কুমিল্লায় পরীক্ষার হল থেকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মাসুমকে বের করে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। 

শুক্রবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় এলএলবি পরীক্ষা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। আটক মাসুম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। 

আটকের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম। 

কলেজ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে এলএলবি পরীক্ষা শুরু হয়। মাসুম যথারীতি পরীক্ষায় লেখা শুরু করেন। প্রায় ৩০ মিনিট পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত শিক্ষার্থী হঠাৎ পরীক্ষার কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা কলেজ ক্যাম্পাসেই তাকে ব্যাপক মারধর করে। কলেজ থেকে থানায় খবর দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শরীরে পোশাক বিহীন মাসুমকে গাড়িতে উঠানোর সময় ছাত্র জনতা তার ওপর আবারও হামলা চালায়। এ সময় ওসি মহিনুল ইসলামসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে তাকে গাড়িতে তুলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। 

পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রতন আলী বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু পর কয়েকজন ছাত্র তাকে বাইরে নিয়ে যায়। তিনি ছাত্রলীগ ছিলেন নাকি অন্য কিছু তা জানি না। তিনি একজন পরীক্ষার্থী এটাই পরিচয়। আমি পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমাদের কিছুই করার ছিল না। পরে আমরা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করায় পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মাসুম সরাসরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হামলায় মদদ দিয়েছেন। তাই পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে তাকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়।  

মাসুমের স্ত্রী রিজোয়ানা করিম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে থানায় এসে তার (স্বামী) নিকট থেকে জানতে পেরেছি পরীক্ষার হল থেকেই তাকে জোরপূর্বক বের করে এনে অনেক মারধর করে আহত করা হয়েছে। শুনেছি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কারা ঘটনায় জড়িত এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই তখন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা অনেকটা মারমুখী ছিল। তাকে উদ্ধারের পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিছিলে হামলার অভিযোগে কোতোয়ালি ও সদর দক্ষিণ মডেল একাধিক মামলা আছে। এসব মামলার নথি দেখে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব চ ছ স বকল গ আটক ম রধর পর ক ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ