কোনো না কোনো সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন ৪৯ শতাংশ নারী
Published: 6th, February 2025 GMT
শিক্ষার্থী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ৪৯ শতাংশ নারী শারীরিক, মানসিক ও যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এই নারীরা মনে করেন, ৯০ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন কর্মক্ষেত্রে ও গণপরিবহনে। কিন্তু লোকলজ্জা, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাসহ নানা কারণে অভিযোগ করতে বাধার মুখে পড়েন।
রাজশাহী ও গাজীপুরের শিক্ষার্থী, পোশাক ও পরিবহন খাতের কর্মী ও নাগরিক সমাজের ৩১১ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় এ গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।
‘যৌন সহিংসতা ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ব্যাপকতাভিত্তিক গবেষণার ফলাফল বিনিময়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলাদাভাবে পাঁচ ধরনের নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি করা হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
গবেষণায় দেখা যায়, গাজীপুরে ৬৩ শতাংশ নারী মানসিক, ৬৩ শতাংশ মৌখিক, ৪৫ শতাংশ শারীরিক, ৩০ শতাংশ যৌন ও ২৩ শতাংশ আর্থসামাজিকভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অপর দিকে রাজশাহীতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, ৫২ শতাংশ শারীরিক, ২৭ শতাংশ মানসিক, ১৮ শতাংশ যৌন ও ৬ শতাংশ আর্থসামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন ৩৬ শতাংশ নারী। ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, এলাকায় সামাজিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হলে সহিংসতার ঘটনা কমে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশই নারী, বাকিরা পুরুষ। অংশগ্রহণকারীদের ৬৪ শতাংশ বিবাহিত। ৩১১ জনের মধ্যে ৯৬ জন শিক্ষার্থী, ৪৩ জন পোশাককর্মী, ৫০ জন পরিবহন খাতের শ্রমিক ও ১২২ জন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
প্রতিবেদনে সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক ও সংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, আইনি ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের আস্থা তৈরি, আইনের যথাযথ প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় আসকের নির্বাহী কমিটির সদস্য রূকসানা খন্দকার বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যায়, একধরনের সহিংসতা কমে এলে অন্য ধরনের সহিংসতা বাড়ে। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনার জন্য নারীরা আবার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। ছয় মাস ধরে আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা শুনছি, সুফলটা কি দেখছি? দেশের অর্ধেকের বেশি নারী। তাঁরা নির্যাতনের শিকার হলে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে? তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। এতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মসূচি কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, পরিবার থেকেই শিশুদের শেখাতে হবে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ স্পর্শ। শিশুরা যেন নির্যাতনের কথা বাড়িতে এসে বলতে পারে, সেই পরিবেশ রাখতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে সমাজের প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে আসকের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে না পারার কারণ হচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নির্যাতনের বিষয়গুলো ঢুকে আছে। আইন দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে পরিবর্তনের বড় নিয়ামক আইন। সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। আর যদি সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তাহলে যেন প্রতিকার পাওয়া যায়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।