নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে লিজকৃত সম্পত্তিতে থাকা বসত ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার গভীর রাত ২টার দিকে উপজেলা সদরের মডেলপাড়া এলাকায়। 


ভুক্তভোগি ইমরানা আক্তার জানান, একটি সরকারী সম্পত্তি ভিপি (কেস নং- ১৫/৭৭) এর মূলে তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন ভোগ দখল করতেন। তার মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র এবং দুই কন্যা উক্ত সম্পত্তির লিজ নিজেদের নামে নবায়ন করে এক কন্যা ইমরানা আক্তার পরিবার পরিজন   নিয়ে   ঘরবাড়ী নির্মাণ করে ১২/১৪ বছর যাবত বসবাস   করছেন।


তিনি আরো জানান, ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তণের পর থেকে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিএনপি নেতা আলী আজগর (সাবেক এমপি আঙ্গুর গ্রুপের নেতা) জোর পূর্বক জবদখলের মাধ্যমে ইমরানাকে উক্ত সম্পত্তি থেকে উৎখাতের চেষ্টা এবং হুমকী ধমকী প্রদর্শণ করে আসছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে একটি মোকদ্দমাও চলমান এবং অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও রয়েছে বলে ভুক্তভোগী ইমরানা জানান। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আলী আজগর ও তার ছেলে মুন্না অপরাপর লোকজন নিয়ে গিয়ে ইমরানার দুটি ঘর ভাংচুর করে এবং ঘরে থাকা আসবাপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। 


ইমরানা আরো জানান, ঘটনার সময় আমি আমার শিশু পুত্র তাসিম (৮) কে নিয়ে প্রাণ ভয়ে  পালিয়ে গিয়ে থানার আশ্রয় নেই এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।


এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন এর সাথে যোগাযোগ ও তার হোয়াসআপে ক্ষুদে বার্তা দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইমর ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রফেসর সাহেব

ছোটবেলা থেকে আমরা তাঁর এই নামই শুনতাম। কেননা আমাদের দেখা জানা সব লোকজন তাঁকে ‘প্রফেসর সাহেব’ নামেই ডাকতেন। বেশ কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা সূত্রে তাঁর এই পরিচয় তৈরি হয়। ছোটবেলায় রাগী, গম্ভীর ভাবমূর্তির এই মানুষের কাছাকাছি যাবার সাহস আমাদের ছিল না। তিনি আমাদের পিতা প্রফেসর মো. আজগর আলী (১৯২৭-২০০৩)। বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজের জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, মৃত্যুর পর তাঁর সেসব নোটবই আমাদের হাতে আসে। পূর্ববাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ কঠিন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে কীভাবে নিজের জীবন তৈরি করেছিলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন– সেসব টুকরো লেখা থেকে এর কিছু চিত্র পাওয়া যায়।
প্রফেসর সাহেবের বাবা নাহের মুন্সী ছিলেন ক্ষুদ্র কৃষক, সেই সঙ্গে তিনি গ্রামের মসজিদে ইমামতি করতেন; মা সহিতুননেসা ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী, কম উপার্জনে বেশি মানুষের সংসার সামাল দিতে তাঁকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হতো। দাদা মহর মুন্সী বেশির ভাগ সময় পীরের দরবারেই থাকতেন, ওয়াজ মাহফিলেই তাঁর বেশি সময় কাটত, সংসারের কাজে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। 
সে সময় গ্রামে স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। মেট্রিক পাস করলেই দূর থেকে মানুষ আসত দেখতে। এরপর আরও শিক্ষার কথা ভাবাই ছিল দুঃসাহসিক ব্যাপার। তাঁর আরামে লেখাপড়া করার উপায় ছিল না। বেশির ভাগ সময় পিতার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করতে, বিলে মাছ ধরতে যেতে হতো। এর মধ্যেও পড়াশোনার আগ্রহ কমে না। স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই তিনি জুনিয়র মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। 
অভাবসহ কঠিন বাধাবিপত্তির সঙ্গে অবিরাম লড়াই করে আব্বা মেট্রিক পাস করেন ১৯৪৪ সালে। পরিবারের মুরব্বিরা চাচ্ছিলেন তিনি কোনো কাজে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরবেন; কিন্তু তাঁর ইচ্ছা লেখাপড়া করা। 
এই অভাব-অনটনের মধ্যেই ঢাকা দেখার আগে শিক্ষার টানে তাঁর কলকাতায় যাওয়া। সেখানে প্রথমে ভর্তি হলেন কমার্স কলেজে। টাকার অভাবে এই কলেজেও পড়া হলো না। সে সময় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, তার কারণে কলকাতার জীবন আরও অনিশ্চিত। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম আয়ও জোগাড় হচ্ছে না। বেকারত্ব আর যুদ্ধের আক্রমণ একসঙ্গে।
আইকম পাস করার পর তিনি ভর্তি হলেন সিটি কলেজে। নতুন কাজ পেলেন রেন্ট কন্ট্রোল অফিসে। কিছুদিনের মধ্যে চাকরি পেলেন কলকাতা করপোরেশনে। সব সংকট পার হয়ে যখন স্থিত হয়েছেন তখনই বিপদ এলো আরেক দিক থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক চলিতে লাগিল। কিন্তু ডাইরেক্ট অ্যাকশনে আমার কপাল ভাঙিল। রায়ট আরম্ভ হইল। এত লোক মারা গেল তাহা কল্পনা করা যায় না। কলিকাতার ড্রেনে পানি প্রবাহিত হয়, সেখানে রক্ত প্রবাহিত হইতে দেখিয়াছি।’
দেশভাগের পর শুরু হলো জীবনের আরেক পর্ব। তিনি লিখেছেন, ‘বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর ঢাকায় আসিলাম কিন্তু মনে হইল কলিকাতার আলো হইতে ঢাকার অন্ধকারে আসিলাম। ঢাকায় আসিয়া কোনো কিছুই ঠিকমতো করিতে পারিতেছিলাম না। না আছে চাকুরী না আছে পড়াশোনার ব্যবস্থা, না আছে টাকা পয়সা।... তবে কলিকাতার মৃত্যু ভয় হইতে বাঁচিলাম। ক্রমে ক্রমে ঢাকা ভালো মনে হইতে লাগিল। কেন হইবে না? ইহা যে আমার নিজের দেশ, বাংলাদেশ।’
নতুন করে জীবন গতি ঠিক করতে অনেক উদ্যোগের দরকার ছিল। উপার্জন করতে হবে, লেখাপড়াও চালাতে হবে। এই সময়েই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি আহত হন। এরপর এমকম প্রথম পর্ব পাস করার পর জামালপুর কলেজে কমার্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর জামালপুর থেকে আবার ঢাকায় এসে এমকমে ভর্তি হন। তিনি লিখেছেন, ‘পড়াশুনা করার টাকা পয়সা নাই। সলিমুল্লাহ কলেজের প্রিন্সিপাল কে. পি. ব্যানার্জী, আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত করিলেন। পড়াশুনা চলিতে লাগিল, বাড়িতে টাকা পাঠাইতে লাগিলাম।’ এভাবেই শুরু হলো আমাদের পিতা মো. আজগর আলী সাহেবের প্রফেসর জীবন। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রফেসর সাহেব