অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। শহীদদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে এই সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ট্রুথ কমিশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আমলে গুমসহ সব অপরাধের কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আনতে হবে।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নাগরিকদের একটি অংশ এই সমাবেশের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের আমলে গুমের শিকার হওয়ার পর ফিরে আসা চারজন এই সমাবেশে যোগ দেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ট্রুথ কমিশন গঠন, গুমের শিকার পরিবার ও সাংবাদিকদের ‘আয়নাঘরে’ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সবার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যতম আয়োজক লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট তুহিন খান বলেন, ‘আমরা আজ ৩ দফা দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ২০১৩ সালে একটি জাতীয় বিভাজন ও রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আওয়ামী লীগের বিচার নিয়েও এমন একটা পরিস্থিতি হোক, তা চাই না। তাই এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা। কিন্তু যে ট্রাইব্যুনালে এই বিচার চলছে, এটি নানা কারণে একটি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল।’

কেবল ২০-৩০ জন লোকের বিচার করে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া ১৬ বছরের এই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করা সম্ভবও নয় উল্লেখ করে তুহিন খান বলেন, ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের জন্য অবিলম্বে একটি ট্রুথ কমিশন তৈরি করতে হবে।

গুম হওয়ার পর ফিরে মুকুল হোসেন (৩৯) বলেন, ‘২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমি গুম হই। ৯৪ দিন আমি ছিলাম আয়নাঘরে। অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছি আমরা। আমরা এখানে যে চারজন উপস্থিত আছি, তারা সবাই বিগত সরকারের আমলে গুমের শিকার হয়েছিলাম।’ মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হওয়া অবিচারের বিচার চাই। পাশাপাশি গুমের ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ চাই।’

সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছিল। তাদের ম্যান্ডেট ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ জড়িত অপরাধীদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও শহীদদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু সরকার সেই কাজ করছে না, এখন পর্যন্ত শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক ও গুমের শিকার পরিবারগুলোকে অবিলম্বে ‘আয়নাঘরগুলোতে’ ঢুকতে দিতে হবে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দায়িত্বও এই সরকারকে নিতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ওলিউর সান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যারা জনগণের ওপর জুলুম করেছে, তাদের বিচার করার যথাযথ কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সরকারের ওপর যদি ভেতরে-বাইরে চাপ থাকে, তা জনগণকে জানান। আমরা রাস্তায় আছি। কিন্তু বিচারের প্রক্রিয়া কালবিলম্ব করা চলবে না।’

অধিকারকর্মী মাহতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা এখনো কেন ভারতে। তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করে বিচার করা হচ্ছে না। ছয় মাস হলো, এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকার স্টান্টবাজি করছে, কিন্তু অ্যাকশন দেখাতে পারছে না।

কবি ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, খবরে এসেছে, এক-তৃতীয়াংশ আওয়ামী লীগ কর্মী পালিয়েছেন। তাঁরা কীভাবে পালালেন? দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আন্দোলনকর্মী আবু রায়হান, সাংবাদিক সাদিক মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ র কর ন বল ন র আমল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ