ট্রাম্পের ফেডারেল অনুদান ও ঋণ বন্ধের আদেশ আটকে গেল আদালতে
Published: 29th, January 2025 GMT
সব ধরনের ফেডারেল অনুদান ও ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া আদেশ আটকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদলত। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ আদেশ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এর ঠিক আগমুহূর্তে ডিস্ট্রিক্ট জজ লরেন আলীখান ট্রাম্পের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবামাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিস্ট্রিক্ট জজ লরেন আলিখান স্থানীয় সময় আগামী সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ট্রাম্পের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ওই দিন এ বিষয়ে আরেকবার শুনানির জন্য সময় ধার্য করেছেন বিচারক।
আরো পড়ুন:
ট্রাম্পের দাবি মেনে নিল কলম্বিয়া
অভিবাসী দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্র-কলম্বিয়া পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ
গত সোমবার ‘অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট’ এর (ওএমবি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান ম্যাথিউ ভেথ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্টের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে ফেডারেল অর্থায়ন পর্যালোচনার জন্য সকল ধরনের অনুদান ও ঋণ সহায়তার ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই স্থগিতাদেশে বিদেশি সহায়তা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) জন্য বরাদ্দও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে সামাজিক নিরাপত্তা বা চিকিৎসা সেবার অর্থ, খাদ্য সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার মতো ব্যক্তিগত সহায়তা এই নির্দেশের বাইরে থাকবে বলেও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ করে। এটি আমলে নিয়ে পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন আটকে দিয়েছেন আদালত।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, অনুদান, ঋণসহ মার্কিন সরকারের কয়েক লাখ কোটি ডলারের সম্ভাব্য ব্যয় স্থগিতে হোয়াইট হাউসের বড় ধরনের পরিকল্পনা মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এ সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনেরও অভিযোগ ওঠে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, কংগ্রেস কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ করার কোনো অধিকার প্রেসিডেন্টের নেই।
ডিস্ট্রিক জজ আলিখান তার রায় দেওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পর, ২২টি রাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া তাদের নিজস্ব মামলা দায়ের করে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনকে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করা থেকে অবরুদ্ধ এবং স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
ট্রাম্প প্রশাসন পর্যালোচনার জন্য ফেডারেল তহবিল স্থগিত করায় ডেমোক্র্যাটিক সিনেটররা শিশু, বয়স্কদের, পাবলিক ওয়ার্কস এবং রোগ গবেষণা প্রকল্পগুলোর কী হবে তা নিয়ে সম্প্রদায়গুলোর উদ্বেগ তুলে ধরেন।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস বলেন, “এই নীতি বেপরোয়া, বিপজ্জনক, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক কোনো সন্দেহ নেই।”
ডিস্ট্রিক জজ আলিখান, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বারা নিযুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন, “সরকারের পদক্ষেপ আরো বেশি সময়ের জন্য আটকে দিতে আদেশ দেওয়া হবে কি না, তার আগে আদালত যাতে পুরোপুরি শুনানি করতে পারেন, সে জন্য এ স্থগিতাদেশ।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আল খ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।