি।
রাঙামাটি বলতে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে যে ছবি ভেসে ওঠে, সেটি হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুলন্ত সেতু। একসময় এখানে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল তবলছড়ি এলাকার এই সেতু। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে। গত এক দশকে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে পাল্টে গেছে রাঙামাটির পর্যটনের পরিবেশ। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। হ্রদের পাশে নির্মিত হয়েছে রিসোর্ট। কিন্তু ঝুলন্ত সেতু ঘিরে বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
পর্যটনে বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনের সময় ঝুলন্ত সেতু আগের মতো পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তর মেলে দুই বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুর রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহর কাছ থেকে। তাঁরা বলেন, বছর তিনেক আগে রাঙামাটিতে ঘুরতে এসে একবার ঝুলন্ত সেতু দেখতে গিয়েছিলেন। তবে এই সেতু নিয়ে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চলে, তাতে ওখানে গিয়ে কিছুটা হতাশ হয়েছেন। শুধু ঝুলন্ত সেতুটিই আছে। একে ঘিরে আর তেমন কোনো বিনোদনের আয়োজন নেই। এ দুই পর্যটকের মতে, পর্যটকদের জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তা নেই সেখানে। সেতু দেখা ছাড়া সময় কাটানোর বেশি সুযোগ নেই। এক সেতু তো বারবার দেখতে যাওয়া যায় না। তাই এবার আর যাননি। এর চেয়ে রাঙামাটি শহরের ভেতরে যেমন, তেমনি শহরের বাইরেও অনেক দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক পর্যটন স্পট গড়ে উঠছে, যেখানে অনায়াসে দীর্ঘ সময় কাটানো যায়। কিন্তু ঝুলন্ত সেতুতে এসব সুবিধা নেই।
রাঙামাটির সদর উপজেলায় তবলছড়ি এলাকায় ১৯৮৬ সালে এই সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুটি পিলার ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। রাঙামাটি ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এ সেতু দেখতে আসতেন। এই সেতুকে ঘিরে রাঙামাটির পর্যটনের বিকাশ হয়েছে।বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এই ঝুলন্ত সেতুর তত্ত্বাবধান করে। দেখাশোনার দায়িত্বে আছে করপোরেশনের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সের ইউনিট ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণ কমার বিষয়টি মানতে রাজি নন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, মানুষ আসলে সেতুটি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যুগের পর যুগ ধরে একই সেতু দেখে আসছেন সবাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে বৈচিত্র্যময় ও আধুনিকায়ন করার কথা, তা হয়তো হয়নি। দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক করা হলে আরও বেশি মানুষ আসতে উৎসাহী হবেন। সেতুকে নিয়ে আকর্ষণও বাড়বে। তবে এমন উদ্যোগ আছে পর্যটন করপোরেশনের।
রাঙামাটির সদর উপজেলায় তবলছড়ি এলাকায় ১৯৮৬ সালে এই সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুটি পিলারের ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। রাঙামাটি ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এ সেতু দেখতে আসতেন। এই সেতুকে ঘিরে রাঙামাটির পর্যটনের বিকাশ হয়েছে।
৪০ বছর আগে হওয়া এই সেতুতে পর্যটকের বেশি ভিড় থাকে শীতকালে। পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীত মৌসুমে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার পর্যটক এই সেতু দেখতে আসেন। আর সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনিবারের আগে-পরে বন্ধ থাকলে তখন পর্যটকের ভিড় আরও বেড়ে যায়। কখনো কখনো তিন-চার দিনের টানা ছুটিতে প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার মানুষও ঘুরতে আসেন এই এলাকায়। যেমন এবার ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়াতে এসেছিলেন ৫০ হাজার মানুষ।
করোনা মহামারির পর যখন সেতু আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় তখন সাপ্তাহিক ছুটিতে ছয়–সাত হাজার পর্যটক ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণে ছুটে আসতেন। তবে এখন তা চার-পাঁচ হাজারে নেমে এসেছে। অবশ্য জাতীয় দিবসগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
তবে বর্ষাকালে ঝুলন্ত সেতু এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা প্রায় কমে যায় বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে ঝুলন্ত সেতু পানির নিচে চলে যায়। তখন পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেতুতে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়।
পর্যটকেরা জানান, একসময় পাহাড়-সমুদ্র দেখতে মানুষ শুধু শীত মৌসুমে যেতেন। বর্ষাকালে খুব একটা ঘুরতে বের হতেন না মানুষ। এখন সে চিত্র পাল্টে গেছে। বিশেষ করে বর্ষার সময় পাহাড়ি এলাকার সৌন্দর্য দেখতে হাজার হাজার পর্যটক পার্বত্যাঞ্চলে ঘুরতে আসেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই রাঙামাটিতে এলেও পানির নিচে ডুবে থাকায় ঝুলন্ত সেতু দেখতে পারেন না, যা তাঁদের হতাশ করে। সেতুকে ঘিরে যে আকর্ষণ তাতে ভাটা পড়ে।
পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ঝুলন্ত সেতু এলাকা ঘিরে করপোরেশনের নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেতু এবং এর দুই পাশকে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য পর্যটন করপোরেশন একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে করপোরেশনের কর্মকর্তা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
হলিডে কমপ্লেক্সের পাশে গত এপ্রিলে চালু করা হয়েছে সানরাইজ ইকো পার্ক। হ্রদের পাশে এই উদ্যানে নানা প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। পর্যটকদের জন্য বসার আসন রাখা হয়েছে। সেতু এলাকায় নৌযান নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হলিডে কমপ্লেক্সের ইউনিট ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে ঝুলন্ত সেতু আছে তা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পানির নিচে ডুবে থাকে। আবার এখানে সন্ধ্যার পর সময় কাটানোর সুযোগ নেই। ফলে পর্যটকেরা ফিরে যাচ্ছেন। তাঁদের ধরে রাখার সুযোগ নেই।
এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বা জেলা পরিষদের মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে আরেকটি নতুন ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান অলোক বিকাশ চাকমা। তিনি বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ছাড়া মানুষ যাতে সন্ধ্যার পর রাত আট-নয়টা পর্যন্ত থাকতে পারেন, সে ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। এতে পর্যটনের নতুন দিক যেমন উন্মোচিত হবে তেমনি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর সময় ক ট ন কমপ ল ক স পর যটক র ব যবস থ এল ক য় এই স ত র পর য
এছাড়াও পড়ুন:
সেন্ট মার্টিনে পর্যটক পরিবহন শুরু কাল, তিন জাহাজে যাচ্ছেন ১২০০ পর্যটক
আগামীকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক পরিবহন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—দুই মাস প্রতিদিন দুই হাজার করে পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ ও রাতযাপনের সুযোগ পাবেন। যাত্রার প্রথম দিনে তিনটি জাহাজে মোট ১ হাজার ২০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাহাজমালিকদের সংগঠন।
প্রতিদিন সকাল সাতটার দিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ ছেড়ে যাবে। ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাবে। পরদিন বেলা তিনটার দিকে পর্যটক নিয়ে জাহাজ কক্সবাজারে ফিরবে। একদিকে যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনে দুই হাজার পর্যটক আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনটি জাহাজে ১ হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। রাতের মধ্যে আরও কিছু টিকিট বিক্রি হতে পারে। পর্যটক কমে গেলে সব জাহাজ চালানো সম্ভব হবে না।’ তিনি জানান, সোমবার সকালে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নিয়ে পর্যটকদের প্রথম বহর দ্বীপে যাবে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘টানা ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ডিসেম্বর থেকে দুই মাসের জন্য দ্বীপ খুললেও পর্যটকের সাড়া কম। ২৩০টির বেশি হোটেল–রিসোর্ট, কটেজ থাকলেও অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়ে থাকার আশঙ্কা আছে।’
কঠোর নির্দেশনা মানতে হবেসরকারি ঘোষণায় বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও রাতযাপনের সুযোগ না থাকায় এবং জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় নভেম্বরে কেউ ভ্রমণে যেতে পারেননি। ডিসেম্বর–জানুয়ারি দুই মাস রাতযাপনের অনুমতি থাকলেও জাহাজ চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপের এমন সৌন্দর্য বিমোহিত করে পর্যটকদের