পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ অতি মুনাফা
Published: 18th, January 2025 GMT
অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। সবার আগে প্রয়োজন এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, বাজার অর্থনীতির কারণে জমির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে নদনদী, জলাভূমি ও বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কালো টাকার প্রভাবও দায়ী।
বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি ড.
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক রেহমান সোবহান পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক আইন থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুফল পেতে চাইলে সবাইকে একই মঞ্চে আনতে হবে। তিনি বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি। বরং ওই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে, এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ধারণাপত্রে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাপাকে এখনও উজানে নৌকা বাইতে হচ্ছে। স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিবেশ রক্ষামূলক কাজের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে। তাই এ কাজে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও সারাদেশে কার্যকর পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। দেশে স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগী জনগণ আন্দোলন করছে। যাদের অনেকের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারিনি।
সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে কর্মঅধিবেশন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টিদূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়। শনিবার দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’, পঞ্চম অধিবেশনে ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ষষ্ঠ অধিবেশনে ‘বন, পাহাড়, উপকূল ও আদিবাসী অধিকার’ নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্মেলনে নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা অধিবেশনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যোগ দিয়ে বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি জেলার একটি নদীকে দখল ও দুষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীকে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আন্তঃনদী সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ পর ব শ ধ ব স পর ব শ র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?