রাজশাহীতে বাঁধাকপি খাওয়ার পর ৭ গাভির মৃত্যু, অসুস্থ ৫০ গরু
Published: 6th, February 2025 GMT
রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাঁধাকপি খাওয়ার পর ৭টি গাভির মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে অপর ৫০টি গরু। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার বালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকেলে মাঠ থেকে ফেরার পথে চারটি এবং বাড়িতে ফেরার পর তিনটি গাভি মারা গেছে।
মারা যাওয়া প্রতিটি গাভির নাম আছে। গাভিগুলো হলো—গুলবাহার, রেনুবালা, বৈশাখী, জামাদার, ফুলকি, লালমন ও পিঠালি। গাভিগুলো দুটি পরিবারের। এর মধ্যে বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানার দুটি ও তাঁর ভাই জুয়েল রানা, রুবিনা খাতুন ও রুনা খাতুনের একটি করে আছে। এ ছাড়া একই গ্রামের আবদুল করিমের দুটি গরু মারা গেছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকেরা মৃত গরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা বলছেন, বাঁধাকপিতে দেওয়া কীটনাশক থেকে বিষক্রিয়া হয়ে গরুগুলো মারা যেতে পারে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে। আর অসুস্থ গরুগুলোকে সুস্থ করে তুলতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চারজন কর্মী গত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাগানে প্রায় ৪০টি গরু একসঙ্গে রাখা হয়েছে। সেখানে একের পর এক গরুকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া কয়েকটি গরুকে স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন মিলে স্যালাইন দেওয়া গরুটিকে ধরে আছেন। আরেকজন উঁচু করে ধরে আছেন স্যালাইনের বোতল। গরুগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ঘটনাস্থলে এসেছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান। উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কয়েকজন কর্মী গরুগুলোকে ধরে ধরে ইনজেকশন আর স্যালাইন দিতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।
সোহেল রানা বলেন, এবার বাজারে বাঁধাকপির দাম নেই। তাই মো.
খেতে কীটনাশক দেওয়া ছিল কি না, সে ব্যাপারে কৃষক শরিফের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সকালে সোহেল রানার বাড়ির সামনে বসে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি মোসা. শহরবানু। তিনি কাপড় টেনে চোখের পানি মুছছিলেন। শহরবানু বলেন, ‘ওই বাগানে গরুগুলা সব আছে। আমি স্ট্রোক করা মানুষ। হাঁটতে পারি না বুইল্যা যাইতে পারছি ন্যা। ভিতরডা খুব খারাপ করছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান বলেন, মারা যাওয়ার পর তিনটি গরু জবাই করা হয়েছিল। পরে মাংস মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। এর আগে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে পরীক্ষার জন্য। আসলেই বিষক্রিয়া, নাকি অন্য কোনো কারণে গরু মারা গেছে, তা নমুনা পরীক্ষার পর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক এখানে আছি। গত রাতে আমাদের চারজন কর্মী সারা রাত জেগে ছিলেন এখানেই। প্রায় ৫০টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন গরুগুলো ভালো আছে। তার পরও ভিটামিনজাতীয় ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শরীরে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে কিছু গরু স্যালাইন পাচ্ছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।
মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।
তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত।
এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।
আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।