যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সব কর্মীকে আট মাসের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী কমিয়ে আনা এবং নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিআইএর মুখপাত্র এবং এ প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের অধিকাংশ কর্মীর ক্ষেত্রে পদত্যাগের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তার কাজে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এমনটি করা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। জন র‍্যাটক্লিফ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং ট্রাম্পের প্রথম আমলে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের (ডিএনআই) দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত সপ্তাহে সিআইএর পরিচালক হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত করেছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট।

র‍্যাটক্লিফের এক সহযোগী বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সিআইএ পশ্চিম গোলার্ধে বেশি মনোযোগ দিতে চাই। ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়নি, এমন দেশগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করতে চায়।

আরও পড়ুনইউএসএআইডি বন্ধে তৎপর ট্রাম্প–মাস্ক: ‘এটি আমাদের শত্রুদের জন্য উপহার’০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পদত্যাগের প্রস্তাবটি সিআইএর সব কর্মীর কাছে পাঠানো হলে সবাই তা গ্রহণ করতে পারবেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কিছু নির্দিষ্ট পেশা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের দরকার আছে, এমন কিছু খাতের কর্মীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে যেভাবে একচেটিয়া কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, সিআইএর ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না।

অন্য দুটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী ব্যবস্থাপনা অফিস (ওপিএম) গত সপ্তাহে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয়ের (ওডিএনআই) কিছু কর্মকর্তার পদত্যাগের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা জারি করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে