সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন মেপে। ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিচ্ছিলেন বুঝেশুনে। পালটা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ‘কঠিন প্রশ্ন’ বলে হেসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন দারুণভাবে। সেঞ্চুরিয়ান নাঈম শেখের পরিবর্তন শুধু ব্যাট হাতে আসেনি, শরীরী ভাষায়ও দিচ্ছেন পরিপক্বতার পরিচয়। 

কদিন আগেই জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছিলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের স্পর্শ। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রথমবারের মতো হাঁকান সেঞ্চুরি। তাও এমন এক মুহূর্তে, যখন হারলেই বাদ পড়বে দল তখন। 

ওপেনিংয়ে নেমে ৬২ বলে ১১১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ইনিংসের শেষে। তার দল খুলনা টাইগার্স পায় বড় পুঁজি। তাতে ভর করে ৪৬ রানের বয় জয়ে প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখে খুলনা। শুধু কৌশল নয়, ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা এনে নাইম পাচ্ছেন সফলতার দেখা।

“সর্বশেষ যতগুলো টুর্নামেন্ট খেলেছি নিজের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করেছি। মাঠে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ভেঙে বলতে গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে। অফ সিজনে কাজ করেছি।”

“যদি সেভাবে বলতে চাই, ঘরোয়া ক্রিকেটের সব কোচের কথা বলতে হবে। বাবুল স্যার, সোহেল স্যারের সাথে কাজ করেছি। আনোয়ার ভাই নামে একজন আছে। নির্দিষ্ট একজন বলতে গেলে মাইন্ড ট্রেনিং নিয়ে কাজ করেছি, ওটা অনেক ভূমিকা রাখছে। শৃঙ্খলাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমার পরিবার”, নিজের পরিবর্তনের গল্প এভাবেই বলছিলেন নাঈম। 

লাল সবুজের জার্সিতে নাঈমের আগমন ছিল দুর্দান্ত। ভারতের বিপক্ষে নাগপুরের তৃতীয় ম্যাচেই খেলছিলেন ৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস। সম্ভাবনা দেখিয়ে জাতীয় দলে এলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। অন্য অনেকের মতো তাকে ধরা হচ্ছিল ‘খসে পড়া তারা’ হিসেবে। তবে না, নাইম আড়ালে গিয়ে আসল কাজটাই করছেন নীরবে-নিভৃতে। 

খেলার ধরন নিয়েও ছিল প্রশ্ন। ইনিংসজুড়ে ডট বলার সমাহার। অবশ্য এতে তৎকালীন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর প্রভাব। গুরুর ‘ধরে খেলার’ শিক্ষায় নাঈম যেন আরো দিশেহারা হয়ে যান। নাঈমে শেখে এমন পারফরম্যান্সে ওপেনার খরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশ যেন আরো সংকটে পড়ে। 

নাঈমের জায়গা নিয়ে নেন তরুণ তানজীদ হাসান তামিমরা। ফর্মে ফিরে দলে আসা সৌম্য সরকারও আছেন তালিকায়। সবশেষ তাকে ওয়ানডেতে দেখা গেছে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। আর টি-টোয়েন্টি খেলেন ২০২২ সালের আগস্টে!  

নিজের সঙ্গে নিজে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাঈম পেয়েছেন সফলতা, “সত্যি বলতে কোনো প্রত্যাশা ছিল না। বেসিক ঠিক রেখে প্রসেস মেনে চলতে চাই। কোনো প্রত্যাশা রেখে শুরু করিনি। কোনো লক্ষ্য নেই, উন্নতি করতে পারছি কি না… নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ। উন্নতি করতে চেয়েছি, হয়েছে কি না। এনসিএলেও কোনো লক্ষ্য ছিল না যেমন সর্বোচ্চ রানের মালিক হতে হবে বা ভালো করতে হবে। এমন কোনো ভাবনা ছিল না। নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ যত বেশি বড় করা যায়।” 

“মানসিকতায় পরিবর্তন অবশ্যই জরুরি। এটা না এলে লম্বা ইনিংস খেলা খুব কঠিন ওপেনার হিসেবে। আগে অফ স্পিনে অনেক সংগ্রাম করছিলাম। ঐ জায়গা থেকে বের হয়ে আসছি, কীভাবে ডট না করে স্ট্রাইক রোটেট করা যায়। আর রেঞ্জ হিটিং। তিন বছর আগে মুশফিক ভাই বলেছিল, রিভার্স সুইপ নিয়ে কাজ করা গেলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। এখন অফ স্পিনে সুইপ-রিভার্স সুইপ অনেক সহজ হয়েছে। স্লগ সুইপে আগে ভালো ছিলাম, মাঝখানে সংগ্রাম করছিলাম। বলতে গেলে লম্বা হয়ে যাবে। অবশ্যই কিছু জিনিস পরিবর্তন এনেছি তাই সাফল্য আসছে”— বলছিলেন নাঈম। 

ঢাকা/রিয়াদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ফেসবুক পোস্টে দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার কিছু আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুর্নীতি নিয়ে একটি অংশের লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তিনি।

মাহফুজ আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রাত ২টা ৫১ মিনিটে দেওয়া পোস্টের এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’

এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ভোররাত ৪টা ২৮ মিনিটে পোস্টের এই অংশে পরিবর্তন আনেন মাহফুজ আলম। সংশোধিত পোস্টে এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তিনি লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।’

প্রথমে দেওয়া পোস্টের এই অনুচ্ছেদের শেষ বাক্য ‘একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে’ সংশোধিত পোস্টে তিনি রাখেননি।

প্রথম পোস্টে মাহফুজ আলম তদবির চেষ্টার কথা উল্লেখ করে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়।’

কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘সে ব্যক্তি কনভারসেশন (কথোপকথন) রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই, আমরা এ কাজ করতে দেইনি। আর ওই লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে এ কাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।’

এরপরই নিজের পোস্টে দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নূতন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’

পোস্টের শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। একটি নূতন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

সংশোধিত পোস্টে এই অংশেও পরিবর্তন এনেছেন মাহফুজ আলম। তাতে তিনি দুর্নীতির বিষয়ে করা তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন এবং ‘নূতন দলের মহারথী’র জায়গায় ‘বিভিন্ন দলের মহারথী’দের কথা উল্লেখ করেন। আর শেষের বাক্যটি বাদ দেন।

সংশোধিত পোস্টে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জল ঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিক্যাল মবিলিটির ল্যাডার। একটা না, কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই পোস্ট দিয়ে তাঁর ভাই মাহবুব আলমের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।

‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!’ শিরোনামে ওই ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন মাহবুব আলম। গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার অ্যাকাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণী এখানে দেওয়া হলো। আমার অ্যাকাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।’

ভাইয়ের তদবিরের কোনো কাজ করেননি দাবি করে মাহবুব আলম লেখেন, ‘আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোনো তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোনো আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমতো ব্যবসায় করতেই পারেননি।

‘আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোনো অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।’

ফেসবুক পোস্টে মাহবুব আলম আরও লিখেছেন, ‘গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির এলেও মাহফুজ কোনো কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোনো তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।’

পোস্টের বিশেষ দ্রষ্টব্যে মাহবুব আলম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বনি আমিনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

এর আগে ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশানে সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের চাঁদাবাজি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে দুঃখজনকভাবে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
  • চুলে গুঁজে দিলেন ৭১১ গলফ ‘টি’
  • বাবা হারালেন চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত
  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম