অপহরনের ৫ দিন পর  ফতুল্লা ধর্মগঞ্জের তালাবদ্ধ একটি  ঘর থেকে অপহৃত ভ্যান চালক হাবিবুর রহমানের পচেঁ যাওয়া বিকৃত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরনের জামা কাপড় ও পায়ের আঙ্গুল দেখে লাশ সনাক্ত করেন নিহতের বাবা ভ্যান চালক আজিজুল হক।

মঙ্গলবার দুপুরে ফতুল্লার পঞ্চবটি ধর্মগঞ্জ শীষমহল আমতলা এলাকার স্বপন সরকারের ভাড়াটিয়া বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। এদিন রাতেই নিহতের বাবা তার ২১ বছর বয়সী ছেলের লাশ সনাক্ত করে থানায় আবেদন করেন।

এরআগে ২৫ জানুয়ারী আজিজুল হক তার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করে ছিলেন।

তখন অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাদের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার দিঘল হাইল্লা গ্রামে। তারা স্বপরিবারে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সাক্কু মিয়ার বাসায় ভাড়া থেকে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে জিবিকা নির্বাহ করেন। তার ছেলে হাবিবুর রহমান (২১) গ্রামের বাড়ি থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো।

গত একমাস পূর্বে হাবিবুর রহমান ফতুল্লায় তার বাবার কাছে আসেন। তখন তার বাবা তাকে ভ্যান গাড়ি চালাতে দিয়ে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যায়। এরমধ্যে গত ২৪ জানুয়ারী হাবিবুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার বাবা আজিজুল হকের মোবাইলে ফোন করে বলেন হাবিবুর রহমানকে পঞ্চবটি থেকে অপহরন করা হয়েছে।

তাকে ছাড়িয়ে নিতে হলে তিন লাখ টাকা মুক্তিপন দিতে হবে। এতে আজিজুল হক অপহরনকারীদের বলেন আমরা বাপ ছেলে দুজনই ভ্যান গাড়িয়ে চালিয়ে জিবিকা নির্বাহ করি এতো টাকা পাবো কোথায়। এ কথা বলার পর থেকে হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর দিন আজিজুল হক ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে থানায় অভিযোগ করেন।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা  ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ওয়াসিম বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহৃত হাবিবুরের লোকেশন সনাক্তের চেষ্টা করি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ থাকায় লোকেশন সনাক্তে বিলম্ব হয়। 

আজিজুল হক বলেন, অভিযোগ করার পর তাৎক্ষনিক গুরুত্ব দিলে পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে পারতো। আমরা গরিব শরীরের ঘাম জড়িয়ে কঠোর পরিশ্রম করে কামাই রোজগার করি। অপহরনকারীরা যেনেও কেনো আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।

তিনি আরো বলেন, আমি শুনছি এ অপহরনকারী চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত সক্রীয়। ফতুল্লার বিভিন্ন সড়ক থেকে সাধারন লোকজনদের ধরে নিয়ে মুক্তিপন আদায় করে ছেড়ে দেয়। আমার জানা মতে পুলিশও এ চক্র সম্পর্কে জানেন কিন্তু গুরুত্ব দেননা। আমি এ চক্রের সকলের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই। 

এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, যে বাড়িতে লাশটি পাওয়া গেছে সে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার পরিচয় না জেনেই তার বাসা ভাড়া দিয়েছেন। এজন্য হত্যাকারীদের তাৎক্ষনিক সনাক্ত করতে পারিনি। তবে চেষ্টা চলছে হত্যাকারীদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করার।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপহরণ হ ব ব র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

রিকশাচালককে পিটিয়েও পার পেয়ে গেলেন সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা

রিকশাচালককে পেটানোর পরও পার পেয়ে গেলেন আলোচিত সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ।

শুধু তাই-ই নয়, বরখাস্ত থাকার সময়টি কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

আরো পড়ুন:

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই

রবিবার (২৭ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়ার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তাকে বুধবারের (৩০ জুলাই) মধ্যে সেখানে যোগ দিতেও বলা হয়। 

জাহিদ হাসান রাসেল রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।

আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরখাস্ত

জাহিদ হাসান রাসেলের স্ত্রী একজন বিচারক। রাজশাহীতে ঘটনাটি ঘটেছিল জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক করে না উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এতেও তার মনের ক্ষোভ মেটেনি। গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, জাহিদ হাসান তার অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা তার দ্বারা আর হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন। রিকশাচালকের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির কারণে’ তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

জাহিদ হাসান রাসেল তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ‍ঘটনাটি তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। তাই তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তার সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।

জাহিদ হাসান রাসেল পবায় থাকাকালে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। 

শিমুল জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করতেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশালীন আচরণ করেন।

এর আগে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে পবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।

জাহিদ হাসান রাসেলের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি নিয়ম ভেঙে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা থেকে সরকারি ডাস্টবিন নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার ওই ডাস্টবিন বিতরণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ হাসান রাসেল। 

জাহিদ হাসান রাসেলের বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় যোগদানের কথা ছিল আজ। যোগ দিয়েছেন কি না জানতে দুপুরে ফোন করা হয় তাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান জানান, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। তিনি দুপচাচিয়ায় যোগ দিয়েছেন কি না তা জানেন না।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ