‘খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে’
Published: 2nd, February 2025 GMT
ঢাকার খালগুলো নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করছে সরকার। যা দখল ও দূষণমুক্তকরণে চলছে কাজ।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, “ঢাকা শহরকে যদি মানবদেহ কল্পনা করা হয়, তবে খালগুলো হচ্ছে শিরা-উপশিরা। সবার চেষ্টায় খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য খালগুলোকে করতে হবে দূষণমুক্ত, খনন ও সংস্কার।"
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত বাউনিয়া খাল প্রান্তে "ঢাকা শহরের খালগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে খালকেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত ৬টি খাল যথা-বেগুনবাড়ি, কড়াইল, বাউনিয়া, রূপনগর, মান্ডা ও কালুনগর খালের সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। নগর সমস্যা সমাধানে ‘ঢাকা নর্থ মডেল পরিকল্পনা' হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে কেন্দ্র করে গড়া এই পরিকল্পনা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য রোল মডেল।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ ও চারপাশের সকল জলাধার যেমন- খাল, জলাশয় ইত্যাদির কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নগর জীবনের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের উদ্যোগ ও রূপরেখা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্লু নেটওয়ার্ক হচ্ছে এরূপ রূপরেখা যেখানে ঢাকার ১৯ টি খালকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ব্লু নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগ যেনো চলমান রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান খাল সংস্কার কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং খাল সংস্কারের প্রাথমিক টার্গেট হিসেবে খালগুলোতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নাগরিকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।
খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.
ঢাকা/এএএম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল