এল ক্লাসিকোতে রিয়ালের ঘুমপাড়ানি ফুটবল ও ফ্লিকের আরেকটি মাস্টারক্লাস
Published: 13th, January 2025 GMT
আরব্য রজনীতে আরেকটি রূপকথার গল্প দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্টেডিয়ামও সম্পন্ন করে রেখেছিল রাজকীয় প্রস্তুতি। এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ম্যাচ বলে কথা! এমন ম্যাচের জন্যই তো সারা বছর ধরে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে অপেক্ষায় থাকেন ফুটবল–রোমান্টিকরা, যে ম্যাচ খুলে দেবে রোমাঞ্চ ও উন্মাদনার সমস্ত দ্বার।
এসব ম্যাচের আগে প্রার্থনা থাকে, ফল যা–ই হোক, খেলাটা যেন রুদ্ধশ্বাস হয়। ম্যাচটি যেন বিস্ময়কর কোনো উপহার নিয়ে আসে। গতকাল রাতেও স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে এমন কিছু দেখার অপেক্ষা ছিল। কিন্তু কে জানত, বার্নাব্যুর সেই ক্লাসিকোর মতো জেদ্দাতেও দেখা মিলবে ৫–২ গোলের আরেকটি একতরফা ম্যাচের। আরও একবার অসহায় আত্মসমর্পণ করবে রিয়াল মাদ্রিদ। তাও ১০ জনের বার্সার কাছে।
আরও পড়ুনগোলবন্যা, পেনাল্টি, লাল কার্ডের ক্লাসিকো শেষে সুপার কাপ বার্সেলোনার ১০ ঘণ্টা আগেগত অক্টোবরে বার্নাব্যুর এল ক্লাসিকোতে হাইলাইন ডিফেন্সে রিয়ালকে নাকাল করে ছেড়েছিল বার্সা। গতকাল অবশ্য তেমন অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কৌশলের প্রয়োজন পড়েনি। প্রতিপক্ষ যখন তাদের ডিফেন্স বাড়িতে রেখে আসে, তখন নিজেদের ডিফেন্স নিয়ে এত না ভাবলেও বোধ হয় চলে! বার্সার আক্রমণভাগ ও থিবো কোর্তায়ার মধ্যে যে কোনো রক্ষণদেয়াল নেই, সেটি ম্যাচের ৫ মিনিটের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যেই যে দুটি অলৌকিক সেভ করতে হয় রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে।
রিয়ালের এই অদৃশ্য রক্ষণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বার্সা একরকম সর্বশক্তি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সুযোগে কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালকে শুরুতে এগিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই লিড যে রিয়াল ধরে রাখতে পারবে না, সেটাও তাদের খেলায় মোটামুটি স্পষ্ট ছিল। গতকাল রাতে রিয়ালের রক্ষণ বলতে আক্ষরিক অর্থেই কিছু ছিল না। ফলে প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল খাওয়ার সমস্ত ঝুঁকি মেনে নিয়েও বার্সা নিজেদের কৌশলে কোনো আপস করেনি। হ্যান্সি ফ্লিকের আত্মবিশ্বাসী কৌশল প্রথমার্ধেই ম্যাচের ইতি টেনে দেয়।
আগের ম্যাচে আনচেলত্তিকে হাইলাইন ডিফেন্সের মাস্টারক্লাস দেওয়া ফ্লিক গতকাল ক্লাস নিয়েছেন পজিশনিংয়ের। মাঠে প্রতিটি খেলোয়াড়কে জার্মান এই কোচ ব্যবহার করেছেন দারুণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এ জন্য অবশ্য খেলোয়াড়দেরও কৃতিত্ব দিতে হয়। কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চেষ্টার কমতি রাখেননি তাঁরা। মাঝমাঠে কাসাদো যেভাবে বেলিংহামকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন, তা ছিল দেখার মতো। ম্যাচের বেশির ভাগ সময় বেলিংহামকে কাসাদোর পেছনেই দেখা গেছে। একইভাবে কামাভিঙ্গা ও ভালভের্দেও পেদ্রি ও গাভিকে মার্ক করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
রিয়াল বিধ্বস্ত দুই তারকা ফুটবলার জুড বেলিংহাম ও কিলিয়ান এমবাপ্পে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ