বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি. এম. ফারহান ইসতিয়াকের আদালত পুলিশ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

শুনানির সময় কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু বলতে চান। আদালত অনুমতি দেন।

তিনি বলেন, “এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নির্যাতন করা হচ্ছে। এই সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশে আইনের শাসন থাকলে এমনটা হতো না। মামলা করছে, বাদীর খবর নাই। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করছে। পরিবারের সদস্যদেরও নির্যাতন করছে। তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।” এসময় হাতকড়া পরা হাত উচিয়ে আদালতকে দেখিয়ে বলেন, “এটাই কি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অলংকার। এজন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম।” এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। 

কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “কোনো অন্যায়, দুর্নীতি করিনি। অথচ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এর বিচার চাই। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান, শ্রদ্ধা রয়েছে। যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করছি।” 

পরে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “তিনি একজন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা না। রাজস্ব ফাঁকি দিতে রাজনীতিতে নাম লেখান। এলাকায় অবৈধভাবে বিশাল ব্যবসা তৈরি করে নিয়েছেন। আন্দোলনের সময় মিরপুরে জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, তিনি কোনো নতুন গ্রহ থেকে এসেছেন।”

এরপর কামাল আহমেদ মজুমদারের বক্তব্যের জবাব দেন তিনি।

বাদীর খবর নাই এ বিষয়ে বলেন, “এখন বাদী আসবে কেন। বিচারের সময় বাদী আসবেন।”

মিথ্যা মামলার বিষয়ে বলেন, “এমন নিষ্ঠুর, নির্মমভাবে বাচ্চাদের খুন করা হয়েছে আর উনি বলছেন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। গাজায় মুসলিমদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে। এরাও তাই করেছে। পেট্রোল দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে। আর উনি বলছেন মিথ্যা মামলা।” 

পরিবার হয়রানি হচ্ছে কামাল মজুমদারের এমন অভিযোগে তিনি বলেন, “অবৈধ অর্থ তো শুধু আপনার নামে রাখেননি। আর ভোগ করছে পরিবারের সদস্যরা। চিন্তা করেন, এমন কাজ করলে পরিণাম তো পরিবারকে ভোগ করতেই হবে। সম্পত্তি লুট করেছেন। সরকারের সম্পদ তো রাখেননি। দখল করে নিয়েছেন।”


বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে বলেন, “যারা মুক্তিযোদ্ধা , আপনাদের কারণে তাদের সম্মানহানি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মাটির নিচে মিশিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কি একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের এজেন্সি। কেন মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করলেন। আর আজ বলছেন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বলছি, আপনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলবেন না। গুম, খুন, আয়নাঘর এগুলো কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।” 

এর জবাবে কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আমি ব্যবসায়ী। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আর গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, সরকারের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে কোনো সম্পর্ক নাই। কোনো কারচুপির আশ্রয় নেয়নি। ট্যাক্স দিয়েছি নিয়মিত।”

তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্বিত, আইনজীবী যা বলছেন সত্য না। এলাকায় স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট করেছি। উন্নয়ন করেছি। কোনো লোকের কাছ থেকে এক কাপ চাও খায়নি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। বাজার সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।”

সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি সব সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষে বলেছি। শেখ হাসিনাকে বলেছি, দাবি মেনে নেন। বারবার বলেছি। যার কারণে আমার গণভবনে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। আর চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, সরকারি জমি দখল করিনি বা কোনো জমি বরাদ্দ নেয়নি।”

পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট মিরপুর মডেল থানার সামনে আন্দোলন করছিল ছাত্রজনতা। মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ওই সময় রাস্তা পার হওয়ার পথে আসামিদের গুলিতে আহত হন। পরে ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই গত ১২ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন৷

এদিকে, আজ রাকিব হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায়ও কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র জ র কর পর ব র ব যবস ন করছ বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

এশিয়া কাপে আজকের রাত যেন এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবুধাবির মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া এই লড়াই কেবল দুই দলের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভাগ্যও। কোটি টাইগার সমর্থক তাই আজ তাকিয়ে থাকবে টিভি পর্দায়। কারণ, এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সুপার ফোরে উড়াল দেবে, নাকি গ্রুপ পর্বেই শেষ হবে স্বপ্নযাত্রা।

গ্রুপের সমীকরণ এখন টানটান নাটকের মতো। তিন ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ঝুলিতে আছে ২ পয়েন্ট; এক জয় ও এক হারের ফল। হংকং অবশ্য তিন ম্যাচেই হেরে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

আরো পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

এখন হিসাবটা এমন—
আফগানিস্তান হেরে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান জিতলে সমীকরণ জটিল হবে। তখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে স্পষ্ট এগিয়ে থাকবে আফগানরা (২.১৫০)। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে -০.২৭০-তে।

অর্থাৎ আফগানিস্তান যদি জেতে, তবে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে এক অসম্ভব সমীকরণের দিকে। সেটা হলো- লঙ্কানদের অন্তত ৭০ রানের ব্যবধানে হারতে হবে এবং তা করতে হবে ৫০ বল হাতে রেখে। অন্যথায় রান রেটের খেলায় পিছিয়েই থাকতে হবে টাইগারদের। তবে বৃষ্টি যদি হানা দেয় কিংবা ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দু’দলই নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সুপার ফোরে।

ম্যাচকে ঘিরে দুই শিবিরেই চাপ-উত্তেজনার আবহ। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব মনে করেন, চাপটা আসলে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি, “আমরা এসব টুর্নামেন্ট খেলতে অভ্যস্ত, আমাদের কোনো চাপ নেই। শ্রীলঙ্কা ভালো দল ঠিকই, তবে তারাও চাপে থাকবে। আমার মনে হয় দারুণ একটা ম্যাচ হবে।”

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমর্থকরা আমাদের জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”

হংকংয়ের বিপক্ষে জিতলেও শ্রীলঙ্কাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা বলছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা সহজ হবে না তাদের জন্যও। শেষ পর্যন্ত কারা হাসবে জয়ের হাসিতে, আর কোন সমীকরণে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ভাগ্য; এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে আজকের আবুধাবির রাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ