শিক্ষার্থী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ৪৯ শতাংশ নারী শারীরিক, মানসিক ও যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এই নারীরা মনে করেন, ৯০ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন কর্মক্ষেত্রে ও গণপরিবহনে। কিন্তু লোকলজ্জা, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাসহ নানা কারণে অভিযোগ করতে বাধার মুখে পড়েন।

রাজশাহী ও গাজীপুরের শিক্ষার্থী, পোশাক ও পরিবহন খাতের কর্মী ও নাগরিক সমাজের ৩১১ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় এ গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।

‘যৌন সহিংসতা ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ব্যাপকতাভিত্তিক গবেষণার ফলাফল বিনিময়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলাদাভাবে পাঁচ ধরনের নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি করা হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।

গবেষণায় দেখা যায়, গাজীপুরে ৬৩ শতাংশ নারী মানসিক, ৬৩ শতাংশ মৌখিক, ৪৫ শতাংশ শারীরিক, ৩০ শতাংশ যৌন ও ২৩ শতাংশ আর্থসামাজিকভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অপর দিকে রাজশাহীতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, ৫২ শতাংশ শারীরিক, ২৭ শতাংশ মানসিক, ১৮ শতাংশ যৌন ও ৬ শতাংশ আর্থসামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন ৩৬ শতাংশ নারী। ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, এলাকায় সামাজিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হলে সহিংসতার ঘটনা কমে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশই নারী, বাকিরা পুরুষ। অংশগ্রহণকারীদের ৬৪ শতাংশ বিবাহিত। ৩১১ জনের মধ্যে ৯৬ জন শিক্ষার্থী, ৪৩ জন পোশাককর্মী, ৫০ জন পরিবহন খাতের শ্রমিক ও ১২২ জন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

প্রতিবেদনে সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক ও সংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, আইনি ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের আস্থা তৈরি, আইনের যথাযথ প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় আসকের নির্বাহী কমিটির সদস্য রূকসানা খন্দকার বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যায়, একধরনের সহিংসতা কমে এলে অন্য ধরনের সহিংসতা বাড়ে। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনার জন্য নারীরা আবার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। ছয় মাস ধরে আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা শুনছি, সুফলটা কি দেখছি? দেশের অর্ধেকের বেশি নারী। তাঁরা নির্যাতনের শিকার হলে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে? তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। এতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মসূচি কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, পরিবার থেকেই শিশুদের শেখাতে হবে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ স্পর্শ। শিশুরা যেন নির্যাতনের কথা বাড়িতে এসে বলতে পারে, সেই পরিবেশ রাখতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে সমাজের প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে আসকের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে না পারার কারণ হচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নির্যাতনের বিষয়গুলো ঢুকে আছে। আইন দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে পরিবর্তনের বড় নিয়ামক আইন। সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। আর যদি সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তাহলে যেন প্রতিকার পাওয়া যায়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ