মঞ্চ থেকে নায়করাজ, অভিনয়ের বাতিঘর হিসেবেই রয়ে যাবেন তিনি
Published: 23rd, January 2025 GMT
কিংবদন্তি নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। নায়করাজ রাজ্জাক নামেই তিনি সুপরিচিত। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে তিন শতাধিক বাংলাদেশি সিনেমা এবং বহু ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কাজ করেছেন উর্দু সিনেমাতেও। কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন আজ। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৮৩-তে পা দিতেন।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। যার পুরো নাম আবদুর রাজ্জাক। তাঁর বাবার নাম আকবর হোসেন ও মাতার নাম নিসারুননেছা। রাজ্জাকরা ছিলেন নাকতলা এলাকার জমিদার। জন্মস্থান কলকাতায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চ নাটক দিয়ে রাজ্জাকের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল।
১৯৬৪ সালে তিনি পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকায় এসে রাজ্জাক ‘উজালা’ সিনেমায় পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৬ সালে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে। এরপর চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
নায়ক হিসেব রাজ্জাকের প্রথম চলচ্চিত্র জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে আসা ছেলেটাই একদিন হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা। ওপার বাংলায় জন্ম নিলেও এপার বাংলার রুপালি রঙেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন নায়করাজ। তবে শুধু নায়ক হিসেবে নয়, পরবর্তীতে বড় ভাই ও বাবার চরিত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
রাজ্জাক তার ক্যারিয়ারে এত হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন যে নির্দিষ্ট করে কয়েকটার নাম বলা মুশকিল। তার পরও কয়েকটির নাম উল্লেখ না করলেই নয়। সেগুলো হল- ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতুটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘নাচের পুতুল’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘গুন্ডা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘন্টা’, ‘মহানগর’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘স্বরলিপি’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘বাবা কেন চাকর’ ইত্যাদি।
চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও নাম করেছিলেন রাজ্জাক। জীবদ্দশায় তিনি ১৬টি সিনেমা পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিজের মালিকানাধীন রাজলক্ষী প্রোডাকশন হাউজ থেকে বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রযোজনাও করেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তিনি সাতবার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে পান আজীবন সম্মাননা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেয় স্বাধীনতা পুরস্কার।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনের যশ-খ্যাতি, অসংখ্য সম্মাননা, স্ত্রী-সন্তান- সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান নায়করাজ রাজ্জাক। ওইদিনই রাজ্জাককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি চলে গেলেও আজীবন তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বাতিঘর হিসেবে রয়ে যাবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।