আমরা কারও পক্ষে কাজ করতে পারব না: সিইসি
Published: 16th, November 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশন কারও পক্ষে কাজ করবে না। দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী যা করার, তা করা হবে।
এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, আমার পক্ষে কাজ করলে উনি নিরপেক্ষ, কিন্তু আমরা কারও পক্ষে কাজ করতে পারব না। এটা পরিষ্কার, কারও পক্ষে কাজ করতে পারব না। আমাদের বিবেক, দেশের প্রচলিত আইন, বিধিবিধান যা বলে, সেটা মেনেই আমরা চলব, ইনশা আল্লাহ।’
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ থেকে আলোচনা শুরু করেছে ইসি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির এই আলোচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ইসি নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপালনে দলগুলোর সহযোগিতা চাওয়াটা একটা বড় উদ্দেশ্য। নির্বাচনের সময় আচরণবিধিটাই প্রকৃতপক্ষে মূল আইন, যেটা কাজে লাগে। এটা পরিপালনের ওপর একটা সুন্দর নির্বাচন নির্ভর করে। দ্বিতীয় কারণ, সার্বিকভাবে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চাওয়া।
এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা যখন শপথ নিয়েছি, সেদিন থেকেই একটা ওয়াদা দিয়ে আসছি, আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা থাকবে একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন উপহার দেওয়া জাতিকে। এটা আমাদের কমিটমেন্ট টু দ্য নেশন (জাতির কাছে অঙ্গীকার)। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহযোগিতা করে, তাহলে আর আচরণবিধি নিয়ে আমাদের বেশি মাথা ঘামাতে হয় না, আমাদের তেমন জোরাজুরি করতে হয় না, আইনের প্রয়োগ করতে হয় না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটা পরিপালন হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বিগত এক দেড় দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে বিশাল রকমের ঘাটতি রয়ে যায়।’
আসন্ন নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ কী, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যেটা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অপতথ্য, ভুলতথ্য ছড়ানো৷.
এবার অতিরিক্ত অনেক কাজ ইসির ঘাড়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। এগুলো হলো প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের ভোটের ব্যবস্থা করা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা আসনের বাইরে কর্মরত থাকেন, তাঁদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করা, জেলখানার কয়েদিদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
এত দেরিতে কেন কমিশন আলোচনার আয়োজন করল, সে প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, সংস্কার কমিশন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অনেক কাজ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছে। এর মাধ্যমে তারা ইসির কিছু কাজ হালকা করে দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনও বিভিন্ন রকমের কাজের চাপে ছিল। সব মিলিয়ে এই কাজ (আলোচনা) একটু দেরিতে শুরু হয়েছে, তবে এতে অসুবিধা হবে না বলে তিনি মনে করেন।
বেলা সোয়া দুইটার দিকে সম্মেলনকক্ষে প্রবেশ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ সময় সামান্য হেসে তাঁকে ধন্যবাদ জানান সিইসি। হাসতে হাসতে বলেন, ‘বেটার লেট দ্যান নেভার।’ কাদের সিদ্দিকীও হাসিমুখে আসন গ্রহণ করেন। সিইসি বলতে থাকেন, ‘উই হ্যাভ জাস্ট স্টার্টেড। এখনো বেশি বেশি দূর এগোইনি। আমরা আপনাদেরও ইসির পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আপনারা যে উপস্থিত হয়েছেন।’
বেলা দুইটার পর নির্বাচন কমিশনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ট র ব যবস থ র জন ত ক আম দ র র জন য ক জ কর দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের দুপক্ষে তর্ক, একাংশকে বের হয়ে যেতে বলা হলো
ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনীর অনুসারীরা আজ রোববার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে যোগ দিতে যান। কিন্তু সংলাপ শুরুর আগে দলটির বর্তমান অংশের লোকজন আপত্তি তোলেন। এ সময় তাঁদের বের হয়ে যেতে বলা হয়।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসিতে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে। এতে সকালে ৬টি দল অংশ নেয়।
সংলাপ শুরু হওয়ার আগে ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল কাদির অংশের প্রতিনিধিরা বসার জায়গা পাননি। এ সময় তাঁরা ইসির উদ্দেশে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর যাঁরা গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা এখানে বসে আছেন। এ সময় ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানতে চান কাদের কাছে লিখিত দাওয়াতপত্রের হার্ডকপি রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছে থাকা লিখিত দাওয়াতপত্র দেখান। অন্যদিকে আমিনীর অনুসারীরা হার্ডকপি দেখাতে পারেননি। এ সময় সচিব তাঁদের সম্মেলনকক্ষের বাইরে যেতে বলেন।
বের হয়ে যাওয়া প্রতিনিধিদলের একজন মাওলানা আলতাফ হোসেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দলের নিবন্ধন তাঁদের নামে, দাওয়াত তাঁদেরকেই দেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাকমেল করে তাঁদের দাওয়াতপত্র অপর পক্ষ নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর হাসানাত আমিনী দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর মাওলানা আবদুল কাদিরকে চেয়ারম্যান ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকগুলো বড় কাজ তাঁরা করেছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।
সিইসি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনে অনেক আলোচনা হয়েছে। সামনে যাতে ইসি সুন্দর একটি নির্বাচন করতে পারে সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, তারা সরাসরি মানুষের সঙ্গে কাজ করে, তাই দলগুলোর পরামর্শ প্রয়োজন।
আচরণবিধি যদি সবাই পালন করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে বলে জানান সিইসি। এই আচরণবিধি প্রচারের ব্যবস্থা দলগুলোও করতে পারে বলে জানান তিনি।
সংলাপে সকালে অংশ নেয় গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি।