যথাযথ মর্যাদায় ভারতে উদযাপিত হলো প্রজাতন্ত্র দিবস। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দেশটির ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সেজেছে নয়াদিল্লির রাজপথ থেকে কলকাতার রেড রোড। রয়েছে দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এদিন সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
রাষ্ট্রপতি ছাড়াও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, দেশটির তিন বাহিনীর (স্থল বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী) প্রধান এবং দিল্লিতে নিযুক্ত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো।
এদিন সকাল ১০টার দিকে দিল্লিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে (ওয়ার মেমোরিয়াল) শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সঙ্গে ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধানরা। এরপর সেখান থেকে দিল্লির কর্তব্য পথে (দিল্লির রাজপথের নাম পরিবর্তন করে কর্তব্য পথ রাখা হয়) আসেন প্রধানমন্ত্রী। কিছু পরেই সেখানে পৌঁছান উপ-রাষ্ট্রপতি। এরপর প্রধান অতিথি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে এসে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। দেশটির জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর কামান দিয়ে ২১টি গান স্যালুট ও জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে। প্রজাতন্ত্র দিবসের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের শারীরিক কসরত। বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সুসজ্জিত ট্যাবলো প্রদর্শিত হয়। এর পাশাপাশি ভারতীয় স্থল-সেনাবাহিনীর ব্রাহ্মস মিসাইল, পিনাকা রকেট সিস্টেম, আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংক, দ্য নাগ মিসাইল সিস্টেম; ভারতীয় বিমানবাহিনীর সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস, সি-১৭ গ্লোবমাস্টার, সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর তিনটি ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফট প্রদর্শিত হয়।
ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যকার মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে এদিনের কুচকাওয়াজে অংশ নেয় ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত দেশটির সেনাবাহিনীর ‘মার্চপাস্ট এবং ব্যান্ড’ বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল।
প্রায় এক ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে দেশটির জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় সময় সাড়ে ১২টা নাগাদ অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়। শেষে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি।
প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় যে কোনো নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় দিল্লিসহ আশপাশের ছয় স্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। দিল্লিজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছিল ৭০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী এবং ৭০ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী। দিল্লির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র, মিজোরাম, গুজরাট, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানাসহ প্রতিটি রাজ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হয়।
এদিকে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কলকাতার রেড রোডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। রেড রোডের এই অনুষ্ঠানে সকলের নজর কাড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর রবোটিক কুকুর ‘সঞ্জয়’। যার পোশাকি নাম ‘এমইউএলই’ বা ‘মাল্টি ইউটিলিটি লেগ ইকুইপমেন্ট’; যেটি সব আবহাওয়ায় গাছে চড়া, পাহাড়ে ওঠাসহ সব কাজ করতে পারে।
ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট রপত মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।