রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। রোববার রাত ১২টার দিকে তারা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে চলে যান। যমুনার সামনে পৌঁছালে দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনিও আন্দোলনরতদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসা দিতে পারে নাই, এটা সরকারের ব্যর্থতা। এ জন্য সরকারের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি দায়ী, সচিবরা দায়ী, আমলারা দায়ী। যারা আহত হয়েছেন, তাদের আমরা সুচিকিৎসা দিতে পারি নাই, এ জন্য আমি নিজে ব্যথিত।’

আহতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনাদের স্বীকৃতি এবং দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য আমরাও সরকারের সঙ্গে চেষ্টা করছি। আপনারা শান্ত থাকুন, আপনাদের বিষয়গুলো নিয়ে আমরাও কাজ করছি। সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাদের দাবি পূরণ করবে। আপনাদের তালিকা করা হয়েছে।’

এ সময় হাসনাতকে উদ্দেশ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের আরও গুলি করুন, আমরা মরতে চাই। এই পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই না। হয় স্বীকৃতি দিন, না হয় আমাদের গুলি করে মেরে ফেলুন। স্বীকৃতি না দিলে আমরা আত্মহত্যা করব।’

হাসনাত আবদুল্লাহ কথা বলার সময় আহতরা ‘বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘রক্ত দিয়েছি আরও রক্ত দেব’, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়া আগ পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না’, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিন, না হয় আমরা আত্মহত্যা করব’, ‘হয় আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিন, না হয় গুলি করে মেরে ফেলুন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনকারীদের একজন আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’ এর আগে তিনি বলেছিলেন, শনিবার রাত থেকে তারা সড়কে অবস্থান করলেও সরকারের দায়িত্বশীল কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখাননি। অথচ জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত মানুষদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে।

রাত দেড়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যমুনার সামনে অবস্থান করছিলেন আহতরা। হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আরও কয়েক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তারাও আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে থামানোর চেষ্টা করেন। 

আহত ব্যক্তিরা বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়ব না। আমরা বারবার সড়কে নামতে চাই না। এবার যেহেতু সড়কে নেমেছি, আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়ব।’

সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে গত শনিবার আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলনে নামেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। রোববার তারা দিনভর রাজধানীর শিশুমেলা মোড়ে মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন। সন্ধ্যায় সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা করেন আহত ব্যক্তিরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহবাগ এলাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছান। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকা পড়েন। তখন ওই জায়গায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন আহতরা। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে তারা যমুনার দিকে এগিয়ে যান। আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনে পৌঁছালে সেখানে যান হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা আন্দোলনকারীদের সামনে অবস্থান নেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহত অবস থ ন আপন দ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ