পোঁতা হয়েছে বাঁশের খুঁটি, কড়ি–বর্গায় লেগেছে কাঠের পাতলা ফালি, চাল আর বেড়ায় দেওয়া হয়েছে পাতলা টিন। কম দামি এসব উপকরণ দিয়ে রাস্তার দুই পাশে রাতারাতি উঠছে একের পর এক দোকানঘর। দেখলেই মনে হবে, এ যেন ‘তাসের ঘর’। সামান্য বাতাসেই ভেঙে পড়বে।

কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে বুড়িচং উপজেলার অংশে ঢুকতেই এমন অনেক ঘর চোখে পড়বে। দুই লেনের সড়কটি চার লেন করা হবে। সম্প্রতি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই সড়কের দুই পাশে এমন পলকা ঘর তোলার হিড়িক পড়েছে।

অতীতে দেখা গেছে, এভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সময় অসাধু ও সুযোগসন্ধানী লোকেরা চেষ্টা করেন অর্থ লুটের জন্য। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে হলে এখন থেকেই প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। আলী আকবর মাসুম, সাবেক সভাপতি, সনাক, কুমিল্লা

স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা বলছেন, এসব ঘর তোলার আসল উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়; ফাঁকা জায়গায় বাণিজ্যিক স্থাপনা দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। মূলত অধিগ্রহণ করা জমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে সরকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়। একশ্রেণির দালাল চক্র স্থানীয় লোকজনকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করছে বলে জানা গেছে।

এভাবে রাতারাতি দোকান তুলেও লাভ হবে না বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.

আমিরুল কায়সার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসন থেকে মহাসড়কের দুই পাশের এলাকার ছবি তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এর বাইরে কাউকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

বর্তমানে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আমরা পূর্বের অবস্থার বাইরে বাড়তি কোনো টাকা দেব না।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। মূল মহাসড়কটি হবে চার লেনের। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুই পাশে থাকবে সার্ভিস লেন। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশ পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। সড়কটি এখন ১৮ ফুট চওড়া। চার লেন হলে এটি প্রস্থে ৬০ ফুট হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০২২ সালেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ মসৃণ হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

৫ জানুয়ারি সকালে মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার রামপাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বেশ কয়েকটি বড় দোকানঘর উঠেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, খালি জায়গায় কয়েক দিন আগে টিন দিয়ে এসব ঘর তোলা হয়েছে। এখনো মেঝে সমান করা হয়নি। ‘সর্দার মার্কেট ও সরদার ফার্নিচার’ নাম দিয়ে এসব দোকানে বালুর মেঝেতে রাখা হয়েছে কয়েকটি আসবাব।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম সর্দার ও তাঁর ভাই হারুনুর রশিদ সর্দার এসব ঘর তুলেছেন। জানতে চাইলে আবুল কালাম সর্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কের পশ্চিম পাশে আমাদের ৬০ শতক জমি আছে। সেখানেই এসব দোকান নির্মাণ করেছি কিছুদিন আগে। এখন শুনছি এসব জায়গা অধিগ্রহণ হবে। আমাদের ডিসি অফিস থেকে চিঠিও দিয়েছে। সরকারের দরকার হলে সরকার নেবে, আর না হলে আমরা এসব দোকানে ব্যবসা করব।’ কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে দোকান নির্মাণ করেননি বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।

উপজেলার দেবপুর এলাকায় দেখা গেছে, সম্প্রতি ভরাট হওয়া একটি ডোবার মধ্যে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে দোকানঘর তোলার কাজ চলছে। সেখানে ঘর তুলছেন দেবপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিল। তবে ঘটনাস্থলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঘর নির্মাণের কাজ করা রুহুল আমিন ও সুজন বলেন, শাকিল তাঁদের দোকানঘর নির্মাণের কাজ দিয়েছেন।

অনেকে পুরোনো বাড়িকেও বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরিজপুর এলাকায় মহাসড়কের পূর্ব পাশের মিজানুর রহমানের বাড়িটি ‘হাবিব মঞ্জিল’ নামে পরিচিত। তিনতলা ভবনটির নিচতলার সামনের অংশ সম্প্রতি ভেঙে শাটার লাগিয়ে সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে ‘হাবিব মার্কেট’।

জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘দোকানের ভাড়া বেশি। তাই নিচতলায় সম্পূর্ণ দোকান করা হয়েছে। এখানে আগেও দোকান ছিল। আমরা নাম পরিবর্তন করেছি দোকান ভাড়া দেওয়ার জন্যই।’

একই এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিমপাশে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বড় আকৃতির দোকান তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান। তবে এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সম্প্রতি সরেজমিনে বুড়িচং উপজেলার ফরিজপুর, দেবপুর, ময়নামতি, কংসনগর, দেবীদ্বারের জাফরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন অন্তত ৩০টি স্থাপনা দেখা গেছে। কোথাও কোথাও মহাসড়কের দুই পাশে আধা পাকা ও টিনশেড ঘর নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। পুরো মহাসড়কের অন্যান্য স্থানেও একই অবস্থা।

দালাল চক্র মানুষকে মোটা অঙ্কের টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এসব স্থাপনা নির্মাণ করাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেবপুর বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দোকানটি টিনশেডের। আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে ওপরে ছাদ করার জন্য। এতে নাকি প্রচুর টাকা পাব; কিন্তু আমি বলেছি, কোনো অন্যায় করব না। মূলত অধিগ্রহণ করা জমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে সরকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়। এ জন্য এভাবে দোকানঘর নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।’

সওজ কুমিল্লার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা প্রথম আলোকে বলেন, একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পটির কাজ এখনো শুরু হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের ঠিকাদার চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কাজটি শুরু হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। অধিগ্রহণের পুরো বিষয়টি দেখছে জেলা প্রশাসন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলী আকবর মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, এভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সময় অসাধু ও সুযোগসন্ধানী লোকেরা চেষ্টা করেন অর্থ লুটের জন্য। অনেক সময় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও ঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ পান না। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে হলে এখন থেকেই প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ