আরব্য রজনীতে আরেকটি রূপকথার গল্প দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্টেডিয়ামও সম্পন্ন করে রেখেছিল রাজকীয় প্রস্তুতি। এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ম্যাচ বলে কথা! এমন ম্যাচের জন্যই তো সারা বছর ধরে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে অপেক্ষায় থাকেন ফুটবল–রোমান্টিকরা, যে ম্যাচ খুলে দেবে রোমাঞ্চ ও উন্মাদনার সমস্ত দ্বার।

এসব ম্যাচের আগে প্রার্থনা থাকে, ফল যা–ই হোক, খেলাটা যেন রুদ্ধশ্বাস হয়। ম্যাচটি যেন বিস্ময়কর কোনো উপহার নিয়ে আসে। গতকাল রাতেও স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে এমন কিছু দেখার অপেক্ষা ছিল। কিন্তু কে জানত, বার্নাব্যুর সেই ক্লাসিকোর মতো জেদ্দাতেও দেখা মিলবে ৫–২ গোলের আরেকটি একতরফা ম্যাচের। আরও একবার অসহায় আত্মসমর্পণ করবে রিয়াল মাদ্রিদ। তাও ১০ জনের বার্সার কাছে।

আরও পড়ুনগোলবন্যা, পেনাল্টি, লাল কার্ডের ক্লাসিকো শেষে সুপার কাপ বার্সেলোনার ১০ ঘণ্টা আগে

গত অক্টোবরে বার্নাব্যুর এল ক্লাসিকোতে হাইলাইন ডিফেন্সে রিয়ালকে নাকাল করে ছেড়েছিল বার্সা। গতকাল অবশ্য তেমন অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কৌশলের প্রয়োজন পড়েনি। প্রতিপক্ষ যখন তাদের ডিফেন্স বাড়িতে রেখে আসে, তখন নিজেদের ডিফেন্স নিয়ে এত না ভাবলেও বোধ হয় চলে! বার্সার আক্রমণভাগ ও থিবো কোর্তায়ার মধ্যে যে কোনো রক্ষণদেয়াল নেই, সেটি ম্যাচের ৫ মিনিটের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যেই যে দুটি অলৌকিক সেভ করতে হয় রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে।

রিয়ালের এই অদৃশ্য রক্ষণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বার্সা একরকম সর্বশক্তি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সুযোগে কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালকে শুরুতে এগিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই লিড যে রিয়াল ধরে রাখতে পারবে না, সেটাও তাদের খেলায় মোটামুটি স্পষ্ট ছিল। গতকাল রাতে রিয়ালের রক্ষণ বলতে আক্ষরিক অর্থেই কিছু ছিল না। ফলে প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল খাওয়ার সমস্ত ঝুঁকি মেনে নিয়েও বার্সা নিজেদের কৌশলে কোনো আপস করেনি। হ্যান্সি ফ্লিকের আত্মবিশ্বাসী কৌশল প্রথমার্ধেই ম্যাচের ইতি টেনে দেয়।

আগের ম্যাচে আনচেলত্তিকে হাইলাইন ডিফেন্সের মাস্টারক্লাস দেওয়া ফ্লিক গতকাল ক্লাস নিয়েছেন পজিশনিংয়ের। মাঠে প্রতিটি খেলোয়াড়কে জার্মান এই কোচ ব্যবহার করেছেন দারুণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এ জন্য অবশ্য খেলোয়াড়দেরও কৃতিত্ব দিতে হয়। কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চেষ্টার কমতি রাখেননি তাঁরা। মাঝমাঠে কাসাদো যেভাবে বেলিংহামকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন, তা ছিল দেখার মতো। ম্যাচের বেশির ভাগ সময় বেলিংহামকে কাসাদোর পেছনেই দেখা গেছে। একইভাবে কামাভিঙ্গা ও ভালভের্দেও পেদ্রি ও গাভিকে মার্ক করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।

রিয়াল বিধ্বস্ত দুই তারকা ফুটবলার জুড বেলিংহাম ও কিলিয়ান এমবাপ্পে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ