বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ও গ্রন্থাগারের নাম নিয়ে উত্তেজনা
Published: 16th, January 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষার্থীদের তিনটি আবাসিক হল ও একটি গ্রন্থাগারের নাম নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুটি ছাত্রাবাস ও গ্রন্থাগারের নতুন নামসহ ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ববিতে ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেরেবাংলা হল এবং ছাত্রীদের শেখ হাসিনা হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা হল রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের নামে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেরেবাংলা হল ছাড়া অন্যগুলোর নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। নতুন নামকরণের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও গত ৫ মাসে এর বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে ‘বিজয় ২৪ হল’ এবং শেখ হাসিনা বাদে ‘কবি সুফিয়া কামাল হল’ এবং সেরনিয়াবাতের বদলে ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার’ লেখা ব্যানার টানিয়েছেন। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গমাতা হলের নাম জুলাই বিপ্লবের ১১ জন নারী শহীদের মধ্য থেকে নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহীদ নাফিসা হল বা শহীদ রিয়া গোপ হল নাম প্রস্তাব করা হয়।
ববি শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ জানান, আগের নামফলকগুলো শিক্ষার্থীরা ভেঙে ফেলেছে। পাঁচ মাসেও দাপ্তরিকভাবে নতুন নাম দেওয়া হয়নি। তাই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার তিনটি ভবনে নতুন নামের ব্যানার টানিয়েছেন।
এদিকে বঙ্গমাতা হলের প্রস্তাবিত দুটি নামের বিরোধিতা করে ওই হলের একদল শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রস্তাবিত নাম নিয়ে সব ছাত্রী একমত হতে না পারায় বিক্ষোভ হয়।
এ-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৯ ও ১২ জানুয়ারি সভা হলেও নাম পরিবর্তন নিয়ে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা দেখা যায়নি।’
নাম পরিবর্তন কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি নাম প্রস্তাব করলে সেটা নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা হবে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত।’
উপ-উপচার্য ড. গোলাম রাব্বানী জানান, উপাচার্য প্রয়োজনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিষয়টি সমাধান করতে পারেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।
অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।
কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’
গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।