জলবায়ুসহিষ্ণু শিক্ষা কৌশল গ্রহণ করা দরকার
Published: 26th, January 2025 GMT
নতুন বছরে মেয়ে আমার স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। মর্নিং শিফটের জন্য সকাল ৭টায় মেয়েকে নিয়ে বের হতে গিয়ে বেশ ঠান্ডা অনুভব করি। রাজধানীতে তাপমাত্রা ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেও শীত থেকে রেহাই পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বের হয়ে বেগ পেতে হয়। এর মধ্যে দুই দিন শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দেখলাম, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুদের সাধারণ সমাবেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এ বছর শীতের প্রকোপ এখনও সে অর্থে পড়েনি। তারপরও আমার মনে হয়েছে, এর চেয়ে তাপমাত্রা কমে গেলে মেয়েকে স্কুলে নেওয়া কঠিন হবে।
গত বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি যখন দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় তখন শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়– যেসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেখানে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সে অনুযায়ী তাপমাত্রা অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় শীতের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।
একইভাবে গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষা প্রশাসন। বন্যার সময় শিক্ষার ক্ষতি হয় আরও বেশি। শুক্রবার প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে সে বাস্তবতাই উঠে এসেছে। ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিরূপ আবহাওয়া তথা জলবায়ু সংকটে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে।
গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকায় শিশুদের স্কুলশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তার আগে এপ্রিলের শুরু থেকেই বারবার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এপ্রিলজুড়ে টানা এক মাস তাপপ্রবাহের বিপজ্জনক রেকর্ড আমরা দেখেছিলাম। ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং দুই সপ্তাহ বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর পর এলো জুনের বন্যা, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুদের শিক্ষার ওপর। গত বছরের বন্যায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ৭০ লাখ। বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। সেপ্টেম্বরে এসে ফেনীতে দেখা দেয় তীব্র বন্যা। ফেনীর পাশাপাশি কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলও বন্যায় ভেসে যায়। সেখানকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতে দীর্ঘসময় বন্ধ রাখতে হয়।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতেও তৎকালীন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামেনি। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। সব মিলিয়ে গত বছরে শিক্ষা কার্যক্রমে নানাদিক থেকে শূন্যতা তৈরি হয়।
তবে শঙ্কার বিষয়, অক্সফামের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আরও বাড়বে। নতুন বছরের জানুয়ারিতে যদিও আমরা গত বছরের মতো শৈত্যপ্রবাহ দেখিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে কেমন বিরূপ পরিবেশ অপেক্ষা করছে, আমরা জানি না। তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়– কোনোটির শঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিরূপ আবহাওয়ায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়ে। শিক্ষায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে শিখনশূন্যতা তৈরি হয়। আবহাওয়ার তীব্রতায় শিশুর সুরক্ষার বিষয়ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণে যথার্থই এসেছে, শিশুর সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিকল্পনায় আমাদের ব্যাপক ঘাটতি আছে। শিক্ষায় জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগও যথেষ্ট নয়। আমরা জানি, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তেমন দায়ী না হলেও ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী। জলবায়ু পরির্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব শিশু ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কতটা বিস্তৃত– ইউনিসেফের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। এ অবস্থায় জলবায়ু খাতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, দাতা গোষ্ঠী, বেসরকারি খাত ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আমাদের জন্য জরুরি হলো, শিক্ষা খাতকে জলবায়ু-সহনশীল করে তোলা। এ জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন, যাতে জলবায়ুর অভিঘাত সামলে নিতে সক্ষম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ইউনিসেফ এর সঙ্গে জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনাকে যুক্ত করার কথা বলেছে এবং জলবায়ুকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সব পর্যায়ে শিশু ও তরুণদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের ওপর তাগিদ দিয়েছে।
এটা বলা জরুরি যে, ইউনিসেফের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা কেবল একটা পরিসংখ্যান দেখলাম যে, কত শিশু প্রভাবিত হলো। মানে ২০২৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ আবহাওয়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি শিক্ষা কতটা ব্যাহত এবং কেমন শিখনশূন্যতা তৈরি হয়েছে, তাও জানা জরুরি। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বিশ্বচিত্রের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে ফোকাস করে শিখনশূন্যতা নিরূপণের দায়িত্ব আমাদের শিক্ষা প্রশাসনের। অথচ বরাবরই এ দিকটি উপেক্ষিত। এমনকি করোনাকালে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর যে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তারপরও শিক্ষার্থীদের শিখনশূন্যতা পরিমাপে জাতীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ আবহাওয়ার কারণে শিক্ষা ও শিশুর ক্ষতি এড়াতে বিস্তৃত অভিযোজন পরিকল্পনা করা দরকার। এ লক্ষ্যে শিক্ষার একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যেখানে জলবায়ুসহিষ্ণু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ থেকে শুরু করে শিশুর সুরক্ষার বিষয়ও উপেক্ষিত হবে না। সেখানে উল্লেখ থাকবে আবহাওয়ার কোন কোন মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে; শীত-গরমের তাপমাত্রার হিসাবও আসতে পারে। আবার বন্যা, জ্বলোচ্ছাস হলে করণীয়, কভিডের মতো পরিস্থিতি হলে করণীয় কী ইত্যাদি আসতে পারে। অন্যান্য
দেশে এমনকি বায়ুদূষণেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে ফোকাস করে এ কৌশলে শিখনশূন্যতা পরিমাপ বিষয়েও সমান নজর দিতে হবে।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন স ফ র প শ ন যত র ওপর সরক র জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না
ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো সাধারণ নেতা নন, সিংহাসনে আসীন একজন আইনজ্ঞ শাসক। শুরু থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিচিতির অংশ হিসেবে একসময় যে তিনি আইনশাস্ত্র পড়েছেন, সেটা ভুলে যাননি। গত মে মাসে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তো আমি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী।’ সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, একটি শান্তিচুক্তি হলে পশ্চিমা প্রতিযোগীরা রাশিয়ায় ফিরে আসতে পারে। এর উত্তরে পুতিন আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চুক্তিপত্রটি দেন, তাহলে আমি উল্টেপাল্টে দেখে বলে দেব কী করতে হবে।’
আমরা সাধারণত স্বৈরাচার মানেই এমন একজনকে ভেবে নিই, যিনি আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এটা একদম সত্যি। কিন্তু পুতিনের মতো একজন একনায়কের কাছে আইনের লঙ্ঘনের চেয়ে বরং আইনের দোহাই দেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো থেকে নির্দেশ মেনে চলতে চলতে প্রেসিডেন্টের আসন পর্যন্ত পৌঁছেছেন।
আজকের রাশিয়ায় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রতিটি নতুন ঢেউয়ের আগে নতুন কোনো আইন পাস হয় অথবা পুরোনো আইনে সংশোধন আনা হয়, যাতে আইন লঙ্ঘন না করেই আরও বেশি মানুষকে ‘আইনের আওতায়’ শাস্তি দেওয়া যায়।
একজন ব্যক্তির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আইনি ব্যবস্থাকে সীমাহীনভাবে ব্যবহার করে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘটনাক্রমে একটি উচ্চতর বৈধতার দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে পুতিনের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনই কেটেছে এমন একটি বৈধতার উৎস খুঁজতে খুঁজতে, যেটা আইনের চেয়েও গভীর। নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণের এটা একটা ব্যক্তিগত বাতিক। এটা বিজয়ের বাসনার মতোই একটি ব্যাপার। এটাই ইউক্রেন যুদ্ধে তাকে চালিত করেছে। এ যুদ্ধের লক্ষ্য হলো সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে রাশিয়াকে আবার বিশ্বশক্তির অভিজাত ক্লাবে ফেরত নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ প্রত্যাবর্তন পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি ছাড়া অসম্ভব। আর দিন দিন এ ধারণা পরিষ্কার হচ্ছে যে পুতিন সেই স্বীকৃতি হয়তো আর কখনোই পাবেন না।
পুতিনের রাজত্ব শুরুর বছরগুলোতে একটি কৌশল কাজ করেছিল। তিনি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিতেন। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি যখন আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন থেকেই তিনি বিধ্বংসী পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তথাকথিত রুশ ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই শুরু করেন।
এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের অর্থ ছিল সরাসরি পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া, যার পরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউক্রেন। ক্রিমিয়া দখলকে পুতিন একটি ঐতিহাসিক অবিচারের ‘সংশোধন’ বলে তুলে ধরেছিলেন। এর পরপরই পূর্ব ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন। এটিকে তিনি চমকপ্রদ বিদ্যুৎ গতির আক্রমণ মনে করেছিলেন। এটা তার পশ্চিমাদের প্রতি বৈরিতাপূর্ণ নীতির চূড়ান্ত রূপ।
পুতিন এখন সেই একই দ্বিধার পড়েছেন। যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করে নেওয়া এবং দখল করা অঞ্চলের ওপর বৈধতা প্রতিষ্ঠা—এই দুয়ের মধ্যে কোন পথটি তিনি বেছে নেবেন। স্তালিনও একসময় দ্বিধায় থেকে শেষ পর্যন্ত যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, পুতিনও সম্ভবত সেই পথেই হাঁটবেন।এসব প্রচেষ্টা রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের সমর্থন জয় করে নেওয়ার জন্য চোখে পড়ার মতো সফল ছিল। তবে একই সঙ্গে এগুলো রাশিয়া ও পশ্চিমের সম্পর্ক ভাঙার নয়; বরং তা নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টাও ছিল। এমনকি ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতের পরও ক্রেমলিন আলোচনার পথ অনুসরণ করে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মিনস্ক চুক্তি। এর লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে নিজের আসন পুনরুদ্ধার করা। সেই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয় এবং পুতিন আরও ঝুঁকি বাড়ানোর পথ বেছে নেন। এখন ক্রেমলিন কিছু মাত্রায় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।
সব অনমনীয় কথাবার্তার পরও ক্রেমলিন এরই মধ্যে কিছু চরম অবস্থান থেকে সরে এসেছে। মার্চ মাসে পুতিন ইউক্রেনকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রদান কিংবা যেকোনো আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নির্বাচন দেওয়ার মতো ধারণাগুলো নিয়ে এসেছিলেন। মস্কো এখন আর জোর দিয়ে বলছে না যে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা অর্থহীন এবং যেকোনো প্রকৃত চুক্তির আগে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধকারী আইন বাতিলের জন্য ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছিল, সেখান থেকেও রাশিয়া নীরবে সরে এসেছে।
নিশ্চয়ই এ নতুন নমনীয়তারও একটা সীমা আছে। মস্কো এর মূল দাবিগুলো এখনো পরিত্যাগ করেনি। কারণ, গত তিন বছরে রাশিয়া এক যুদ্ধরত দেশে পরিণত হয়েছে। শত্রু হয়ে উঠেছে একপ্রকার পৌরাণিক শয়তান, সেনারা এখন নায়ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বেশি মানুষ আর কোনো যুদ্ধে নিহত বা আহত হননি। যুদ্ধ-অর্থনীতি সচল হয়ে উঠেছে; ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুতিন নিজেও এখন প্রায়ই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ না বলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘ ও বিস্তৃত হয়, এর ফলাফল ততই বিশ্বাসযোগ্য ও জোরালো হতে হয়।
এখানেই আসে দর-কষাকষির বিষয়টি। ক্রেমলিন স্পষ্টতই দর–কষাকষির বিষয়টাকে এমন একটা হিসেবে দেখছে, যেন সেখানে তারা একটি বিজয় দাবি করতে পারে, যেটা তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেনি। রাশিয়া কেন ইউক্রেনকে এমন সব এলাকা থেকেও সরে যাওয়ার দাবি তুলেছে, যেগুলোর ওপর দেশটির নিয়ন্ত্রণই নেই—এর ব্যাখ্যা এখান থেকে পাওয়া যায়। পুতিনের কাছে বিজয় মানে শুধু ভূখণ্ড দখল নয়। তাঁর কাছে বিজয় মানে, শর্ত চাপিয়ে দেওয়া, নতুন করে সীমান্ত আঁকা এবং সেই নতুন বাস্তবতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। এভাবেই পুতিন তাঁর কাঙ্ক্ষিত বৈধতা নিশ্চিত করতে পারেন।
পুতিনের এ অবস্থান বুঝতে পারাটা মোটেই কঠিন নয়। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা পুতিনের প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরাও মনে করেন যে পুতিন অনেক বেশি দাবি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে। শান্তির জন্য তাঁর ৫০ দিনের সময়সীমা এখন কমে এসে ‘১০ বা ১২ দিনে’ দাঁড়িয়েছে, যা তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসারই প্রমাণ। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধক্লান্তির লক্ষণ ও বেদনাদায়ক আপসের বিষয়টি বিবেচনা করা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাস করার এমন কোনো কারণ নেই যে মস্কোর চূড়ান্ত শর্ত মেনে নেবে। এমনকি এর কিছু অংশে যদি ওয়াশিংটন সমর্থন দেয়, তারপরও সেটা নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে।